মানুষের জন্য যে বার্তা রেখে গেছেন স্টিফেন হকিং

বিজ্ঞানীদের মধ্যে নিউটন কিংবা আইনস্টাইনের পর যার নাম সামনে চলে আসে তিনি স্টিফেন হকিং। মোটর নিউরোন রোগে আক্রান্ত হয়ে শরীরের দখল হারালেও মনের দিক থেকে ছিলেন প্রচণ্ড শক্তিশালী। আর সেই মানসিক শক্তির জোরেই একমাত্র দখলে থাকা মস্তিস্ককে ব্যবহার করেছেন পরিপূর্ণভাবে। বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে তাই স্বাভাবিক মানুষকেও হার মানিয়েছিলেন তিনি।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই জিনিয়াস রেট্রো–রোবোটিক ভয়েসের মাধ্যমে জানিয়ে গেছেন ভবিষ্যত বিজ্ঞানের কর্মপন্থা। শুধু কৃষ্ণগহ্বর কিংবা বিগ ব্যাং আবিষ্কারই নয়, গ্রাভিটেশন, কসমোলজি, কোয়ান্টাম থিওরি, ইনফেরমেশন থিওরি নিয়েও কাজ করেছেন এই বিজ্ঞানী। করেছেন ভিনগ্রহীদের নিয়ে গবেষণাও।

ভিনগ্রহীদের ব্যাপারে হকিং বারবার বলেছেন, ‘মহাকাশে উন্নত বুদ্ধিমান প্রাণী অবশ্যই আছে। আমরা যেমন তাদের খুঁজছি, তারাও আমাদের খুঁজছে। হয়তো তারা প্রযুক্তিতে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। তাদের সভ্যতাও হয়তো আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত।’‌

ভিনগ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারেও আশার বাণী দিয়ে গিয়েছেন স্টিফেন হকিং। জানিয়েছিলেন, একদিন নিশ্চয় তাদের পাঠানো সংকেত আমরা বুঝতে পারবো। তখন হয়তো সেই সংকেতের জবাবও দিতে সক্ষম হবো আমরা।

ভিনগ্রহীদের যোগাযোগের বিষয়ে হকিং অবশ্য সাবধান থাকতেই বলে গেছেন। কেননা উন্নত কোনো জাতি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত জাতির উপর শাসন চালাতে চায়। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এছাড়া পৃথিবীর ভবিষ্যত নিয়েও সাবধান করে গেছেন তিনি। বলেছিলেন, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর বাইরে বিকল্প গ্রহ খুঁজে বের করতে না পারলে বিপদ ঘনিয়ে আসবে। কেননা পৃথিবীতে জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে বসবাসের জায়গার অভাব দেখা দেবেই। অভাব দেখা দেবে বেঁচে থাকার বসদেও।

এছাড়া মহাজাগতিক কারণেও পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকা ভবিষ্যতে অসম্ভব হয়ে যাবে। হকিং বলেছিলেন, ব্ল্যাক হোল, সুপারনোভা, সোলার রেডিয়েশনের প্রভাবে পৃথিবীর এমন অবস্থা দাঁড়াবে, যা মানুষ সহ্য করতে পারবে না।

মানুষের সৃষ্ট জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়েও আগাম সতর্ক করেছিলেন হকিং। জানিয়েছিলেন, আগামী ৬শ’ বছরের মধ্যে মানুষের অত্যাচারে পৃথিবী সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলোর পরিণতির দিকে এগুবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়েও এই বিজ্ঞানী সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়ে গেছেন। হকিং বলেছিলেন, প্রযুক্তি আবিষ্কার আর তা ব্যবহার করেই সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না। সেগুলোর ভবিষ্যত প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও সমান ধারণা আর প্রস্তুতি থাকতে হবে। রোবটিক্স গবেষণার ক্ষেত্রেও একই ধরণের সাবধান বাণী দিয়ে গেছেন বিজ্ঞানীদের বিষ্ময় এই হকিং।

তবে সব কিছুর উপরে যে বিষয়টির দিকে স্টিফেন হকিং সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলেন, তা হচ্ছে ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধান। মানব জাতির টিকে থাকার স্বার্থেই যতো দ্রুত পৃথিবীর বাইরে বসবাসের উপযোগী গ্রহ খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন। যাতে কোনো কারণে পৃথিবীতে বিপর্যয় দেখা দিলেও মানব জাতির অস্তিত্ব বিলীন না হয়।

শেয়ার করুন