মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালনকালে কর্তব্যরত ডাক্তাররা লাঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। লাঞ্চিত ডাক্তাররা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় থাকেন বলে এমন তথ্য জানিয়েছেন হাসপাতালের টিএইচও ডা. নুরুল হক ।
তিনি বলেন,‘প্রতিকার ও করণীয় নিয়ে ইতোমধ্য হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সভা করে রেজুলেশন আকারে নেয়া হয়েছে যে আর যদি কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী লাঞ্চিত হন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, কুলাউড়া হাসপাতালে প্রতিদিন অসংখ্য রোগির ভীড় লেগেই থাকে। শুধু কুলাউড়া নয় পাশর্^বর্তী জুড়ী উপজেলার রোগিরাও জরুরি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন এই হাসপাতাল থেকে। প্রতিদিন ৫শতাধিক রোগী জরুরি ও বহির্বিভাগে সেবা নিয়ে থাকেন। অথচ মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে এই সেবা কার্যক্রম। রোগীর দেখতে ডাক্তারদের খেতে হয় হিমশিম।
এরমধ্যে সামান্য বিষয়ে রোগিদের সঙ্গে আসা স্বজনরা চড়াও ডাক্তারের উপরে। বিশেষ করে রাতে কর্তব্যরত ডাক্তার নার্সরা দায়িত্ব পালনে কখনও কোন হামলা হয় কিনা এনিয়ে তারা উদ্বেগ উৎকন্ঠা থাকেন। যদিও পরবর্তীতে বিষয়গুলো সমাধান হয়েছে। কিন্তু লাঞ্চিত ডাক্তার তখন কুলাউড়ায় দায়িত্ব পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
হাসপাতাল সুত্রে আরও জানা যায়, ২০১৭ সালের ৬ মার্চ রোগিকে অক্সিজেন দেয়া নিয়ে রোগির আত্মীয় লাঞ্চিত করেন ডা. ইমরানকে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন। বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু ক্ষোভে অভিমানে ডা. ইমরান বদলী হয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চলে যান।
সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল রাতে কুলাউড়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম সবুজ তার ভাই গেন্দু মিয়াকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তখন কর্তব্যরত ডাক্তার সমরিজত সিংহ তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু ডাক্তার কেন নিজহাতে গেন্দু মিয়াকে অক্সিজেন লাগিয়ে না দেয়ার অযুহাতে ডা. সমরজিত সিংহকে থাপ্পড় মারেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম সবুজ। এনিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এনিয়ে সোমবার (২৩এপ্রিল) কুলাউড়া হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারিরা দায়িত্ব পালনকালে ডাক্তারদের নিরাপত্তা ও দায়িত্বপালন সম্পর্কে করণিয় নির্ধারণে এক সভায় মিলিত হন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত কুলাউড়া উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘আমার ভাই হাসপাতালে মারা যান। এসময় আমিসহ অন্যভাইরা একটু হাল্লা চিৎকার করেন। বিষয়টি এমপি সাহেব তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তার সাথে মিমাংসা নিষ্পত্তি করে দেন। এছাড়া ২২এপ্রিল রবিবার আবার বিষয়টি আবার নিষ্পত্তি হয়। মারামারির কোন ঘটনা নয়।’
জানতে চাইলে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক এই প্রতিনিধিকে মুঠোফোনে বলেন, যুবলীগ নেতার সাথে বিরোধের বিষয়টি নিস্পত্তি হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে দলের শীর্ষ নেতারা তাকে নিয়ে হাসপাতালে এসে ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করে গেছেন। তাই মেনে নিয়েছি আমরা। আর যদি কোন ডাক্তার বা নার্সদের উপর এ ধরণের কোন হামলা হয়, তাহলে আমরা সহ্য করবো না। প্রশাসনিকভাবে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে হাসপাতালে দায়িত্বপালনকালে ডাক্তারের উপর হামলার ঘটনায় আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন আছি। এভাবে যদি চলতে থাকলে কোনসময় ভাল ডাক্তার কুলাউড়ায় চাকরি করতে আসবে না। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে নিয়ে সভা করেছি। সভায় রেজুলেশন আকারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। রেজুলেশনের কপি উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে।’
সাই/জালালাবাদবার্তা.কম