অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা

হেলাল চৌধুরী, টরন্টো, কানাডা

 

দৈনিক তাজাখবর ও আর টি ভি অনলাইন নিউজ এ ২১শে ফেব্রুয়ারী ২০১৮ একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। যা পড়ে একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে কিছু মন্তব্য না লিখে পারলাম না। অবস্য পাঠকের অবগতির জন্য ছবি সহ খবরটি প্রকাশ করা হলো।

প্রথমত পাকিস্থানী শাসকগোষ্টি উর্দু ভাষাকে পূর্ব পাকিস্থানী বাংলাভাষী বিশাল জনগোষ্টির উপর চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে রূপ নেয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারী বেশ কিছু তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষা পূর্ব পাকিস্থানের (তদানিন্তন)ভুখন্ডে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যারা শহীদ হয়েছেন আল্লাহ্‌ তাদের জান্নাত দান করুন আমীন। যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাথে কোনও সম্পৃক্ততা ছিল না। ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্থান (তদানিন্তন) স্বাধীনতা বৃটিশ সাম্রাজ্য থেকে লাভ করে এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে পাকিস্থানী জান্তাদের কাছ থেকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বিজয় লাভ করে। অনেক অনেক বৎসর গত হওয়ার পর ইদানিংকালে প্রায়ই খবর প্রকাশিত হয় দুই বাংলা মিলে এই অনুষ্ঠান, ঐ অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। “‍দুই‍ বাংলা মিলে অনুষ্ঠান”‍ এইখানেই আমার মতো অনেকেরই আপত্তি আছে এবং ঘুর আপত্তি আছে। যদি ওরা বলত বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বাংলা মিলে এই অনুষ্ঠান বা ঐ অনুষ্ঠান করছে বা করিতেছে, তাতে আমার মতো অনেকেরই আপত্তি থাকত না। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বা দালাল দুই বাংলা শব্দটা ব্যবহার করতে খুবই স্বাচ্ছন্নবোধ করে। জানিনা কার স্বার্থে ওরা, দালালরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হানতে ভালবাসে। যার কারনে ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ সালে বেনাপোল বর্ডারে ভাষা দিবস পালন উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী যে উধ্বত্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন,‍ “‍২০ বৎসরের মধ্যে বাংলাদেশ নামে আলাদা কোনও রাষ্ট্র থাকবে না‍।“ যদি একান্ত উনার নিজস্ব মন্তব্য হয় তাহলে বলব উনার মানষিক কোনও সমস্যা আছে। সবচেয়ে বড় কথা, ঐ সময় ঐ স্থানে বাংলাদেশের কিছু লোক, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ উপস্থিত ছিলেন যার মধ্যে অন্যতম কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন ও বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল আরিফুল হক। বাংলাদেশের সেনা অফিসার ও জোয়ানরা শ্বপত বাক্য এই বলে পাঠ করে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার উপর আঘাত আসলে প্রাণের বিনিময়ে হলেও তা প্রতিরোধ করব। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও সঙ্খার বিষয় হচ্ছে ওরা শ্বপথবাক্য ভুলে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী মন্তব্যের উপর করতালি দিয়ে স্বাগত জানায়। (বিস্তারিত খবর পাঠকের অবগতির জন্যে এই লেখার সংযোজন করা হলো)

দ্বিতীয়ত, আজ ভীষন মনে পড়ে স্বাধীনচেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের কথা। আজ যদি উনি বেঁচে থাকতেন পশ্চিম বাংলার (রাজ্য সরকারের) মন্ত্রী এই রকম মন্তব্য করার সাহস দেখাতে পারতো না, বলাতো দূরের কথা চিন্তাও করতে পারত না। আর যদি ভূলে বা মনের অগোচরে বলে ফেলত তাহলে হাজারবার মাফ চেয়ে নিতে হত। যদি জিয়াউর রহমান সাহেবও বেঁচে থাকতেন তাহলেও সাহস পেত না। আল্লাহ্‌ দুই রহমানকেই জান্নাত দান করুন আমীন, উনাদের শাসন আমলে যাই হোক না কেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সম্পূর্ণ সুরক্ষিত ছিল। আজ আমরা দেখি রুগ্ন পররাষ্ট্রনীতির কারনে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো যে আচরন করতেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যদি এই দুই নেতার একজনও বেঁচে থাকতেন তাহলে মায়ানমারের (বার্মার) মতো দেশ রুহীংগা মুসলমানদের উপর অত্যাচার করে বাংলাদেশের ভূখন্ডে জোর করে তাড়িয়ে দিতে পারতনা। মায়ানমারের সেনা সদস্যরা বাংলাদেশের বর্ডারে উদ্ধত্য আচরন দেখাতে পারতনা। ওদের জন্য আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের বিডিআর ই যতপোযুক্ত দাত ভাঙ্গা জবাব দিতে পরত। বর্তমানে আমরা খবরের মাধ্যমে যা দেখি তাতে মনে হয় বিজিবি একটা শৃঙ্খলবেষ্টিত বাহিনী, ওদের বলার কিছু নেই, করারও কিছু নেই। চেয়ে চেয়ে দেখলাম আমার বলার বা করার কিছু ছিল না। আফসোস হয় বিডিআর এর অতীত ঐতিহ্য, একশন এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এবং বর্তমান বিজিবির কার্য্যকারীতা দেখলে। আরেকটা ব্যপার বলতে হয় বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি এবং সুশীল সমাজের একটা অংশ এই সমস্ত মন্তব্য শুনলে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়, কোনও মন্তব্য বা আলোচনা-সমালোচনা করতে ভয় পায় নাহয় অদের প্রভু নারাজ হয়ে যাবে। প্রভুকে খুশী করার জন্য নিজেদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দিতেও ওরা দ্বিধাবোধ করে না। বাংলাদেশের ভূখন্ডে ওরা দ্বিধাবোধ করে না। বাংলাদেশের ভূখন্ডে ওরা বুদ্ধিজীবি বা সুশীল সমাজ। তখন কোরআনের একটি আয়াতের কথা মনে পড়ে, সুরা বাকারায় আবু জাহেল ও আবু লাহাবের ব্যপারে বলেছেন “ওদের কান আছে ওরা শুনবে না, আমি শীসা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। মুখ আছে বোবা করে দিয়েছি।“ এখন প্রশ্ন হচ্ছে ওরা কেন ন্যয়ের পক্ষে কথা বলে না, ওরা কি সেই আবু লাহাব, আবু জাহেলের বংশধর?

শেষ পর্যায়ে এসে আমি একটি অনুরোধ করব “বাংলাদেশের জনগন বিশ্বের প্রতিটি দেশেই অবস্থান করিতেছেন, বাংলাদেশ আমাদের প্রাণ, আমাদের স্বত্ত্বা, আমাদের পরিচয় (যে দেশেরই নাগরিক হইনা কেনো পাসপোর্টে বাংগালী লিখা থাকে না, থাকে বাংলাদেশী অর্থাৎ BD)। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের উপর যদি কোনও দেশ, গোষ্টী বা ব্যক্তি কোনও অশোভন মন্তব্য করে তাহলে সাথে সাথে প্রিন্টিং মিডিয়া, ইন্টারনেট, টুইটার বা ফেইসবুকের মাধ্যমে কড়া প্রতিবাদ জানানো এবং বিশ্বের প্রতিটি কোণা থেকে তা জানাতে দ্বিধাবোধ করবেন না।

ভাই ও বোনেরা সাহায্য চাইবেন আল্লাহ্‌র কাছে, যিনি সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে। বাংলাদেশের জনগন স্বাধীন বাংলার নবাব সিরাজুদ্দৌলার উত্তরসূরী, সালাউদ্দিন আইয়ুবের উত্তরসূরী। স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখব ইনশাহ্‌আল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌ আমাদের সহায়। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, আল্লাহ্‌ হাফিজ।

 

 

শেয়ার করুন