নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স ও আয়ার ভুল চিকিৎসায় স্কুল শিক্ষিকা প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ১০ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে গঠিত তদন্ত কমিঠি। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত আয়া নমিতা আচার্য্যকে হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে আর সেই সাথে অভিযুক্ত দুই নার্স আরতী দেবনাথ ও চন্দ্রনা দে কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের এরকম হাস্যকর শাস্তির ঘটনায় নবীগঞ্জে তোলপাড় চলছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও নবীগঞ্জের সচেতন মহল তা মেনে না নিয়ে ঘটনাটি পুনরায় তদন্ত পূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য যে, নবীগঞ্জ পৌর এলাকার শিবপাশা গ্রামের বাসিন্ধা এবং উপজেলার রোকনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুফলা রাণী দাশ (৩২) কে গভবর্তী অবস্থায় গত ২৮ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া নমিতা রানী আচার্য্যর পরামর্শে ভর্তি করা হয়। সব ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হাসপাতালেই ভালভাবে সন্তান প্রসব হবে এতে কোন ডাক্তারের প্রয়োজন হবে না বলে আয়া নমিতা আচার্য্য, সিনিয়র স্টাফ নার্স আরতি বালা ও চন্দনা দে তাদেরকে নিশ্চয়তা দেন। বিষেশজ্ঞ কোন চিকিৎসক ছাড়াই তারা তিন জনের সমন্বয়ে শুরু করেন ওই প্রসূতির ডেলিভারীর কাজ। এক পর্যায়ে প্রসূতির অতিরিক্ত রক্তকরণ হয়। তার অবস্থার বেগতিক দেখে দীর্ঘ প্রায় ৩ ঘন্টার পর দায়ভার এড়াতে কৌশলে তারা সন্ধ্যা ৭টার দিকে তোকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পথিমধ্যে আউশকান্দি সংলগ্ন স্থানে পৌছলে প্রসূতি সুফলা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ ঘটনায় গত ৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণকারী শিক্ষিকার ভাই সুজন দাশ বাদী হয়ে সুবিচার চেয়ে হবিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ো করে। এর ফলে গত ২৩ এপ্রিল হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন সত্যজিত রায় বিষয়টি তদন্ত করেন। ঘটনাটি নিয়ে গতকাল শনিবার দিনভর নবীগঞ্জ শহরে চলে ব্যাপক আলোচনা। বিষয়টি নিয়ে নবজাতকসহ মৃত্যুবরণকারী শিক্ষিকার স্বামী রিপন তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নমিতারা যে অপরাধ করেছে তা তদন্ত প্রতিদেনে বলা হয়েছে। তারা যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে শুধু একজনকে বদলী ও দুইজনকে সর্তক করে দেয়ার শাস্তি হাস্যকর ছাড়া কি হতে পারে? তিনি আরো বলেন, এমনিতেই আমি আমার অবুঝ শিশু বাচ্ছাকে নিয়ে খুব সমস্যায় আছি তার পরও আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার চাইবো। নবীগঞ্জ প্রাইমারী শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল মিয়া বলেন, নবজাতকসহ আমাদের শিক্ষিকা সুফলা রাণী দাশ যাদের কারণে মারা গেল তদন্তে যদি তারা দোষী হয়ে থাকে তাহলে এরকম শাস্তি শুধু হাস্যকরই নয় প্রহসনও বটে। তিনি পুনরায় তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করেন। নবীগঞ্জ উপজেলার শ্রেষ্ট প্রাইমারী শিক্ষক মধূসদন ভট্রাচার্য্য বলেন, সুফলার মৃত্যুর জন্য নমিতাই দায়ী। নমিতাসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান। সুফলার স্বামীর বাড়ি এলাকার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গৌতম কুমার দাশ বলেন,বিষয়টি একবারে পরিস্কার যে আয়া নমিতা ও অদক্ষ নার্সদের কারণে সুফলা নবজাতকসহ মারা গেছে। তাদের সঠিক বিচার হওয়া উচিত। অভিযোগকারীদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে নিহত সুফলার ভাই সুজন দাশ বলেন, আমরা পুনরায় তদন্ত চেয়ে আরো উপরে অভিযোগ দেব। ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাব।