পল্লী বিদ্যুতের খুঁটির টানা তার রাস্তায় নির্মাণের অভিযোগে সংবাদ সংগ্রহকালে  কমলগঞ্জে ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে দুই সাংবাদিককে হুমকি ও অবরুদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নবনির্মিত লাইন স্থাপনে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে তারের টানা রাস্তার মাঝখানে স্থাপন করার অভিযোগে সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহকালে ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে দলবল নিয়ে দুই সাংবাদিককে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আড়াই ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে দু:খ প্রকাশ করেন।

২০ মে রোববার সকাল পৌনে ১১ টায় কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়চেগ গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।  এ ঘটনায় কমলগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রহিমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়চেগ গ্রামের আসাদ মিয়ার বাড়ির পার্শ্ববর্তী রাস্তায় নবনির্মিত লাইন স্থাপনে বৈদ্যুতিক খুঁটির তারের টানা রাস্তার মাঝখানে স্থাপন করা হয়। জনসাধারণের অসুবিধা না করে তারের টানা খুঁটি রাস্তার পাশে স্থাপন করার জন্য এলাকাবাসী গত শনিবার কর্মরত শ্রমিকদের আপত্তি জানান। বিষয়টি অবলোকনের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের পর স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদ আলীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের প্রবেশ বিষয়ে প্রশ্ন করে উত্তেজিত হয়ে উঠেন। এরপর ফোন কেটে তিনি তার ছেলে বাবেল সহ দুই মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসেই কমলগঞ্জের সমকাল প্রতিনিধি প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ ও ইত্তেফাক প্রতিনিধি নূরুল মোহাইমীন মিল্টন এর উপর আক্রমনের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য মাহমুদ আলী (৫৫) ও তার ছেলে বাবেল মিয়া (২৫) সাংবাদিকদের উপর মারমুখী হয়ে উঠলে স্থানীয়রা তাদের প্রতিহত করেন। তারা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই দুই সাংবাদিকে মেরে গুম করারও হুমকি দেন। এরপর সাংবাদিকরা সেখানে আটকা পড়লে খবর পেয়ে অন্যান্য সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং কমলগঞ্জ থানার ওসি মোকতাদির হোসেন পিপিএম এর নির্দেশে থানার এসআই মো. মাহবুব সহ পুলিশের একটি ফোর্স ঘটনাস্থল থেকে বেলা দুই টায় সাংবাদিকদের নিয়ে আসেন। এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন মুহুূতে বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসি।

দক্ষিণ বড়চেগ গ্রামের মসু মিয়া, লেবু মিয়া, আসিদ মিয়া, মাসুক মিয়া, হারুনুর রশীদ সহ এলাকাবাসী বলেন, ইউপি সদস্য মাহমুদ আলী পূর্ব থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে গ্রামের একটি অংশের উপর ক্ষুব্ধ। বৈদ্যুতিক খুঁটির টানা তার রাস্তায় স্থাপন করলে যাতায়াতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হবে ভেবে রাস্তার পাশে স্থাপন করার জন্য আপত্তি জানানোর কারনেই ইউপি সদস্য মাহমুদ আলীর ইন্ধনে গ্রামের কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করান। বিষয়টি দেখার জন্য সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হই এবং সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে আসলেও তাদের মেরে ফেলার হুমকি ও অবরুদ্ধ করে রাখেন।

ঘটনা শুনে রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুল বেলা আড়াইটায় ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিকদের নিয়ে হামলাকারী ইউপি সদস্য মাহমুদ আলীসহ অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে দু:খ প্রকাশ করেন।

কমলগঞ্জ থানার এসআই মাহবুব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাস্তায় বৈদ্যুতিক খুঁটির টানা তার স্থাপন করা ঠিক হয়নি। সাংবাদিকদের সাথে ইউপি সদস্য ও তার ছেলের অশোভন আচরনের বিষয়টি এলাকাবাসি আমাকে জানিয়েছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাদের নিয়ে আসি।

এদিকে কমলগঞ্জের দুই সাংবাদিককে হুমকি ও অবরুদ্ধের ঘটনায় কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক, পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমদ, যুগ্ম আহবায়ক শাহীন আহমদ ও মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কমলগঞ্জ ইউনিটের সভাপতি আব্দুল হান্নান চিনু ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মারুফ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।

কমলগঞ্জ থানার ওসি মো: মোকতাদির হোসেন পিপিএম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সাংবাদিকদের কাছ থেকে খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি এবং তাদের উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় কেউ কোান লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

শেয়ার করুন