চা শ্রমিক হত্যা দিবসে কমলগঞ্জে দুটি শ্রমিক সমাবেশে মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবি উত্তোলন

স্টাফ রিপোর্টার॥ চা শ্রমিক হত্যা দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দুটি চা বাগানে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চা শ্রমিক সমাবেশে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি, ভূমির অধিকারসহ বিভিন্ন দাবিতে উত্তোলন করেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

রোববার ২০ মে সকাল ১১টায় চা বাগান পঞ্চায়েত ও সাধারন চা শ্রমিকদের আয়োজনে প্রথম শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় রহিমপুর ইউনিয়নের মৃর্তিঙ্গা চা বাগান নাচঘর প্রাঙ্গনে। বিকাল ৪টায় শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত ও চা শ্রমিক, ছাত্র-যুবকদের আয়োজনে দ্বিতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় শমশেরনগর চা বাগান নাচঘর প্রাঙ্গনে। ১৯২১ সালে ২০ মে চাঁদপুর মেঘনা ঘাটে নিরিহ চা শ্রমকিদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা ও কেটে মেঘনা নদীতে ফেলার ঘটনায় প্রতি বছর চা শ্রমিক হত্যা দিবস পালন করে আসছে চা শ্রমিকরা।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় একটি শোভাযাত্রা এ চা বাগানের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশ স্থলে এসে শেষ হয়। সকাল ১১টায় মৃর্তিঙ্গা চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি নিরঞ্জন তন্ত বাই-এর সভাপতিত্বে চা শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক রাম ভজন কৈরী। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চা শ্রমিক ও কালিঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান পরাগ বাড়ই, চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালেঞ্জী, রহিমপুর ইউনিয়নের সদস্য ও চা শ্রমিক ধনা বাউরী, মুক্তিযোদ্ধা ও চা শ্রমিক কুল চন্দ্র তাঁতী ও ছাত্র যুবক নেতা প্রদীপ মুন্ডা।

বিকাল ৪টায় শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নিপেন্দ্র বাউরীর সভাপতিত্বে ও মোহন রবিদাসের সঞ্চালনায় স্থানীয় নাচঘর প্রাঙ্গনে চা শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শমশেরনগর ইউনয়িন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জুয়েল আহমদ। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী, এম এ আহাদ,গোপাল মাদ্রাজী ও নিলু গোয়ালা।

মৃর্তিঙ্গা চা বাগানের সমাবশে প্রধান অতিথি চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক রাম ভজন কৈরীসহ বক্তারা বলেন, ব্রিটিশ সরকার ১৮৩৪ সালে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষজকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশে(তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) এনে ব্রিটিশরা এ অঞ্চলে চায়ের আবাদ শুরু করেছিল। এসব মানুষজন পাহাড়ি এলাকায় চায়ের গোড়া পত্তন করতে গিয়ে চা বাগান মালিক ও ম্যানেজারদের হাতে নানাভাবে নির্যাতন ও নিপিড়নের শিকার হলে ১৯২১ সালে শুরু করে মুল্লোক চলো(নিজের আবাস ভূমি ভারতে) আন্দোলন। এ আন্দোলনের কর্মসূচী হিসাবে চা শ্রমিকরা পায়ে হেটে চাঁদপুর মেঘনা ঘাটে গিয়ে নৌপথে ভারতে ফিরার চেষ্টা করছিল। এসময় তৎকালীণ ব্রিটিশ সরকারের গুর্খা রেজিমেন্টের  নির্বিচারে গুলিতে অসংখ্য চা শ্রমিক মারা যায়। অনেক চা শ্রমিককে পেট কেটে মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ায় হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ২০ মে চা শ্রমিক হত্যা দিবস হিসাবে পালন করা হয়।

প্রধান অতিথি রাম ভজন কৈরী আরও বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পরও এ দেশের চা শ্রমিকরা একনায়কতন্ত্রের শিকার হয়েছিল। যারার শ্রমিক ইউনিয়নে ছিলেন শুধু তাদেরই উন্নয়ন হলেও প্রকৃত চা শ্রমিকদের উন্নয়ন হয়নি। ২০০৮ সালে সংগ্রাম কমিটি গঠন করে আন্দোলন শুরু হলে প্রথমবারের মত গণতান্ত্রীক উপায়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন হয়। ২০১৪ সালে সারা  দেশের সাড়ে ৯৫ হাজার চা শ্রমিকরা নিজেরা ভোট দিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নে প্রতিনিধি নির্বাচন করে। সম্প্রতি চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হওয়ার কথাও শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ বলেন।

বক্তারা আরও বলেন সারাদিন ঝুঁকির মাঝে কঠোর পরিশ্রম করে একজন চা শ্রমিক দৈনিক মজুরি পাচ্ছে মাত্র ৮৫ টাকা। তাতে একজন শ্রমিকের সংসার চলে না। তাই অবিলম্বে নতুন মজুরি চুক্তি করে তা কার্যকর করতে হবে। চা শ্রমিকরা যে ভূমিতে বাস করছে সে ভূমিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার দিতে হবে। শ্রমিক বস্তির জরাজীর্ণ ঘরগুলি মেরামত করে দিতে হবে। সরকারী চাকুরি ও উচ্চ শিক্ষায় চা শ্রমিক সন্তানদের কোটা দিতে হবে।

শেয়ার করুন