স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রবীর এক সময় বিদ্যুৎ অফিসের বিভিন্ন মিটার রাইডারদের একান্ত সহযোগী হিসেবে দৈনিক মজুরিতে কাজ করত। সরকারি চাকুরি ছাড়া এভাবে প্রায় ৮/১০ বছর চলে। তখন থেকে সে জড়িয়ে পড়ে নানা অনিয়মে। সন্ধ্যান পায় আলাদিনের চেরাগের। মিটার জালিয়াতি ও অবৈধ লাইন সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা। কিছু দিনের ব্যবধানে প্রবীর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়। তার এ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও এপর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের বয়স সীমা ৩০ বছর। কিন্তু প্রবীর বিগত ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারী ৪৪ বছর বয়সে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ভোটার কার্ডে বয়স সংশোধন করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের লাইন সাহায্যকারী’র চাকুরি পায়। ওই চাকুরীতে শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী ছিল। কিন্তু প্রবীরের এ যোগ্যতা না থাকায় সে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আশেরা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামিয় একটি প্রতিষ্টানের জাল সার্টিফিকেট চাকুরির জন্য জমা দেয়। একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, নিজে ওই বিদ্যালয়ের ভুয়া সনদ বানিয়ে সীল ও স্বাক্ষর দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত প্রবীর দাস রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের পরেশ দাসের পুত্র। সে ১৯৭০ সালের ১০ অক্টোবর জন্ম গ্রহণ করে। নির্ধারিত বয়সে বাড়ির পার্শ্ববর্তী পাঁচগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৭৯ সালে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে। বিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার খাতা ঘাটিয়ে দেখা যায় পঞ্চম শ্রেণীতে তার রোল নং ৩ ছিল। পরে আর লেখাপড়ায় আগাতে পারেনি প্রবীর দাস।
জেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারী প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর সিলেট অফিসে চাকুরিতে যোগদান করলে পরবর্তীতে ওই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারী মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে প্রবীরকে স্থানান্তর করা হয়। তবে জাল জালিয়াতির বিষয়ে তারা কিছু বলতে পারেননি।
জেলা নির্বাচন অফিস ও একটি সূত্র জানা যায়, প্রবীর ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারী জেলা নির্বাচন অফিস থেকে বাম হাতের লেনদেনে ১০/১০/১৯৭০ এর জন্ম তারিখ সংশোধন করে ১৫/০১/১৯৮২ করেন। যার ব্যবদান ১২ বছর। বর্তমান জন্ম তারিখ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রবীর জন্মের আগেই পঞ্চম শ্রেণী পাস করেন। এ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা, সচেতন নাগরিক ও অভিজ্ঞ মহলের মধ্যে নানা প্রশ্ন বিরাজ করছে। বিদ্যুৎ এর মিটার এনালগ থাকা অবস্থায় মৌলভীবাজার শহরের অনেক লোক তার দ্বারা হয়রানির স্বীকার হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নাগরিক জানান, অনেকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে মিটারের ইউনিট কমিয়ে দিত এবং কোনো মিটারে অস্বাভাবিক বিল আসলে এটি নষ্ট বলে মনুনদীতে ফেলে দিত। অথচ অফিসকে বলা হতো এদের মিটার জ্বলে গেছে। পরবর্তীতে তাদেরকে নতুন মিটার দেয়া হতো।
অভিযোগের বিষয়ে লাইন সাহায্যকারী প্রবীর দাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “আমি আপনার সাথে কথা বলতে পারব না। আপানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি কথা না বললে কে বলবে। এমন প্রশ্নর জবাবে প্রবীর কিছু বলতে রাজি হননি”।