স্কুলছাত্র আব্দুল্লাহ হাসান হত্যার স্বীকারোক্তি অপমানের প্রতিশোধ নিতে প্রাইভেট কার চালক এরশাদ হত্যার পরিকল্পনা নেয়

বড়লেখা প্রতিনিধি॥ ১৪ বছরের কিশোর আব্দুল্লাহ হাসান। বাবার প্রাইভেট কার চালক বাড়ির গ্যারেজে পার্কিংয়ের সময় কারের বডি তার গায়ে লাগিয়ে দেয়। রাগের বশে সে চালক এরশাদ মিয়াকে চড় বসিয়ে দেয়। অবশ্য এ ঘটনায় হাসান গাড়ি চালকের নিকট কয়েকবার ক্ষমাও চেয়েছে। কিন্তু পাষন্ডু এরশাদ মিয়া তাকে ক্ষমা করেনি। ঘটনার প্রায় ৩ মাস পর সুযোগ বুঝে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে এ অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছে। বুধবার অপরাহ্নে সে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়েল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসান জামানের খাসকামরায় লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ক্লু-হীন এ হত্যা মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরের পর ঘটনার ৩ মাসের মাথায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ইন্সপেক্টর শিবিরুল ইসলাম হত্যার ক্লু উদ্ধার করতে সক্ষম হন।

জানা গেছে, ১৮ জানুয়ারি রাতে আব্দুল্লাহ হাসান বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। সে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামের সৌদিআরব প্রবাসী আব্দুর রহিমের ছেলে এবং সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মনির আহমদ একাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্র। ছেলে নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে ২৩ জানুয়ারী দেশে ফিরেন আব্দুর রহিম। নিখোঁজের ১০ দিন পর ২৮ জানুয়ারী রাতে মোহাম্মদনগর এলাকার একটি নির্জন টিলার ঢালু স্থানে আব্দুল্লাহ হাসানের খন্ডিত পচা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি নিহত আব্দুল্লাহ হাসানের বাবা প্রবাসী আব্দুর রহিম ৩ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। পরদিন পুলিশ আব্দুর নূর বলাই (৫০), তার ভাই বদরুল ইসলাম এবং বাদির ভাতিজা তারেক আহমদকে (২২) গ্রেফতার করে। হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ আসামীদের ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাহাঙ্গীর আলম জানান, আসামীদের রিমান্ড শেষে স্কুলছাত্র হাসান হত্যাকান্ডের ব্যাপারে তাদের নিকট থেকে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য পান। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করেন।

মৌলভীবাজার পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ইন্সপেক্টর শিবিরুল ইসলাম জানান, গাড়ি চালক এরশাদ মিয়া খুব ঠান্ডা মাথায় পুর্বপরিকল্পনা মতে এ হত্যাকান্ড ঘটালেও সে থেকেছে সন্দেহের উর্ধ্বে। তার তিনটি কর্মকান্ডকে প্রাধান্য দিয়ে পিবিআই অগ্রসর হয়। ঘটনার রাতে গাড়ি চালক এরশাদ সচরাচর যেখানে ঘুমায় সেখানে না ঘুমিয়ে অন্যস্থানে ঘুমিয়েছে। ঘটনার কয়েকদিন আগেই স্ত্রী-সন্তানদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া। ঘটনার পর চাকুরী ছেড়ে দেয়া, মূখে দাড়ি রাখা এবং আত্মগোপন করা। এসব সন্দেহজনক কারণে তাকে আটকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ১৯ মে মৌলভীবাজার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি হোটেল থেকে তাকে আটক করা হয়। পরদিন আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু ৩দিনের মাথায় সে স্কুলছাত্র আব্দুল্লাহ হাসান হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি প্রদান করে। উল্লেখ্য গাড়ি চালক এরশাদ মিয়া ভোলা জেলার শশীভুষন থানার চরমায়া গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে। সে বড়লেখায় নিহত আব্দুল্লাহ হাসানের বাবার প্রাইভেট কারের চালক ছিল।

তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, আদালতে স্বীকারোক্তিতে এরশাদ মিয়া জানিয়েছে, ঘটনার প্রায় ৩ মাস আগে স্কুলছাত্র হাসান তাকে চড় মারায় সে খুব অপমান বোধ করে। তখন থেকেই সে হাসানকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়। জরুরী কথা বলবে বলে তাকে নির্জন টিলায় নিয়ে খাসিয়া দা দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

শেয়ার করুন