রিজওয়ান রহমানঃ “বাঙালী এক হয়ে কাজ করতে পারেনা” – আমি সহ বেশিরভাগ বাংলাদেশী
“তোমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা তোমরা এক হয়ে কাজ করতে পারনা” – বেশিরভাগ এমপি, এমপিপি, কাউন্সিলর
টরন্টোর গত ৮ বছরের জীবনে এই কথা শুনতে শুনতে নিজেরাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে আমরা বাঙালীরা কোনোদিনই এক হয়ে কাজ করতে পারবোনা। আর ৮ বছরে নিজ চোখে দেখা নানান ঘটনাবলী যেনো এই বিশ্বাসকে আরো জোরালোই করেছে। কি সমাজকল্যাণমূলক কাজ, কি শহীদমিনার নির্মাণ, সবখানেই অন্তর্দ্বন্দ্ব। আর এসব ভাঙ্গনকে পুঁজি করে রাজনৈতিক নেতা আর তাদের দোসরদের ছড়ি ঘোরানো। এই ছিলো কমিউনিটি হিসাবে আমাদের দিনকাল। কিন্তু একটি নির্বাচন যেনো সেই চিরচেনা চেহারাটা বদলে দিয়েছে। না, কোনো ভুবনজয়ী নেতা বা নেত্রীর আগমনে নয়, এই চেহারা বদলে গেছে আমাদের নিজেদের কারণেই। আমরা বাংলাদেশী-কানাডিয়ান কমিউনিটির সদস্যরা নিজেরাই বদলে দিয়েছি দিন।
জানুয়ারীর ২৭ তারিখে কানাডার অন্যতম রাজনৈতিক দল NDP তাদের স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট আসনের জন্য মনোনীত করলো বাংলাদেশী কমিউনিটিতে প্রায় অখ্যাত এক তরুণী Doly Begum কে। আমরা সবাই যেনো নড়ে চড়ে বসলাম। কে এই ডলি বেগম! অনেক আলোচনা পর্যালোচনার পর জানা গেলো স্বাস্থ্য এবং কমিউনিটির উন্নয়নের নানান ক্ষেত্রে তার দীর্ঘ সংগ্রামের কথা। বিশ্বাস জন্মালো যে উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো রাজনীতিবিদ তিনি নন। আর দশটি ইমিগ্র্যান্ট পরিবারে বেড়ে উঠা সন্তানদের মতোই প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধে লড়াই করে আসা এক বাংলাদেশী-কানাডিয়ান তিনি। মূলধারার মানুষদের কাছে গর্ব করে বলতে পারার মতো যার অবদান সমাজকল্যাণমূলক কাজে। এর পরই শুরু হল এক নতুন যাত্রার।
নানান ধারার, নানান রাজনৈতিক বিশ্বাসের শত শত বাংলাদেশী কানাডিয়ান এক হয়ে দাঁড়ালেন। সবার কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে উঠলো একজন শিক্ষিত, নিবেদিত এবং যোগ্য রাজনৈতিক প্রার্থী পাওয়া গেছে এইবার। এই শত শত মানুষের কেউ লিবারেল, কেউ কনজারভেটিভ, কেউ এনডিপি, কেউ সমাজকর্মী, কেউ সাংস্কৃতিক কর্মী, কেউ নিপাট চাকুরীজীবি। কেউ ড্যানফোর্থপ্রাণ তো কেউ দূরে থেকে নিভৃতচারী। কিন্তু এক জায়গায় এসে মিলে গেলো সবার দূরত্ব – “ভালো একটি সুযোগ এসেছে এবার, প্রথম বারের মতো একজন বাংলাদেশী-কানাডিয়ান কে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি করার। Green & Red Wheelers এর তরুণ প্রাণেরা দাঁড়িয়ে গেলো, এ যে তাঁদেরই একজন। তারুন্য আর কর্মোদ্দীপনায় ভরপুর। Md Hamid যেমন বলে “আমাদের বোন, আমরাই জেতাব”। এগিয়ে আসলেন Rimon Mahmud এবং Bangladeshi Canadian – Canadian Bangladeshi (BCCB) পুরো পরিবার। নামের সাথেই যাঁদের বাংলাদেশী-কানাডিয়ান জড়িয়ে আছে, তাঁরা কি আর চুপ করে বসে থাকার মানুষ? সরাসরি রাজনীতিতে জড়ানোটা যাঁদের উদ্দেশ্য না, তারাও প্রাণের আকুতি লুকাতে পারলেননা। ইফতার পার্টিতে Rimon ভাই কঠিন চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন যাতে তাঁর কথা কোনো একক প্রার্থীকে অতিরিক্ত সুবিধা না দেয়, কিন্তু মনের আবেগকে চেপে রাখার চেষ্টা বৃথা। মুখ তাঁর চিরাচরিত সংযত, তবে বুক ফাটিয়ে যে তিনি চিৎকার করে বলতে চাচ্ছিলেন “এইবার হয়ে যাবে ডলি, এইবার হতেই হবে!” তা বুঝতে সাধারণ একজোড়া চোখই যথেষ্ট ছিলো। পার্টিতে উপস্থিত প্রতিটি BCCBian এর চোখের ভাষা বলে দিচ্ছিলো কতটা আন্তরিকভাবে তাঁরা চাচ্ছেন “অনেক অপেক্ষা হয়েছে, এইবার হয়ে যাক!”। বেশ কিছুদিন ধরে নিরন্তর লিখে চলেছেন Rezaul Islam ভাই, Nowsher Ali ভাই , Mozammel Khan স্যার, Shaugat Ali Sagor ভাই এবং Saifullah Mahmud Dulalভাই, Md Saiful Alam ভাই। সিটি নির্বাচনের প্রার্থীরা নিজেদের নির্বাচনী কাজ ফেলে এসেছেন আমাদের শক্তি জোগাতে। কমুনিটির মুরুব্বীরা, এমনিতে যাঁরা এখানকার রাজনীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখেন, সেই তাঁরাও এসেছেন কতবার! CBN24 পত্রিকা সম্পাদক Mahbubul Haque Osmani ভাই যেনো আমাদেরই একজন। ডলির অফিসের সামনে একবার দেখা হয়েছিলো। বললেন “ভাই, আমেরিকা কানাডার নির্বাচনে বড় বড় সব পত্রিকায় কোনো না কোনো প্রার্থীর পক্ষ নেয়। আর এতো আমাদের অন্যরকম এক আবেগের নির্বাচন। আমি কিভাবে না এসে পারি!?”। বাংলামেইল আর এন আর বি টিভির অধিকর্তা Shahidul Islam Mintu ভাই তাঁর পত্রিকায় তো প্রচারণা চালিয়েছেনই, এমনকি তাঁর ফেসবুক এর “মাই স্টোরী” তেও একই আবেদন জানিয়েছেন “ভোট ফর ডলি”। বাংলা কাগজের জাহাঙ্গীর ভাই ফোন করে একটু আদরমাখা ধমকই দিলেন “ডলির নির্বাচনী কার্যক্রমের সংবাদ পাঠাওনা কেনো!?”। Farida Haque আপা, ব্যারিস্টার Chayanika দি, রিয়েলটর Monir Islam ভাই, অমনিবাস একাউন্টিং এন্ড ট্যাক্স এর মুশতাক আঙ্কেল, জালালাবাদ এর Tanbir Kohinoor ভাই, Ilias Khan ভাই, প্রিয় অনুজ Ahmed Joy, Maruf Sharif এ তো শুধু আমার পরিচিতদের কথা বললাম, এমন আরো কতো শ্রদ্ধাভাজন কমিউনিটি লিডার রা যে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন! একজন সাধারন ভলান্টিয়ার আমি, দেখি আর অবাক হয়ে ভাবি এতটা প্রাণের টান, এতটা আবেগ হয়তো শুধু এই বাঙালীদের পক্ষেই সম্ভব।
আমাদের অনেকের গায়েই লিবারেল পার্টির তকমা। সেই আমরাই বললাম ” আমি লিবারেল বা আমি কনজারভেটিভ, এইসব স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট এর বাহিরে। এই একটি আসনে আমার কোনো দল নেই, আমার আছে একজনই প্রার্থী”। এই কথাটি যখন আমার ঘনিষ্ট বন্ধু লিবারেল এর এক এমপিপি প্রার্থীকে বলেছি, তখন তাঁর চোখে এক অন্য দৃষ্টি দেখেছি। সেই দৃষ্টিতে কোনো বিদ্রুপ ছিলোনা বন্ধুরা ! বরং ছিল এক অবাক হওয়া সম্মান যা আমি আগে কখনো দেখিনি। শুভ শক্তির এক হবার এই অনুভূতি আমি টের পাই প্রতি মুহূর্তে। সেদিন এক বিতর্কের শেষে ডলি সৌজন্যমূলক কথা বলতে গিয়েছিলো বর্তমান এমপিপি লরেঞ্জোর সাথে। হ্যান্ডশেক করার পর লরেঞ্জো বললেন “আমি ২ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচন জিতেছি এমন অভিজ্ঞতা আছে, শুভেচ্ছা রইলো”। কথাটাতে কি লুকানো একটা হুমকী ছিলো? হয়তো হ্যা হয়তো না। কিন্তু একটা চরম সত্য কথা ছিলো। এই দেশে নির্বাচনে অনেক সময়ই হারজিৎ নির্ধারিত হয় ৫/১০ ভোটের ব্যবধানে। তাই প্রতিটি ভোটই আমাদের স্বপ্নপূরণের জন্য চরম মূল্যবান।
আজ থেকে অ্যাডভান্স পোলিং শুরু হয়েছে। চলবে ৩১ তারিখ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০ তা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। অ্যাডভান্স পোল এর সুবিধা হলো যে ভোট কেন্দ্রে লম্বা লাইন এ দাঁড়িয়ে থাকার ঝামেলাটা পোহাতে হয়না। আরও একটি সুবিধা হলো নিজের ভোটটা দেয়া হয়ে গেলে নিশ্চিন্তে নিজের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ২/৩ ঘন্টা কাজ করে ফেলা যায়। তাই আমার সব বন্ধুদের বিনীত অনুরোধ করবো, এই অ্যাডভান্স পোল এই নিজের ভোটটি দিন। লিবারেল বা কনজারভেটিভ এর মতো বিশাল অর্থভাণ্ডার হয়তো আমাদের নেই, তবে আমাদের যা আছে সেটা ওই অর্থভান্ডারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আর তা হলো হাজারো বাঙালীর প্রাণের আবেগ আর ইতিহাস তৈরির তাড়না। স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট আসনে অ্যাডভান্স পোল দেয়া যাবে ৪ টি জায়গায়। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। নিচে ঠিকানা দেয়া হলো। আর যে কোনো তথ্যের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন ডলি’র নির্বাচনী অফিসে (৪১৬-৪২১-৬০৬৬) অথবা চলে আসুন ২২৭৯ কিংস্টন রোড এ। আমরা আছি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।
Advance Poll Centre #1
B10-14 Lebovic Avenue, Scarborough
Advance Poll Centre #2
700 Kennedy Road, Scarborough (Upper Parish Hall)
Advance Poll Centre #3
1577 Kingston Road, Scarborough (Royal Canadian Legion Hall)
Advance Poll Centre #4
3017 Kingston Road, Scarborough (Cliffcrest Public Library)