ব্যবসায়ীরা সিন্টিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করছেন ফল নবীগঞ্জে বিভিন্ন ফল বাজারে আসলে ও ফরমালিন ভীতি

শাহ সুলতান আহমেদ॥ এখন জ্যৈষ্ঠ মাস। এ মাসকে মধু মাস বলা হয়। প্রতি বছর এ মাসের শুরুতেই হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে মৌসুমী ফল আসতে শুরু করে। এর মধ্যে জাতীয় ফল কাঁঠাল,ও অন্যান্য ফল যেমন -আম, জাম, লিচু, তরমুজ, আনারসসহ রয়েছে বিভিন্ন ফল। পবিত্র রমজান মাস শুরুর দিকেই বাজারে এসব মৌসুমী ফল দেদারছে বিক্রি হওয়ায় ফলের দাম সিন্টিকেটের মাধ্যমে বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। যে কারণে ক্রেতারা বাড়তি দামে ফল ক্রয় করে খাচ্ছেন। বিশেষ কর্ েওই উপজেলার ভাটি এলাকা হিসেবে খ্যাত বড় ভাকৈর পশ্চিম ও বড় ভাকৈর পুুর্ব ইউনিয়নের লোকজন সারাদিন হাওরে কাজ শেষে যখনই বাজারে যাচ্ছেন,তখনই তারা এসব ফল ক্রয় করার চেষ্টা করছেন। তবে এসব মৌসুমী ফল নিয়ে মানুষের মধ্যে ফরমালিন ভীতি এখনো বিরাজ করছে। ফরমালিনযুক্ত ফল বাজারে যাতে কোনোভাবেই কেহ বিক্রি করতে না পারে সেজন্য ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। গতকাল রোববার দুপরে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজার, ইনাতগঞ্জ বাজার, সৈয়দপুর বাজার, কামারগাঁও বাজার ,টুকের বাজার বাজার ,পানিউমদা বাজার ,গোপলার বাজার,ইমামবাড়ি বাজার,মিলনগঞ্জ বাজার, রসুলগঞ্জ বাজার,নবীগঞ্জ বাজার,বান্দের বাজার, কাজীগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন বাজার হাঠ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে এসেছেন আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, আনারস, আাঙ্গুর, কলাসহ বিভিন্ন মুখরোচক ফল। আর এসব ফলের দোকানগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার লোকজন সুস্বাদু ফল ক্রয় করে নিজে খাচ্ছেন আবার অনেকে পরিবার পরিজ্বনকে খাওয়াচ্ছেন। তবে এর মধ্যে ফরমালিনযুক্ত কিছু ফল খেয়ে ক্রেতাদের কি ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়েও কেউ কেউ দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। কয়েকজন ফল বিক্রেতা জানান, গেল বৈশাখ মাসের প্রচন্ড গরমে কারণে তরমুজ ফলের কদর ছিল সবচেয়ে বেশী। তার দাম বেশি হলেও বিক্রিতে কোন কমতি ছিল না। ইনাতগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ফল ব্যবসায়ী আরব আলী বলেন, প্রতি বছরই বাজারে মৌসুমী ফল আসলে প্রথম পর্যায়ে দামটা একটু বেশি থাকে। তবে মানুষ বেশি দাম দিয়েই সেগুলো ক্রয় করেন। এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে ফলের উৎপাদন বেশি হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন-দিনাজপুর ও রাজশাহী থেকে লিচু পাইকারী ক্রয় করে বাজারে খুচরা বিক্রি করছেন। দিনাজপুরের লিচু সাইজে বড় হওয়ায় সেগুলোই ক্রেতারা বেশি ক্রয় করছেন। রাজশাহীর লেচু ও বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য স্থানের লিচু বাজারে আসলেও কম বিক্রি হয়। নবীগঞ্জসহ হবিগঞ্জ জেলার প্রতিটি উপজেলায় মৌসুমী ফলের উৎপাদন অনেক কম।এ কারণে পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাহিরের ফলের প্রতি আকৃষ্ট থাকেন বেশী। তিনি আরো জানান,প্রতিদিন ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকার লিচু দিনাজপুর থেকে পাইকারী ক্রয় করে আনেন । পাইকারী বড় সাইজের লিচু প্রতি একশ এর দাম পড়ে দুইশ থেকে দুইশ দশ টাকা। এসব লিচু খুচরা বাজারে দুইশ ত্রিশ থেকে দুইশ পঞ্চাশ টাকা দাশে বিক্রি। ছোট সাইজের একশ লিচু একশ বিশ থেকে একশ পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি হয়। তবে এসব লিচু ফরমালিনমুক্ত বলে দাবি করেন তিনি। আউশকান্দি বাজারের খুচরা আম ব্যবসায়ী শাহজাহান জানান, রমজান মাসে আমের চাহিদা বেশি থাকায় দাম অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ভাল জিনিস খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন- আড়তদারদের কাছ থেকে আম পাইকারী ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করছেন। এজন্য অনেক সময় নিশ্চিত হতে পারেননি আমের মধ্যে ফরমালিন আছে কি না। অপরদিকে বিভিন্না বাজারে আঙ্গুর প্রতি কেজি চারশ টাকা, খেজুর একশ’ টাকা থেকে শুরু করে চারশ, পাচশ, ছয়শ, সাতশ, ও এক হাজার টাকা দামে বিক্রি করছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ীগন। হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী জানান, দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে হবিগঞ্জে মৌসুমী ফলের উৎপাদন কম। হবিগঞ্জে এবার আড়াইশ হেক্টর জমিতে লেচুর উৎপাদন হয়েছে। এসব লেচু সাইজে ছোট হলেও খেতে সুস্বাদু। আম দেড়শ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে। আর পাহাড়ি এলাকার ২শ’ হেক্টর জমিতে আনারসের উৎপাদন হয়েছে। তিনি বলেন- বিভ্রান্ত করার জন্য বাজারে একটা কথা ছড়িয়ে দিয়েছে যে ফরমালিনযুক্ত ফল। এই ফরমালিনের আতংকে অনেকেই ফল খেতে ভয় পান। তিনি বলেন-লিচুসহ অনেক ফলই পাইকারী ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকে ক্রয় করে থাকেন। এতে ফরমালিন থাকার কথা নয়। তবে কাঁচা আম ফরমালিন দিয়ে পাকানো হচ্ছে সত্য। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে।

শেয়ার করুন