স্টাফ রিপোর্টার॥ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো ওরাও। অনেকটা অন্য শিক্ষার্থী ও প্রতিবেশিদের অজানতে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে চলেছে তাদের শিক্ষা জীবন। চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা উপকরণ না ফেলেও থামেনি লেখাপড়া। অভাব অনুটন ও কষ্টের মধ্যে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় চমক দেখিয়েছেন জেলাবাসীকে। অদম্য মেধাবীদের অবিস্মণীয় ফলাফলে আনন্দিত সহপাঠি, শিক্ষক ও অভিবাবকরা। অনেকে এ ফলাফল শোনে এলাকায় মিষ্টিও বিতরণ করেছেন। মেধাবীরা জিপিএ-৫ পেয়েও হতাশ। উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হওয়ার জন্য নেই হাতে নগদ টাকা। অনেকেরও আবার নেই বাবা। তাদের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার বা ইঞ্জিণিয়ার হয়ে দেশের সেবা করার। কিন্তু তাদের এই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়েযাবে। এই অদশ্য মেধাবীরা সহযোগীতা কামনা করছেন সমাজের বিত্তশীল, হৃদয়বান মানুষ ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের।
মোঃ মহসিন মিয়াঃ মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার তারাপাশা স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তির্ণ হয়েছে। বাড়ি রাজনগর উপজেলার মেলাঘর গ্রামে। মহসিনের বাবা মশাররফ আলী বেইন স্টোকে মারাযান ২০১৫ সালে। এরপর থেকে অভাব অনুটনের মধ্যে চলছে তাদের সংসার। ২ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে মহসিন সবার ছোট। বড় বোন উম্মে সালমা মৌলভীবাজার মহিলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে ও ছোট বোন হালিমা বেগম পুলিশ কনস্টেবলে চাকুরির পাশাপাশি এমসি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ছোট বোন হালিমার চাকুরির টাকা ও আত্মীয়দের সহযোগীতায় কোনোরকম চলছে তাদের সংসার। মহসিনের স্বপ্ন লেখাপড়া করে ডাক্তার হওয়া। কিন্তু এস্বপ্ন বাস্তবায়নে দারিদ্রতাই প্রধান বাঁধা। মহসিনের বড় বোন বলেন, মেডিকেলে পড়তে অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের কোনো টাকা নেই। কতটুকু স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে বুঝতে পারছিনা।
মৌরিন ফেরদৌসিঃ মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার হাজী ইনজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তির্ণ হয়েছে মৌরিন। মৌরিনের বাবা আব্দুল গণি একজন কৃষক। ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে কোনো রকম চলছে তাদের পরিবার। ৪ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে মৌরিন তৃতীয়। মৌরিনের বাবার পক্ষে লেখাপড়ার ব্যয়বার বহন করতে না পারায় বড় দুই বোনকে ইতি মধ্যে পাত্রস্থ করেছেন বাবা। ছোট এক বোন দশম ও আরেক ভাই নবম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। মৌরিনের স্বপ্ন লেখাপড়া করে ডাক্তার হওয়া। কিন্তু টাকার অভাবে এস্বপ্ন কতটুকু বাস্তবায়ন হবে বুঝে উঠতে পারছেন না। মৌরিন পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতেও গোল্ডেন এপ্লাস পেয়েছে।
নাজমুল হুদাঃ মৌলভীবাজারের রাজনগর আইডিয়েল হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তির্ণ হয়েছে নাজমুল। নাজমুলের বাবা ইব্রাহিম মিয়া বেইন স্টোকে মারাযান ২০১৪ সালে। এর পর থেকে অভাব অনুটনের মধ্যে চলতে তাকে তাদের সংসার। ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে নাজমুল তৃতীয়। বড় ভাই পিকলু আহমদের ছোট মুদির দোকানের আয় দিয়ে চলে তাদের পরিবার। বৃত্তির টাকায় চলত নাজমুলের লেখাপড়া। তার স্বপ্ন লেখাপড়া করে কম্পিউটার ইঞ্জিয়ার হওয়া। কিন্তু এই স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবায়ন হবে নাজমুল জানেনা। ইঞ্জিণিয়ার হতে দারিদ্রতাই তার প্রধান বাঁধা। নাজমুল সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগীতা পেলে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে মনে করছেন।
উমর ফারুকঃ মৌলভীবাজারের রাজনগর আইডিয়েল হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তির্ণ হয়েছে উমর। বাবা হিফজুর রহমান রাজনগর কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম। বাবার ইমামতির টাকা দিয়ে কোনো রকম চলে তাদের সংসার। তার বাড়ি উপজেলার কর্ণিগ্রাম। রাজনগরের একটি ভাড়াবাসায় থাকে তারা। ৪ ভাই বোনের মধ্যে উমর তৃতীয়। উমর লেখাপড়া করে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। সে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে গোল্ডেন এপ্লাস পেয়ে উত্তির্ণ হয়েছে।