এম.এ.এইচ. আলতাফঃ একটি জাতির সামগ্রিক উন্নতির মূলে পরিবহণ খাত চালিকা শক্তি (Blood Line of Nation) হিসেবে কাজ করে। সেটা যে আদতেই হোক উন্নয়নমুখী রাষ্ট্র বিনির্মানে চাই উন্নত পরিবহন। আর সে জন্য প্রথম প্রয়োজন উন্নত অবকাঠামো বিনির্মান এর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান। আমরা স্বাধীনতার ৪৭ তম বৎসরে পদার্পন করেছি, আমরা তলাবিহীন ঝুঁড়ি থেকে উন্নত জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি ‘ উন্নয়নের মহাসড়কে ভিশন ২০২১ এর পূর্বেই নানামূখী ঈর্ষনীয় উন্নয়ন হয়েছে সেটির জন্য বেসরকারী খাতের উদ্যোগতাদের সর্বাগ্রে অভিবাদন জানানো উচিত‘। বিশেষ করে RMG সেক্টরে অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্হা থেকে দেশকে সম্মাণজনক পর্ষায়ে নিতে পেরে ব্যাপক কর্মসংস্হানের দ্বার উম্মোচন করেছে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজস্ব অস্হিত্ব অক্ষূন্ন রাখার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
পরিবহণ খাতের উন্নতির কোন যাদুগরি পন্থা নেই; দরকার সহজ কথায় ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন। উদাহরণসরূপ হাইওয়ে চার লেন করাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক কর্ম সংস্হানের উম্মেষ ঘটেছে মাত্র। শিল্পাঞ্চল প্রসারিত হচ্ছে; হচ্ছে বিকেন্দ্রীকরণ। ঢাকা-চট্রগ্রাম কিংবা ঢাকা-সিলেট এর হাইওয়ে এলাকার প্রতি একটু নজর দিলেই এর বাস্তব প্রতিফলন প্রত্যক্ষ অবলোকন করা যায়। হালে পদ্মা সেতু নির্মাণাধীন অবস্হায় স্বপ্নিল ভবিষ্যতের বাস্তব প্রতিফলন অনুধাবন করা যায়। এখানে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রিত ভূমিকা নেই; উদ্যোক্তারা ময়মনসিংহ অজো পাড়া গাঁয়ে বিশাল রপ্তানীমুখী শিল্প, কিংবা হবিগঞ্জ, মৌলভী বাজার, ত্রিশাল, ছাতক, রাতারগুল, বিছনাকান্দি,জাফলং, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, তামাবিল, ভাদেপাশা বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিকে ক্রমাগত স্বউদ্যোগে অগ্রসর হচ্ছেন কিন্ত তাঁদের এই উদ্যোগকে ম্লান করে দিচ্ছে সার্বিক অবকাঠামো বিশেষ করে বেহাল রাস্তা-ঘাট আর ঢাকামুখী প্রশাসনিক ও ব্যাংকি সেক্টরের কেন্দ্রমুখী কার্যাদি।
তিলোত্তমা ঢাকাঃ বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ ঢাকা বিশদ অঞ্চল (Detailed Area Plan বা সংক্ষেপে DAP নিয়ে সরকার সংশ্লিষ্ট মহল, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর সুশীল নেতৃবৃন্ধ সোচ্চার ছিলেন; অজানা কারনে এখন তাঁরা নিরব ভূমিকা পালন করছেন। ঢাকা শহরের পরিবহণ নৈরাজ্য বন্ধ করা কিংবা প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এর মাধ্যমে সরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্হাপণাগুলোকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়া এর একমাত্র সমাধান। তাঁর অর্থ এই নয় যে, DAP থেকে সরে আসতে হবে কেননা ঢাকাকে বাঁচাতে হলে DAP এর বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
ঢাকার গণপরিবহণঃ অতীত অভিজ্ঞতা ও সাম্প্রতিক কিছু দূর্ঘটনার আলোকে এহেন অবস্হার বিহীত করা অতীব জরুরী। প্রথমত: আমি বলবো আমাদের গণ-সচেতণতার যথেষ্ট ঘাটতি পরিলক্ষিত আর দ্বিতীয়ত্ব প্রায় দু‘শো মতো পরিবহণ সংগঠন আছে যারা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই; যখন যে সরকার আসে তখন তাঁরা সুযোগ বুঝে সুবিধা নেয় আর যাত্রী নামক প্রাণী আজীবণ তাঁদের কাছে জিম্মি।ঢাকা শহরে গণপরিবহণ চাহিদা কতটা ব্যাপক তা শুধু ভূক্তভোগীরা জানেন; তারপরও জীবনপণ সংগ্রাম করে কার্যের তাগিদে জীবন বাজী রেখে মান্ধাত্বা আমলের তথাকথিত গণপরিবহণ ব্যবহার করতে বাধ্য; তাও যেমন দূর্লোভ। শুধু ঢাকা বলে সীমাবদ্ধ না রেখে এ দৃশ্য প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা শহর পর্ষন্ত এ্কইরূপ চিত্র পরিলক্ষিত হয়। উন্নয়নশীল দেশের আদলে রাস্তা-ঘাট উন্নয়নের সাথে সাথে দেশের অনগ্রসর অঞ্চলকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিল্প-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। ফলত: প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিল্প-বাণিজ্য প্রসার ঘটলে ঢাকা শহরমুখী মানুষের কর্মমুখী চাপ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে।
কাঙ্খিত সমধানঃ আমরা এখন ভিশন ২০৪১ এর স্বপ্ন দেখছি। আমাদেরকে ভাবতে হবে গণপরিহণ ব্যবস্হাকে ঢেলে সাজানো ও গণমুখীকরণ। আমরা যদি গণচীন, হালের থাইল্যান্ড, মালেশিয়া বা প্রতিবেশী ভারতের কথা একটু চিন্তা করি তাহলে এর সমাধান পেয়ে যাব। যেহেতু আমরা উৎপাদনকারী নই বিধায় আমদানীর উপর কিছুদিনের জন্য শুল্ক রেয়াত দিয়ে গণপরিবহণ ব্যবস্হায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারি। চাহিদার সাথে যোগানের সমন্বয় হবে, উঠে যাবে মান্ধাত্বা আমলের সিটি বাস নামক যন্ত্রণা; মহাসড়কে উন্নত প্রযুক্তির উৎকর্ষে শোভা পাবে আধুনিক গণপরিবহণ; আমার ক্ষুদ্র ধারণা থেকে বলছি সরকার যদি বিষয়টি সুবিবেচণা করেন মাত্র পাঁচ বছরে বাংলার গণপরিবহণ চিত্র পাল্টে যাবে; পূরাতন মান্ধাত্বা আমলের যান ডাম্পিং করতে হবে, থি-হুইলার নিরুৎসাহিত হবে, রিক্সা যাদুঘরে যাবে; উন্নয়নের মহাসড়কে নতুন এক উদাহরণ রচিত হবে।
গণসচেতণা ও পর্যাপ্ত পাকিং ব্যবস্হাঃ ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে সবার পূর্বে প্রয়োজন গণসচেতণতা। তারপর উন্নত দেশের আদলে দরকার বহুতল বিশিষ্ট কার র্পাকিং ব্যবস্হা, বিভিন্ন শপিং মল কিংবা ব্যস্ততম এলাকার পাশাপাশি অথবা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, হাইওয়ে পাশ্ববর্তী সুবিধাজনক স্হান প্রভৃতি জায়গায় ভাড়া মূল্যের সুবিধায় পার্কিং ব্যবস্হা গড়ে তোলা।
সামাজিক স্থর বিন্যাসে প্রাইভেট ও বাণিজ্যিক গাড়ীর ব্যবহারঃ আমরা শুধু গণপরিহণ নিয়ে পুরোপুরি সফলকাম হতে পারব না কেননা মানুষের শ্রেণী-পেশা, জীবন-মান, কার্ষপরিধি, সামাজিক স্তর বিন্যাস ইত্যকার বিবেচনায় প্রাইভেট কার বা জীপ এবং বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য কমার্শিয়াল পরিবহন যেমন ছোট-বড় পিকআপ, ভ্যান ইত্যাদি বর্তমানের ন্যায় আমদানী ও ব্যবহারের গুরুত্ব বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে অতীব জরুরী বিবেচ্য যে, উন্নত প্রযুক্তির উৎকর্ষে উৎপাদিত হাইব্রিড গাড়ীর অশ্বশক্তি বিবেচনা করে বর্তমান সাংঘর্ষিক হারমোনাইজ কোড (H.S. Code) এর সমন্বয় সাধন করা যা ন্যায়তার নিরিখে অত্যন্ত জরুরী বিবেচ্য কেননা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় জাপান তথা উন্নত দেশগুলো ফসিল অয়েলযুক্ত গাড়ীগুলো ক্রমান্বয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দিচ্ছে।
সামগ্রিক ভাবে পর্ষালোচনা-পর্ষবেক্ষণ করলে একটি উন্নত ও সমন্বিত পরিবহণ ব্যবস্হা গড়ে তোলা ছাড়া একটি উদীয়মান জাতির বহুমুখী উন্নয়ন আশা করা যায় না কেননা ব্যাপক অর্থে পরিবহণ খাতের উন্নতি ছাড়া শিল্প-বাণিজ্য,শিক্ষা-স্বাস্হ্যসেবা, সমন্বিত গণপরিহণ ব্যবস্হা সফলকাম হওয়া সম্ভব নয়। অতএব, অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন ও সংস্কারের দিকে সরকারের নজর দেয়া একান্ত জরুরী।
লেখক এম.এ.এইচ. আলতাফঃ প্রেসিডেন্ট, আরডিও, প্রকাশক: প্রবাসী কন্ঠ, অতিথি কলাম লেখক-জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়া, আজীবন সদস্য: জালালাবাদ ডিজায়েবেল্ড রিহ্যাব সেন্টার ও হাসপাতাল, জালালাবাদ এসোসিয়েশন, ঢাকা্, সাবেক কার্ষনির্বাহী সদস্য, বারভিডা।।