মাহবুবুর রব চৌধুরী, টরন্টোঃ ” বাংলাদেশী, বাংলাভাষী মুসলমানরা বিশ্বের অন্যান্য মুসলমানদের থেকে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলেছে। মূল বিষয়টি কৃষ্টি ও কালচার নিয়ে।
আরব, ইরান, টার্কি, কসোভো, আলবেনিয়া, চেসনিয়া, বসনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া বা সোমালিয়ার মুসলমানদের এই বিষয়ে এক্সট্রা ভাবে ভাবিত হতে হয় না।
*কারণ ঐতিহাসিক*
বাংলাদেশী মুসলমানেরা ভারতের হাজার বছরের ইসলাম ও মুসলিম শাসনের ইতিহাস ও ঐতিহ্যর একটি বড় অংশ ধারণ করে। বাংলাদেশের নব দ্বীক্ষিত মুসলমান ইসলাম গ্রহণের সাথে তখনকার আরব, ইরান, তুর্কি মুসলিম শাসক দের চাল -চলন, কৃষ্টি ও কালচার কে নিজেদের বলেই ভাবত। ওই সময় এটা ছিল স্বাভাবিক। দেশের আম, জাম, লিচু, ছাগল, মুরগি, শালিক, পদ্ম ফুল থেকে খেজুর, খুরমা, পেস্তা, উঠ, দুম্বা, বুলবুল, গোলাপ কেই তখন বেশি আপন মনে হত।
* ক্ষমতা হারানোর পর ইংরেজ আমলে সর্ব ভারতীয় মুসলিম সেন্টিমেন্ট এর সাথে বাংলাদেশী মুসলমানেরাও ইংরেজি বর্জন সহ অনেক কিছু থেকেই নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়ে ছিল। শিক্ষা বঞ্চিত, ক্ষমতা হারা মুসলিম সর্ব দিকে পিছিয়ে গেল। নুতন বাস্তবতায় নিজেকে পুনঃ গঠনে এগিয়ে না এসে পিছিয়ে পড়ল।
* এই সময় মুসলিম ধর্মীয় নেতা ওলামারা ঈমান-আমল টিকিয়ে রাখবার জন্য অনেক বড় অবদান রেখেছেন। যা কখনই অস্বীকার করা যাবেনা। তাদের ওই ভূমিকা ত্যাগ-মুসলিম স্বাতন্ত্রতা ও স্বাধীনতার ভীত রচনা করেছে। আজকের স্বাধীন বাংলাদেশর মূল অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। একই সাথে একই সময় অনেক অপরিপক্ষ ধর্মীয় নেতার অজ্ঞতার খেসারত আজও আমাদের দিতে হচ্ছে।
* বাংলাভাষী জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ মুসলমান হলেও ইংরেজ আমল থেকে মুসলমানেরা অন্যান্য সব বিষয়ের সাথে শিক্ষা, কৃষ্টি, কালচার এবং অর্থনীতিতে অনেক পথ পিছিয়ে পড়ে। অসহযোগিতা এবং নেতিবাচক মনভাব কাটিয়ে মূল স্রোতে ফিরে এসে মুসলমান নিজেকে প্রতিযোগী, প্রতিদ্বন্দ্বী হিন্দু জনগুষ্টি থেকে নিজেদেরকে অনেক টা পিছনে দেখতে পায়। পরবর্তীতে অন্যান্য দিকে অনেকটা কভার করলেও – কালচারাল দিকের দুর্বলতা এখনও রয়েগেছে।
মূলত দুটি কারনে, নব শিক্ষিত মুসলিম সমাজ এর একটি বড় অংশ মুসলিম পরিচিতি কে তুলে ধরবার দায়িত্ব, কর্তব্য পালনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন নি। এটাকে গুরুত্ব প্রদানে ব্যর্থও হয়েছেন, যা হিন্দু সমাজের রাজা রামমোহন, বঙ্কিম চন্দ্র, রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় সঠিক ভাবে পালন করেছেন।
এক দিকে মুসলিম শিক্ষিত সমাজের বড় অংশের ভ্রান্তি বা বিভ্রান্তি অন্য দিকে মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের বড় অংশের রেনেসাঁ, আধুনিকতা সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং ভ্রান্তি মুসলমানকে পিছিয়ে রেখেছে। যা সমাজের সমতা, বুদ্ধি ভিত্তিক অগ্রসরতা এবং জাতি গঠনের কাজে সহায়ক হয়নি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আজ শত মাদ্রাসা করার চেয়ে একটি ইসলামি কালচারাল ভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা অতি জরুরি।
এই ভার্সিটি শিক্ষিত মুসলিম কে বিশ্বের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদি, আস্তিক, নাস্তিকদের সাথে নিজেদের মৌলিক পার্থক্যটা যেমন জানবে তেমনি আদমের সন্তান। বিশ্ব মানবতার প্রকৃত ইসলামী উদারতা, ভাতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হবে। যাদের উপর সাম্প্রদায়িকতা, ক্ষুদ্রতা, জঙ্গিবাদের মই ইসলামোফোবিয়ার অপবাদ আসবার কোন সুযোগ থাকবে না। শোভা যাত্রা হিন্দুয়ানী বলে মানুষ ও সমাজ থেকে লুকিয়ে থাকবেনা মুসলিম দের করণীয় টা কি? তাদের কৃষ্টি ও কালচার এবং শোভাযাত্রার রূপ রেখাটা কি? সে বিষয়ে ও পরিষ্কার ধারণা দেবে। কর্ম না করে ধর্মের নামে সব কিছুতে বাগড়া দেওয়ার কালচার চিরতরে বন্ধ করতে হবে। তার জন্য চাই জ্ঞান। প্রস্তাবিত এই বিশ্ববিদ্যালয় সেই জ্ঞান নিয়ে চর্চা করবে, অর্জন করবে, গবেষণা করবে।