রমজান মাস এবং আমার ভালোলাগা কিছু কথা

“আমি পারবোনা, এটা কিভাবে সম্ভব, এত সময় না খেয়ে থাকা”,

“আরে আমি তো একেবারেই মরেই যাবো, এভাবে না খেয়ে থাকলে”

“তুমি কিভাবে পার এটা, এটা তো একেবারেই অসম্ভব”

আমার এক ক্লায়েন্ট জিজ্ঞাসা করে, “মনে হয় তোমরা তরল জাতীয় খাবার খাও?”, আমি বললাম না, কোন কিছুই খাইতে পারিনা। তাহলে কিভাবে সম্ভব। উপরের কথাগুলো আমার কলিগ এবং ক্লায়েন্ট এর সাথে কথা বার্তার কিছু অংশ, যখন আমি তাদের বলি যে, আমাদের এই রমজান মাসে প্রায় ১৭ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়।

সবাই শুনে খুব অবাক হয়, আবার রোজা সম্পর্কে অনেকেরই ভিন্ন ধারনাও শুনতে পাই। আমি আগেই বলেছি, আমি যেখানে কাজ করি সেখানে বেশিরভাগই সাদা এবং অমুসলিম, তাই প্রতিনিয়ত রমজান মাস আসলেই প্রতিদিন অন্তত ২/৩ জনকে ব্যাখ্যা করতে হয় রোজা সম্পর্কে।

তবে সবাই যেটা শুনে অভিভূত হয় সেটা হল, রোজার রাখার কারন/উদ্দেশ্য যখন বলি। আমি এভাবে বলি, রোজা রাখি মুলত সেই অনুভূতিটা পাওয়ার জন্য, পৃথিবীতে যারা খেতে পারেনা তাদের মানসিক ও শারিরিক অবস্থা বুঝার জন্য। আমরা তো তারপরও খেতে পারি ১৭ ঘণ্টা পর কিন্ত পৃথিবীর অনেকেরই সেই সুযোগ হয়না, ২য় কারন, রমজান মাসে যেটুকু সঞ্চয় করা সম্ভব হয়, সেটা আমরা যাদের খাওয়া নাই বা গরিব তাদের দান করি (খুবই খুশি হয় এটা শোনার পর), ৩য় কারন, এটা একটা বিশ্বাস যেখানে আমি যদি খাই, তবে কেউ কিছু বলবেনা বা দেখেনা কিন্ত তারপর কিছু খাইনা, কতটা খাটি বিশ্বাস থাকলে এটা করা সম্ভব হয় তা দেখা এবং শেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ কারন হল, এই রমজান মাস আমাদের মন মানসিকতার পরিশুদ্ধতার মাস। সকল খারাপ কার্যকলাপ দূরে ঠেলে আমাদের বাকি জীবন শুদ্ধ পথে চলতে ব্রত হওয়া।

আমি জানিনা, আমার কথাগুলো কতটুকু ঠিক আছে, তবে পরিস্কার দেখতে পাই,তাদের মুখের একটা অকৃতিম ভালোলাগা। আবার আমার কাছে মনে হয়, আমি আবার বাড়িয়ে বলছিনা তো?, কারন রমজান মাস আসলে আমি এর বিপরীত চিত্র দেখতে পাই এই সমাজে। রোজার মাসে আমাদের এত খরচ হয় যে, মনে হয়না কারও সঞ্চয় হয়, বরঞ্চ টাকা ধার করতে হয়, অনেক জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাওয়াতে । আবার এই মাসে আমরা এত খাই যে (যাক আর বললাম না)। কিছু অসাধু ব্যক্তি আবার এই সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকে লাভবান হওয়ার জন্য। আমার সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন দেখি, কিছু মানুষ এই রমজান মাসকে নিজের বড়লোকি জাহির করার জন্য না লাগলেও অনেক অপচয় করে।

আপনারা ভাবতে পারেন, আমি আবার কে এইসব বলার? আসলে আমার কাউকে আঘাত করার জন্য এই পোস্ট না, আমার অনুরোধ শুধু একটু চেষ্টা করা দেখি না। কয়েকদিন আগে দেখলাম কানাডাতে এক অমুসলিম এম পি রোজার উপকারিতা জেনে রোজা রাখছে কয়েক বছর ধরে, আর সেই সঞ্চয়ের টাকা Food Bank এ দান করছেন, জেনে খুব ভাল লাগলো, আবার আমাদের প্রাইম মিনিস্টার তো একেবারে বস এদিক দিয়ে।

তাই আসুন রমজানের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে অন্যদের জানাই তবে নিজেরা একটা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে..

লেখাটি গত বছরের, কিছু বিষয় যুক্ত করে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। ভালো লাগবে মতামত পেলে।

সাইফুল আলম
টরেন্টো থেকে

 

শেয়ার করুন