জালালাবাদ ডেস্ক:
এ পেজ থেকে পোস্ট দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী
‘স্যার আমাকে হঠাৎ করে প্রচণ্ড জোরে জড়িয়ে ধরেন এবং খুবই জোরে চেপে ধরেন। এরপর স্যার আমাকে আমার হাতটি টেনে ধরে নিয়ে যান তার কক্ষে, কক্ষে নিয়ে গিয়ে ছোট্ট একটি বই আমার হাতের উপরে রেখে বলেন, আপনি প্রতিজ্ঞা করেন, আপনি এই কথা কাউকেই বলবেন না। বললে কিন্তু আপনারই সমস্যা হবে, সবাই আপনাকে ভুল বুঝবে।’ এভাবেই ফেসবুক টাইমলাইনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের এক ছাত্রী বিভাগের শিক্ষক হালিম প্রামাণিক সম্রাটের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
হালিম প্রামানিক সম্রাট (ফাইল ছবি)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করার অপরাধে গত ২৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৭তম সিন্ডিকেট সভায় বিভাগটির শিক্ষক হালিম প্রামাণিক সম্রাটকে তিরস্কারসহ দুই বছরের জন্য পদোন্নতি পিছিয়ে দেওয়া হয়। অপরাধের সঙ্গে ওই শাস্তি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় এবং এমন শাস্তির প্রতিবাদে গত ৩০ এপ্রিল ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী আবার ঘটনাটি তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন। একইদিন নতুন করে আরও একাধিক ছাত্রী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ জানালে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হালিম প্রামাণিক সম্রাটকে সাময়িক বরখাস্ত করে নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির ঘটনা মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে ছদ্মনামে খোলা ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাসে বর্ণনা করেন। এরপর ওই ছাত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের একাধিকবার কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এমন জঘন্য লোকের আরও কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। এভাবে পার পেয়ে গেলে আগামীতে আরও অনেক নারী তার হাতে নির্যাতনের শিকার হবে। আমি তার উপযুক্ত বিচার চাই।’
তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো–
দিনটি ছিল ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং। বিকেল ৫টা ২৫। সেদিন আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সোমা মোমতাজ ম্যাম এর ক্লাস ছিল। পরে জানতে পারি যে, ক্লাসটি শেষ হয়েছিল আনুমানিক ৫টা ১৫ অথবা ৫টা ২০ এ। আব্দুল হালিম প্রামাণিক স্যার আমাকে ফোন করেন ৫টা ২৫ এ। আমার নাট্যকলা বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও শিক্ষক আব্দুল হালিম প্রামাণিক (সম্রাট) আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে বলেন যে, ‘আপনাদের ক্লাস হচ্ছে, আপনি জানেন?’ আমি বললাম, ‘জ্বী স্যার, জানি। কিন্তু আমি অসুস্থ, তাই আর ক্লাসে আসতে পারিনি।’ তারপর উনি আমাকে ফোনে জোর করে বলেন যে, ‘আপনি আসেন, এখনো আপনাদের ক্লাস হচ্ছে।’ আমি বললাম, ‘এখন ক্লাসে গেলে তো আমাকে ম্যাম ক্লাসে ঢুকতে দিবে না।’ উনি বললেন, ‘দিবে, আসেন আপনি।’ তারপর আমি বললাম, ‘আচ্ছা, আমি আসছি।’ তারপর আমি বাসা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা হই। আমি তখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছেই থাকতাম, তাই তাড়াতাড়িই পৌঁছে যাই। বিশ্ববিদ্যালয় এর মেইন গেট দিয়ে ঢোকার পর আমি শান্ত চত্বরের সামনের ভাস্কর্যের কাছেই আমার সহপাঠীদের দেখতে পাই। তারা ক্লাস শেষ করে চলে যাচ্ছে, তারা আমাকে দেখে বলে, ‘কই যাচ্ছিস, ক্লাস তো শেষ’। তখন আমি বলি, ‘সম্রাট স্যার আমাকে আসতে বলেছে, তোরা একটু চল আমার সাথে।’ সারাদিন ক্লাস করে স্বাভাবিকভাবেই ওরা খুব ক্লান্ত ছিল, তাই আমার সঙ্গে কেউই আসতে চায়নি। তারপর আমি বিভাগে যাওয়ার পর দেখি সম্রাট প্রামাণিক স্যার তার চেয়ারম্যান কক্ষেই বসে আছেন এবং আমাকে তার কক্ষে ঢুকে বসতে বলেন। তারপর আমি গিয়ে বসলাম। আমি তখন ওখানে বিভাগের কর্মচারী সোহেল ভাইকেও দেখতে পাই। আমি যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সোহেল ভাই সম্রাট প্রামাণিক স্যারকে বলে যে, ‘স্যার আমি বাইরে থেকে আসতেছি।’ সোহেল আরও বলে যে, সে বাইরে যাবে আর আসবে। কিন্তু সোহেল আর শেষ পর্যন্ত বিভাগে আসেনি।
তারপর স্যার আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে টেবিলের ওপরে রাখা অনেক কাগজপত্র নাড়ানাড়ি শুরু করলেন এবং বলতে লাগলেন যে, ‘আপনার উপস্থিতি ৬০% এর কম, আপনি পরীক্ষা দিতে পারবেন না, আপনি একটা দরখাস্ত দিয়েন, আমি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব। আপনি মিথ্যা কথা বলে দরখাস্ত লিখবেন, যা গ্রহণযোগ্য হতে হবে।’ তারপর বললো, ‘আচ্ছা বলেন, আপনার কোন ক্লাসটি (কোর্স) সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে?’ আমি বললাম, ‘আমার কোন ক্লাসই তো খারাপ লাগে না স্যার।’ স্যার বললেন, ‘আমি জানি, আপনি বলেন, আপনার মুখ থেকে আমি শুনতে চাই।’ আমি বললাম, ‘না স্যার, আমার খারাপ লাগে না।’ সে আমাকে বারবার ফোর্স করে যে আমার থেকে শুনবেই। তখন আমি বলি, ‘স্যার, ইম্প্রোভাইজেশন কোর্সটা আমার প্রথম থেকেই আনইজি ফিল হয়।’ তারপর স্যার বললেন, ‘আপনার কি করলে এই কোর্সটা ভালো লাগবে, আমি সেটাই করবো; ইম্প্রোভাইজেশন কোর্স শিক্ষক আমি, আপনি দাঁড়ান, আপনাদের যেভাবে শিখিয়েছি সেভাবে বৃদ্ধের দেহভঙ্গি করেন।’ আমি বললাম, ‘এখন না স্যার, ক্লাসে করে দেখাবো।’ উনি বললেন, ‘ভুল হলে হবে, করে দেখান।’ আমি এই কথা শোনার পর উঠে দাঁড়াই, তারপর বৃদ্ধের মতো দেহভঙ্গি করার চেষ্টা করি। উনি বললেন, ‘আপনি ঠিকমতো প্র্যাকটিস করেন না, ভালোভাবে শিখতে হবে, আরও বেশি প্র্যাকটিস করা দরকার।’ তারপর আরও বিভিন্ন কথাবার্তা বলে চেয়ারে বসতে বলেন।
তারপর এসব কথা বলাবলির মধ্যেই শব্দ শোনা যায় কারা যেন ওপর তলা থেকে নামছে। তখন সুমন স্যার (আমাদের ইউটিলিটি বিল্ডিংয়ের তিন তলায় অবস্থিত চারুকলা বিভাগের শিক্ষক) সম্রাট স্যারের কক্ষের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় এবং স্যারকে বলে, ‘স্যার,আপনাদের ওয়াশরুমটা কি ইউজ করা যাবে।’ তিনি বললেন যে, কিছু শিক্ষার্থীও নাকি ওয়াশরুম ইউজ করবে। তারপর সুমন স্যার কক্ষে এসে সম্রাট স্যারকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইনি কি আপনাদের নতুন ম্যাডাম?’ স্যার বললেন, ‘না ও আমাদের বিভাগের স্টুডেন্ট, ওর কাগজপত্রে ঝামেলা আছে।’ তারপরেই সঙ্গে সঙ্গে সুমন স্যারকে দেখিয়ে বলেন, ‘আপনি দাঁড়াচ্ছেন না কেন, ইনি একজন শিক্ষক।’ তারপরে আমি দাঁড়াই, আমি আসলে তখন বুঝে উঠতে পারিনি। তারপর সম্রাট স্যার বলে উঠলেন, ‘চলেন স্যার, চা খাই।’ আর আমাকে বললেন যে, বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে। আমি বের হয়ে আমাদের বিভাগের সামনে বসার জায়গায় গিয়ে বসলাম। তখন আমার আশপাশেই চারুকলার সেই কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল (তদন্ত কমিটিকে তারা জানিয়েছিল যে, আমাকে নাকি কেউ দেখেই নাই)। আমি এত কম সময়ের মধ্যে কারও চেহারাই পরিষ্কার মনে রাখতে পারিনি, কারণ আমি তাদের তেমন চিনিও না, আবার এই দিক দিয়ে সম্রাট স্যার ৩০-৪০ সেকেন্ড পরেই বাইরে এসে আমাকে বললেন যে, ‘আপনি আপনার ক্লাসরুমে গিয়ে বসেন।’ তখন আমি ওনাকে অভিভাবক এর মতোই সম্মান করতাম, উনি যে আমাকে নিপীড়ন করবেন সেটা আমি ভাবতেই পারিনি, এটা জানা থাকলে আমি ক্লাসরুমে গিয়ে একা বসতাম না। যাইহোক, তারপর আমি ক্লাসরুমে গিয়ে বসি। খুবই বিরক্ত লাগছিল আমার কারণ, তিনি আমাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছিলেন। প্রায় ৬-৭ মিনিট পর সম্ভবত সেই সুমন স্যারকে (তদন্ত কমিটিকে তিনিও আমাকে দেখেননি বলে মত দেন) বিদায় দিয়ে ক্লাসরুমে আসেন। এরপর সম্রাট স্যার আমাকে বললেন, ‘এখানে আপনি আমি ছাড়া আর কেউ নেই।’ আমি বললাম, ‘স্যার আপনি এই কথা বলছেন কেন?’ তিনি বললেন, ‘আপনার ওড়নাটা কোমরে বাঁধেন, আপনি আমি ছাড়া এখানে আর কেউ নেই।’ কোমরে ওড়না বাঁধার পর আবারও বললেন যে, ‘আপনি আমি ছাড়া তো আর কেউ নেই, তাই না? আপনি আমাকে বুড়ো মানুষের ইম্প্রোভাইজেশনটা আবার করে দেখান।’ আমি আবার বলি যে, ‘স্যার আমি ক্লাসে করে দেখাবো।’ তিনি আমাকে বলেন যে আমার ভুল হলে সমস্যা নাই। আমি চেষ্টা করলাম। দেখি যে তিনি কিছুই বললেন না, ভুল নাকি ঠিক হলো কিছুই জানালেন না। আমি বললাম, ‘স্যার আপনি একবার করে দেখান।’ উনি বললেন, ‘আমি করে দেখাবো না, আপনিই করেন।’ তারপর তিনি ক্লাসরুমের দরজাটি চাপিয়ে দেন, অল্প একটু খোলা অবস্থায় থাকে। উনি আমার দিকে আসতে আসতে আবার বললেন, ‘আপনি আমি ছাড়া আর কেউ নেই।’ তখনই আমার মনে প্রথম খটকা লাগে যে, কি ব্যাপার, স্যার বারবার কেন একই কথা বলছেন? তারপর তিনি আমার কাছে এসে আমার ডান হাতটি টান দিয়ে নিয়ে ওনার কোমরে ধরিয়ে দেন ওনার হাত দিয়ে, বাম হাত উনার ঘাড়ে ধরিয়ে দেন। আমি বলি, ‘স্যার, ক্লাসে যেভাবে সবাইকে শেখান, সেভাবে শেখান, এভাবে না।’ তারপর আমাকে বলেন যে, আরও কাছে আসতে এবং বলতে বলতে নিজেই কাছে আসতে থাকেন। আর আমি তখন বারবার বলছিলাম, ‘স্যার, আপনি ক্লাসেই শিখায়েন, ক্লাসেই শিখায়েন…….!’ আমি একথা বলতে বলতেই স্যার আমাকে হঠাৎ করে প্রচণ্ডভাবে জোর দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে এবং খুবই জোরে চেপে ধরে।
ঠিক তখনই স্যার বুঝতে পারে যে, ডিপার্টমেন্টে কেউ একজন এসেছে। ঠিক তখনই আমি নিজেকে রক্ষার জন্যে স্যারকে ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দেই। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। স্যার দরজা পুরোটা খুলে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে কাকে যেন বললেন, ‘তোমার বাবা তো নিচে গেছে।’ তারপর আমি সম্রাট স্যারকে অতিক্রম করে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি এবং ক্লাসের একটু বাইরে দরজার ওপাশে রাখা স্যান্ডেল পায়ে দেওয়া শুরু করি। তখন আমার মনে হচ্ছিল আমি পাথর হয়ে যাচ্ছি, আমি নড়তে পারছিলাম না, পুরোটা শরীর মারাত্মক ভারী হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছিল। শুধু একটা কথাই ভাবছিলাম যে কি হয়ে গেল আমার সঙ্গে। তখনই স্যার আমাকে আমার হাতটি টেনে ধরে নিয়ে যায় তার কক্ষে, কক্ষে নিয়ে গিয়ে ছোট্ট একটি বই আমার হাতের ওপরে রেখে বলেন, ‘আপনি প্রতিজ্ঞা করেন, আপনি এই কথা কাউকেই বলবেন না। বললে কিন্তু আপনারই সমস্যা হবে, সবাই আপনাকে ভুল বুঝবে।’ তারপর আরও বলেন যে, ‘আমি আপনার সঙ্গে ফ্রি হওয়ার জন্যে এরকম করেছি।’ ওই ঘটনা ঘটার পর থেকে আমি একটি শব্দও উচ্চারণ করতে পারিনি, আমার চোখ শুধু ছলছল করছিল। ভাবছিলাম আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি না কেন? কিন্তু আমার পা আগাচ্ছিল না। কষ্টের ভারে আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম। তারপর আমি রুম থেকে বের হই, সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করি। সম্রাট স্যার তখন খুবই তাড়াহুড়ো করে আমাদের ডিপার্টমেন্টের কেচিগেটে তালা দিলেন। দ্রুতই সিঁড়িতে আমার সঙ্গে হাঁটতে লাগলেন। আমি খুব দ্রুতই নামছিলাম। তারপর আমার পেছনে আসতে আসতে বলছিলেন, ‘আপনি একথা কাউকে বলবেন না, আমি শুধু আপনার সঙ্গে ফ্রি হওয়ার জন্যেই এমন করেছি। আপনি যদি এ কথা কাউকে বলেন, তাহলে সবাই আপনাকেই অবিশ্বাস করবে। আপনার ক্ষতি হবে।’ আমার চোখে কান্না দেখে বলেন যে, ‘আপনার চোখের পানি মুছে ফেলেন, নাহলে অনেকেই এখানে অন্য কিছু মনে করবে।’ তখন স্যার কথাগুলো বলছিলেন সায়েন্স ফ্যাকাল্টির সামনের রাস্তায়। আমি পুরোটা রাস্তাই কান্না করতে থাকি, তিনি আমাকে বারবারই তার সেই একই কথাগুলো বোঝাতে চেষ্টা করছিলেন, খুবই সুন্দর, ভদ্রভাবে, গুছিয়ে গুছিয়ে!!! তখন আনুমানিক ৬টা ৪৫ এর মধ্যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে বের হই। আমি বাসায় ফিরি, বাসায় এসে বিছানাতেই বসে পড়ি, আর খালি ভাবছিলাম কী হলো? কেন হলো? আর আমি এত বোকা কেন? কেন আমি ডিপার্টমেন্টে গেলাম? কেন স্যারের কথ শুনলাম? আরো কত কী ভাবতে ভাবতে আমি মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। আর তখনই প্রায় ৫ মিনিটের মধ্যেই স্যার আবার আমাকে ফোন দেয়। আমি বুঝতে পারছিলাম না ফোনটা কি রিসিভ করবো নাকি করবো না। খুব ঘেন্না লাগছিল। তারপর ভাবলাম যে, যে আমার সঙ্গে এত জঘন্য আর বাজে আচরণ করেছে, দেখি সে এখন কী বলতে চায়। ফোন ধরার পর অনেকক্ষণ হ্যালো হ্যালো করতে থাকে কিন্তু আমি কোনও কথা বলি না, চুপ করেই ছিলাম। আর তিনি বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন যে, ‘আপনি ভালোভাবে পৌঁছাইছেন তো?’ আমি একসময় শুধু একটি শব্দ করলাম। তা হলো ‘হ্যাঁ’। তারপর তিনি খুব ভালোভাবে, আমার মনে হলো আমাকে ম্যানেজ করে ফেলেছেন ভেবে আমাকে বলেছিলেন, ‘ওকে বাই বাই।’ তারপর আমি আবার হতাশা আর অন্ধকারের মধ্যে ডুবে গেলাম। আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না যে তখন আমি কী পরিস্থিতি অতিক্রম করেছি। আজও আমার কান্না চলে আসে, আজও মনে পড়লে ভয়ে আঁতকে উঠি।
তারপর আমি একসময় ভাবলাম যে, ভিসি স্যারকে সব জানাবো। পরদিন দুপুরের দিকে আমি সম্রাট স্যারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানাই।
তারপর কালক্রমে নানা রকমের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর, দুটি তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হওয়ার পর আমি যে বিচার পাই, মনে হচ্ছে যেন, সম্রাট স্যারকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে!!! যার শিক্ষক থাকার যোগ্যতা নাই, তার পদোন্নতিতে ২ বছরের ‘বিলম্ব’ নামক শাস্তিটি চরম হতাশার এবং হাস্যকর। আমি ভেবে পাই না যে এই রকম গুরুতর বিষয় নিয়ে কীভাবে এমন ‘বিচার’ করে তারা। আমি চাই এমন শিক্ষক নামের ‘মুখোশধারী’ কলংক যেন আর কোনও ছাত্রীর সঙ্গে এমন করতে না পারে। সে যেন আর কোনও শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করতে না পারে। সে যদি দোষ না করতোই তাহলে তো আমাদের বাড়িতে মিটমাট করার জন্যে লোক পাঠাতো না। শুধু আমার জন্য না, আমি চাই ভবিষ্যতে এমন যেন কেউ করতে না পারে। আমি শুধু তার যোগ্য শাস্তি চাই!!!’
অভিযুক্ত শিক্ষক হালিম প্রামাণিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা তদন্ত করেছে, সেই কমিটি তদন্তে কি পেয়েছে না পেয়েছে সেটার রিপোর্ট আমি নিজেও এখনও জানি না। তাছাড়া তদন্ত চলাকালীন আমার শুনানি হয়েছে, সেখানেই যা বলার বলেছি। শুনেছি নতুন করে বিষয়টি আবার তদন্ত হবে। আমি পত্রিকার মাধ্যমেই জেনেছি। রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত আমার কিছু বলার নেই। তাছাড়া ফেসবুকে কে কি লিখেছে সেটাও আমি জানি না, সে ব্যাপারে আমার কিছু বলারও নেই।’
সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন: