আদিত্য রিমন
কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে দুই ধরনের মতামত রয়েছে দলটির নেতাদের মধ্যে। বিএনপির নেতাদের একটি অংশ মনে করেন, এখনই কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে। আরেক অংশের মত, চলমান নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দলকে আরও শক্তিশালী করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা দেওয়া পর কঠোর আন্দোলনে যাওয়া উচিত। কারণ এর আগে কঠোর আন্দোলনে নামলে সরকারের হামলা- মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে দলের নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (৪ মে) সন্ধ্যায় বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির এক যৌথ সভায় নেতাদের বক্তব্যে এসব মতামত উঠে আসে। বিকাল সাড়ে ৫টায় দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সবাই একমত হয়েছে রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন হচ্ছে না। তাকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে। তবে এ কঠোর আন্দোলনে শুরু করতে হবে ঈদের পরে। রমজানের মধ্যে সাংগঠনিক কর্মসূচি দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা, ইউনিয়নে ইফতারের আগে নেতাকর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভা করা যেতে পারে। এরপর ইফতার মাহফিল। এতে করে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়বে।
বৈঠকে উপস্থিত স্থায়ী কমিটির নেতাদের উদ্দেশ্য করে একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আপনার কর্মসূচি দেন। আমরা আন্দোলনে যাবো। প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবো। কারণ কঠোর আন্দোলন ছাড়া নেত্রীকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। তবে অন্য নেতারা ঈদের পরে আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষে। তারা মনে করেন, রমজানে দলকে সংগঠিত করে ঈদের পরে আন্দোলন করা ঠিক হবে। আর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনে নামতে হবে। তাহলে আন্দোলনের সফল হবে এবং এর ফলাফল নিজেদের ঘরে যাবে। কারণ তফসিল ঘোষণার পর সরকার চাইলেও আন্দোলন দমন করতে পারবে না। বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বাংলা ট্রিবিউন বলেন, ‘আমরা সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। সেখানে খালেদা জিয়ার মুক্তি, আগামীতে দলের আন্দোলন, নির্বাচনের বিষয় উঠে এসেছে। আমরা মনে করি সরকার রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন আটকে রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। তবে কখন কঠোর আন্দোলনে করতে হবে তা সময়ই বলে দেবে।’
প্রায় ২ ঘণ্টা শেষে সন্ধ্যা ৭টায় এ বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এছাড়া সভায় নেতারা গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা গত কয়েকদিন দুই সিটির নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, ভোটারেরা যদি ভোট দিতে পারে তাহলে নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীই জয়লাভ করবে।’
বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তি তার অসুস্থতা এবং চলমান আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া বৈঠকে নেতারা সিটি নির্বাচনে পুলিশের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বিভিন্ন সভা- সমাবেশে তুলে ধরারও পরামর্শ দিয়েছে।
সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামীতে দলের করণীয় নিয়ে দলের নেতারা তাদের মতামত দিয়েছে। আজকে আমাদের দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর যৌথ সভা হয়েছে। সেখানে দলের আগামী দিনের করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামীতে গণতন্ত্র উদ্ধারে কীভাবে বিএনপির কাজ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’ সভায় বিশেষ করে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও তার মুক্তি বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। একইসঙ্গে খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে সভায়।
সা/২০১৮