মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
ররিবার থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সৃষ্ট ঝড় তুফানে মৌলভীবাজার জেলা সদর ও শ্রীমঙ্গল এবং কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পাহাড়ি এলাকায় ৩৩ হাজার কেভি প্রধান বিদ্যুৎ লাইনের উপর গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। এতে ঝড়-তুফানে জেলার কয়েকশ বাড়িঘর বিধস্ত হয়। তবে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে তালিকা করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ধনেশ্রী, রায়পুর, কুলাউড়া রোড, একাটুনা বাজার, বিশ্বম্বরপুর, কালেঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে ১৫-২০ ঘন্টা ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল। মৌলভীবাজার শহরের কোর্ট রোডস্থ জেলা জামে মসজিদের পাশে ৪টি বড় জাম গাছ। জেলা প্রশাসকের বাংলোর দেয়ালের ভেতরের কৃষ্ণচুড়া গাছ। ম্যাজিস্ট্রেট কলোনীর ভেতরের সেগুন গাছ। শহরের বনবিথী এলাকায় টিনের ঘর, কালেঙ্গা ও মোকামবাজার এলাকায় টিনের চাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
মৌলভীবাজার বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) তাসনীম আলম জানান, ‘কাল বৈশাখী ঝড়ে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ৩৩ কেভির দীর্ঘ লাইনের ১২/১৫ স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও গাছ কেটে সরানো হয়েছে আবার কোথাও কাজ চলছে। গাছপালা সরানো ও লাইন মেরামতের পর বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় দেওয়া হয়।’
এদিকে, প্রায় ২৫ ঘন্টা ধরে কমলগঞ্জ উপজেলা বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়ে। এতে চা কারখানায় চা উৎপাদনে বিঘœ ঘটে।
মঙ্গলবার সকালে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে পাহাড়ি এলাকায় একটি বড় গাছ ভেঙ্গে ৩৩ হাজার কেভি প্রধান বিদ্যুৎ লাইনের উপর পড়ে। পরে বৃষ্টি থামার পর বিদ্যুৎকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কেটে সরিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করে বিকাল ৫টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়। এ সময়ে চা বাগানে কারখানা সমুহে চায়ের উৎপাদনে বিঘœ ঘটে এবং ব্যবসা বাণিজ্য ও বিভিন্ন ছোট ছোট কারখানা মালিকরা ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
তাছাড়া লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দুই দফা গাছ পড়ে ৯ ঘন্টা সারা দেশের সাথে সিলেটের ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। একই সাথে লাউয়াছড়া পাকা সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে ১২/১৫ ঘন্টা বন্ধ ছিলো শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জ সড়কপথ।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের এজিএম (কম) গোলাম ফারুক বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি এলাকায় ঝড় বৃষ্টির সময় একটি বড় গাছ ভেঙ্গে পড়ে বৈদ্যুতিক লাইনের ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত লাইন সংস্কার করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে ৫ ঘন্টা সময় লাগে। তিনি আরও বলেন, এর আগে রবিবার রাতে কাল বৈশাখী ঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে বৈদ্যুতিক লাইনেরও ক্ষতি হয়। এতে রবিবার রাত ১০টা থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। আবার মঙ্গলবার রাত থেকে ঝড়-তুফানে মাগুরছড়া এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ে প্রায় বেশ কয়েক স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে যায়।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোবারক হোসেন সরকার বলেন,‘মঙ্গলবার সকালের ঝড় বৃষ্টির সময় ও রবিবার -সোমবার রাতের বৈশাখী ঝড়ে বৈদ্যুতিক লাইনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলার চা বাগান ও হাওর এলাকায় অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর বিধস্ত হয়েছে।বিশেষ করে মির্জাপুর ইউনিয়ন, সিন্দুরখান ইউনিয়ন ও কালাপুর ইউনিয়ন,কালিঘাট ইউনিয়নের এলাকায় বাড়ি-ঘর বেশি বিধস্ত হয়। এতে বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।তবে মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়-তুফানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব জেলা প্রসাশন তালিকা করছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুুল হান্নান ও আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন এবং মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু জানান, ‘কালবৈশাখী ঝড় ও অব্যাহত ভারী বর্ষণে ইউনিয়নের বাড়ী-ঘর বিধস্ত হয়েছে। কিছুটা ফসলেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো.আছাদুজ্জামান বলেন,দুইটি উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে। আশি করি ২/১ দিনের হিসাব দিতে পারবো।’