ব্যবসায়ী শহিব হত্যাকান্ড রিমান্ডে প্রধান আসামীর স্বীকারোক্তি হত্যায় জড়িত ৩ জনের বাড়ি সিলেটে

স্টাফ রিপোর্টার॥ বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কাপড়ের ব্যবসায়ী শহিব উদ্দিন সৈবন হত্যা মামলার গ্রেফতার প্রধান আসামী যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। আমেরিকা নেয়ার নামে দেড়কোটি টাকা ফেরৎ চাওয়ায়ই তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেয় ঘাতক জাকির। রোববার আদালতকে জানিয়েছে ব্যবসায়ী সৈবন হত্যায় সে ছাড়াও ৪ জন অংশ নেয়। এরমধ্যে ৩ জনের বাড়ি সিলেটে ও অপরজন সিলেটের বাহিরের। নিহত ব্যবসায়ী সৈবন মিয়া বড়লেখা উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউপির ইটাউরী গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে।

ঘাতক জাকির হোসেন আদালত ও রিমান্ডে থাকা কালিন পুলিশকে জানায় তারা ৪জন মিলে ২৬ এপ্রিল রাত ১০ টায় সৈবনকে গলা কেটে হত্যা করে। জাকির হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর জন্য ব্যবসায়ী সৈবনের কাছ থেকে ৫৫ লাখ টাকা ব্যবসায়ী নিয়েছে।

এ টাকা থেকে তার শ্বশুড় আফতাবুর রহমান নিয়েছে ৫ লাখ টাকা। ১৩ বছর পূর্বে ২০০৫ সালে আফতাবুর রহমানের সাথে পরিচয় এবং পারিবারিক পর্যায়ে গভীর সম্পর্ক তৈরী হয় সৈবনের। সৈবন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য জাকিরের শ্বশুড় আফতাবুর রহমানের হাতে ৫ লাখ টাকা তুলে দেন। এসময় আফতাবুর রহমান বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে জাকিরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র পাঠানোর কথা বলে ব্যবসায়ী সৈবন টাকা নিয়ে জাকিরকে দিয়েছে সে বিষয়টি জাকির স্বীকার করেছে জানিয়েছেন বিয়ানীবাজার থানার ওসি শাহজালাল মুন্সী। বিদেশ পাঠানোর সময় পেরিয়ে গেলে ব্যবসায়ী সৈবন টাকার জন্য চাপ দিলে জাকির তার সহযোগীর সাথে পরামর্শ করে তাকে হত্যার করার পরিকল্পনা নেয়। জাকির জানিয়েছে তার সহযোগী বলে আমরাতো বিদেশ পাঠাতে পারবনা আবার টাকাও ফেরৎ দিতে পারবনা। তবে এক কাজ করা যায় সৈবনকে ডেকে নিয়ে গলা টিপে হত্যা করে কোথাও ফেলে দেই। হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে সিলেট, ঢাকার বারিধারা ও বিয়ানীবাজারের জাকিরের শ্বশুড় বাড়িতে বৈঠক হয়।

ঘটনার দিন জাকির সৈবনকে ডেকে সিলেটে নেয়। আগের পরিকল্পনা মতই বিকাল সাড়ে ৫টায় তাকে রিসিভ করে রোজভিউ হোটেলের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে আছরের নামাজ পড়েন ব্যবসায়ী সহিব উদ্দিন সৈবন। জায়গা কেনার আলোচনা তুলে একটি জায়গা দেখাতে শাহপরান নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িতে জাকিরের সাথে আরও একজন ছিলো। আগের ঠিক করা পেশাদার খুনীকে জায়গার মালিক সাজিয়ে আলোচনা করে আরও জায়গা দেখানোর কথা বলে গাড়িতে তোলা হয়। শাহপরান, বটেশ্বর, খাদিমসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সময়ক্ষেপন করে জাকিরসহ অন্যান্য ঘাতকরা। এরপর বাইপাস দিয়ে আসার সময় ব্যবসায়ী সৈবনকে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। এতে তিনি জোর চালালে জাকির দুই পা জাপটে ধরে। অন্য এক সহযোগী দুই হাত পেছনে নিয়ে ধরে ফেললে ভাড়া করা পেশাদার খুনীটি বুকের উপর উঠে গলায় ছুরি চালায়।

ওসি জানান, গাড়ি যে চালিয়েছিলো তাকে এক লাখ টাকা দিয়ে ভাড়া করে আনে জাকির। তার অপর সহযোগী পেশাদার খুনীটিকে ভাড়া করে। রাত ১০ টার দিকে হত্যার পর তারা বাইপান হয়ে বিয়ানীবাজারের দিকে আসতে তাকে। নির্জন জায়গা দেখে লাশ ফেলে দেয়। এরপর আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়ানীবাজারের দিকে আসার পথে শেওলা সেতুর উপর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও গামছা এবং ব্যবসায়ী সৈবনের মোবাইল ও জুতা নদীতে ফেলে দেয়।

২৭ এপ্রিল লাশ উদ্ধারের পর প্রযুক্তির সাহায্যে জাকিরের অবস্থান সনাক্ত করে বিয়ানীবাজারের সড়ক ভাংনি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে ২৬ এপ্রিল দুইটি মোবাইল থেকে ব্যবসায়ী সৈবনের সাথে যোগাযোগ করে। ওই দিন আরও ছয়টি নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হয় সৈবনের সাথে।

শেয়ার করুন