মধ্যযুগের অন্ধকার!

 

আপনার উপরই আস্থা রাখতে চাই। আপনার কাছেই সরাসরি আর্জি জানাতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, বিনা বিচারে একটি প্রাণও যেন ঝরে না পড়ে সেটি একমাত্র আপনিই নিশ্চিত করতে পারেন। আপনিই পারেন, আইনের কঠোর শাসন প্রতিষ্ঠা করে প্রকৃত অপরাধিদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি প্রদান করতে।
বর্বরোচিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে অপসারণ করে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারবর্গের নির্মম হত্যার বিচার করার উদাহরণ আপনিই সৃষ্টি করেছেন। বাঙালির কাঁধ থেকে হিমালয়সম অপরাধির অবহনযোগ্য ভার থেকে আপনি অবমুক্তি দিয়েছেন। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদেরকে বিচারের আওতায় এনে অপরাধের সাক্ষী প্রমাণ দাখিল করে বিচার করেছেন। এই পদক্ষেপ ও অর্জনের উদাহরণে বাঙালি জাতি চিরদিন আপনাকে মনে রাখবে। বাঙালি জাতিরই শুধু নয়, সমস্থ পৃথিবীতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় এই পদক্ষেপগুলো সর্বকালের উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে আমার ব্যক্তিগত ধারণা।
প্রগতি বিরোধী, ধর্মীয় অনুভূতির নামে অন্ধ-আগ্রাসী কুসংস্কারাচ্ছন্ন রাজনৈতিক মতলববাজ, দেশি বিদেশি বাংলাদেশের উন্নয়ন বিরোধী শক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আপনার নেতৃত্বে আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিপুল জনভারে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ছোট্ট দেশ হয়েও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করিয়েছেন আমার দেশকে। যে সাফল্য অর্জন করেছেন অর্থনৈতিকভাবে; তা, যে কোন উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঈর্ষার কারণ হতে পারে।
একটি জাতির এতোসব সাফল্যও একটি প্রাণের কাছে তুচ্ছ। যদি সেই জাতি সভ্যতার অগ্রযাত্রায় ক্রমশ মানবিক উন্নয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বোত্তম প্রাপ্তির গন্তব্যের দিকে ধাবমান হয়। অপরাধী যত বড়ই হোক। অপরাধ যত বড়ই হোক; বিনা বিচারে একটি প্রাণ সংহারও অসভ্যতার শামিল। দুঃশাসন প্রতিষ্ঠার নামান্তর। ব্যক্তি আপনি, বঙ্গবন্ধু কন্যা আপনি কোনভাবেই তা অনুমোদন করতে পারেন না বলেই আমি বিশ্বাস করি। তাহলে কার অপতৎপরতায় আপনার শাসনামলকে কলঙ্কিত করার কুমন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে? বিনা বিচারে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হচ্ছে? আপনার মিত্র ও শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে আপনারই কলঙ্কজনক পরিণতির নীলনকশা প্রণয়ন করা হচ্ছে? ক্রম উন্নয়নশীল সোনার বাংলাদেশকে গড়ে তোলার আপনার দীপ্ত শাসনের হাতকে রক্তমাখা করা হচ্ছে?
প্রিয় নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অনেক বিশাল বিশাল অর্জন আপনার সময়কালকে ইতিহাসে সোনালি কাল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে ইতোমধ্যেই। কিন্তু তারপরও আপনার কাছেই আমাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষার শেষ নাই। বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডকে আপনি কঠোরভাবে বন্ধ করুন। সকল হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করুন। দেশি বিদেশি চক্রান্তকারীদের সকল অপতৎপরতা প্রতিহত করুন। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, বাংলাদেশের উন্নয়ন বিরোধী ক্ষমতালোভীদের সকল অপচেষ্ঠাকে নস্যাৎ করে দিন। বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড বিরোধী আপামর ফুঁসে ওঠা জনগণের মতামতকে সম্মান দেখিয়ে আপনার, মানে আমাদেরকে কলঙ্কজনক পরিণতি থেকে বাঁচান। আপনি মানেই আমরা। মুক্তিযদ্ধের চেতনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর
আদর্শের সৈনিক। আপনি মানেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে সোনার বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন জাগিয়ে রাখা।
প্রিয় নেত্রী, বাংলাদেশকে ইসলামি রাষ্ট্রের তকমা থেকে মুক্তি দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণা করুন। সকল নাগরিকের সমান অধিকারকে খর্ব করার এরচেয়ে বড় প্রহসন আর কিছু নেই। আপনাকে ছাড়া আর কার কাছে আমরা এই আর্জি করবো। দোহাই আপনার, এটাকে কোনভাবেই ছোট করে বিবেচনা করবেন না। আপনার নাম ইতিহাসে হাজার বছর থাকবে এই একটিমাত্র সিদ্ধান্তের কারণে।
বাংলাদেশ বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী, আধুনিক রাষ্ট্রের শিক্ষাক্রম বিরোধী, আমাদের জাতীয় সংগীত ও বাঙালির আত্মপরিচয়ের স্মারক শহীদ মিনারের চেতনা, আনুষ্ঠানিক সম্মান প্রদান বিরোধী হেফাজতে ইসলামের সাথে আপনার সংশ্রব ত্যাগ করতেই হবে। যে শিক্ষা ও শিক্ষালয় আমাদের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাইতে না দিয়ে এর বিরোধী বিষ মনে সৃষ্টি করে। যে দল বা যাদের শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশের মূল আদর্শকে মানে তো না-ই, উপরন্তু উপহাস করে তাদেরকে আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা হয়ে প্রশ্রয় দিতে পারেন না। এদেরকে প্রশ্রয় দেওয়া মানেই ত্রিশলক্ষ মানুষের আত্মত্যাগকে অসম্মান করা। বাংলাদেশের আধুনিক ধারার উন্নয়নকে ব্যাহত করা। এই মুহূর্তে আশার প্রতীক হয়ে আপনি তা করতে পারেন না। আপনি কঠোর হোন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন, আগ্রাসী অত্যাচারী লোভী দল প্রতাপশালীদের দমন করুন। আপনি বাঁচুন। বাংলাদেশকে বাঁচান।
আপনি ছাড়া যে বিকল্প বাংলাদেশ শাসনের পথ তৈরি করছে তার নাম : মধ্যযুগের অন্ধকার!

দেলওয়ার এলাহী জুন ২, ২০১৮ টরন্টো, কানাডা

 

শেয়ার করুন