জালালাবাদবার্তা.কমঃ পুলিশের নানা অপকর্মের অভিযোগ জানাতে ২০১৭ সালে সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক ‘আইজিপি কমপ্লেইন সেল’ গঠন করেছিলেন। যেখানে প্রতিমাসে হাজার হাজার পুলিশ সদস্যের বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা ইউনিটে সেসব অভিযোগ পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে আবার কোনো কোনো পুলিশ সদস্য সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কয়েকটি থানার ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও পার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। তাদের বিভিন্ন উপায়ে হয়রানি বা অপরাধী বানানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ভাষানটেক থানা এলাকার পুরাতন কচুখেতের বাসিন্দা হেলেনা নামের নারী ভাষানটেক থানার ওসি, ইন্সপেক্টরসহ (তদন্ত) আরো কয়েকজন এসআইয়ের বিরুদ্ধে আইজিপি কমপ্লেইন সেলে অভিযোগ করেছিলেন (এস-১০২৩)। ভুক্তভোগীর অভিযোগ ছিল মাদক ব্যবসায়ী পরিবারে তার বিয়ে হয়, যা পূর্বে জানতে পারেনি। পরবর্তীতে সে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে ঐ পরিবারের অপরাপর সদস্যরা তার উপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। তারপরও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার ঐ পরিবারের সদস্যরাই থানার ওসিকে মোটা অংকের মাসোহারা দেয়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো হেলেনকে মাদক ব্যবসায়ী বানানোর যত ধরনের চেষ্টা রয়েছে তার সবই করেন। তাকে ধরে এনে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে জেলও খাটানো হয়। একে একে তার বিরুদ্ধে দেয়া ৫/৬টি মামলা, যেখানে তাকে বরাবরের মতো পলাতক দেখানো হয়েছে। পরে ঐ অভিযোগের তদন্ত করতে মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার কামালকে দেয়া হয়। ঐ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা হেলেনা জানেন না। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৬ মে দ্বিতীয়বারের মতো হেলেনা আইজিপি কমপ্লেইন সেলে পুনরায় ওসি ও ইন্সপেক্টরসহ (তদন্ত) কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর নামে অভিযোগ করেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন গত ৮ মে দুপুর দেড়টার দিকে কচুখেতের বাসায় যাওয়ার সময় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ইমু, তার স্ত্রী মাহমুদা, সুজন, ইমুর শাশুড়ি হালিমা, সাহিদা, মাদক ব্যবসায়ী কালা বাবুলের স্ত্রী রাঞ্জু, আফরোজা, আঁখি, আরাফাতসহ আরো ১৫/১৬ জন সন্ত্রাসী লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমার ডান চোখ ও সারা শরীরে গুরুতর জখম হয়। প্রাণ বাঁচাতে একটি বাড়ির রুমের ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে গ্রিল ও দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালায়। এসময় তারা হেলেনার শিশুপুত্র শ্রবণকেও ব্যাপক মারধর করে। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা চিৎকার করে বলতে তাকে ওসি এবং ইন্সপেক্টর (তদন্ত) স্যার তোকে মেরে লাশ নিয়ে থানায় যেতে বলেছে। প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য চাইলে কয়েকজন ব্যক্তি এগিয়ে আসেন কিন্তু তাদেরও ব্যাপক মারধর করা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে ভর্তি হই। চিকিৎসকরা আমার ডান চোখের উপরে ৪টি সেলাই করেন ও লাঠির আঘাতে ডান চোখটি রক্তাক্ত জখম হয়। হাত-পাসহ সারা শরীরের লাঠির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যা হাসপাতালের রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ রয়েছে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় রাতে জানা যায় তাকে ১ নম্বর আসামি বানিয়ে যারা তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিল তাদের আসামি বানিয়ে ভাষানটেক থানায় একটি মামলা করা হয়েছে (মামলা নম্বর-১১, তারিখ : ০৮/০৫/২০১৮ইং)। যা ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক। যারা হামলার সাথে জড়িত ছিল, তারা সবাই এলাকার চিহ্নিত ও পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তারা থানার ওসি ও ইন্সপেক্টরকে (তদন্ত) মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে মাদক ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও গত ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলাম। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়। যার কারণে ওসি মুন্সি সাবি্বর আহমেদ, ইন্সপেক্টরসহ (তদন্ত) মাদক ব্যবসায়ীরা পূর্ব থেকেই ক্ষিপ্ত ছিল। তারা সবাই মিলে তিনি যাতে এলাকায় না থাকতে পারেন তার জন্য তাকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করার পাঁয়তারা করে আসছিল।
ভুক্তভোগী হেলেনা জানান, মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা মামলা ও অপবাদে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। তারা যা ইচ্ছা তাই বলে আমাকে গালিগালাজ করছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সদয় জরুরি হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান তিনি।
সূত্রঃ দৈনিক জনতা