ফলোআপ: শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ সড়কের সংস্কার কাজে ২২ লাখ টাকা জলে

 

সাইফুল ইসলাম,
শুরুতেই গলদ! কাজ শেষ হতেই না হতেই কোথাও কার্পেটিং উঠে পাথর বেরিয়ে এসেছে, কোথাও তৈরি হয়েছে গর্ত। তার এমন দৃশ্য মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল-শমসেরনগর-কুলাউড়া সড়কের শ্রীমঙ্গল শহরের লেভেল ক্রসিং থেকে মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি পর্যন্ত।
১৪০০ মিটার সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হলেও সংস্কার কাজে সঠিক তদারকি না থাকায় কাজ শেষ হতে না হতেই আবার যেই-সেই। এসব সড়কের সংস্কার কাজের প্রাক্বলিত ব্যয় ২২ লাখ টাকা।
গত ৩০শে এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ কাজে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য বড় বড় গর্ত সংস্কার না করে শিডিউলের নির্দিষ্ট কিছু কিছু অংশে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ।
সম্প্রতি বন্যায় মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথের শ্রীমঙ্গল-শমসেরনগর-কুলাউড়া সড়কটি সংস্কার অভাবে বেহালদশা ছিল। এই সড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার পর্যটকের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে মৌলভীবাজর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল-শমসেরনগর-কুলাউড়া সড়কের শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির জানকি ছড়া ব্রিজ পর্যন্ত ২৫ টি স্পটে সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বান করে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৪০০ মিটার রাস্তা সংস্কারের জন্য ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কাজটি করছেন ‘মেসার্স সজীব রঞ্জন দাশ’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি শ্রীমঙ্গল-কুলাউড়া-শমসেরনগর সড়কের ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৮, ৩৯ ও ৪১তম কিলোমিটার মাইল পোস্টের বিভিন্নস্থানে গর্তের ৭,৬০০ স্কয়ার মিটার সড়ক সংস্কারের কাজের কার্যাদেশ পান। এ কাজ শুরুর ১০-১৫ দিনের মাথায় শ্রীমঙ্গল শহরের ভানুগাছ সড়কের লেভেল ক্রসিং থেকে গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট পর্যন্ত রাস্তার পিচ উঠে যাচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ী আবর্জনা পরিষ্কার করে টেককোট করে বিটুমিন দিয়ে করার কথা থাকলেও তা না মেনে এসব কাজ করা হয়েছে। ফলে প্রবল বৃষ্টিপাতে পানি ঢুকে রিপেয়ারিং সিলকোট বেশিদিন টিকবে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
লাউয়াছড়া ট্যুরগাইড রিজভী বলেন,সড়কের কাজের মান একেবারের খারাপ। অনেক বড় বড় গর্ত রয়েছে গেছে,এতে প্রায় সময় পর্যটকের গাড়ীগুলো দূর্ঘটনায় কবলিত হয়। আর একই কথা জানালেন সিনজি চালক খুরশেদ মিয়া,মিজান মিয়া ও বাস চালক সায়েম আহমদ।
সরেজমিনে শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কের বিজিবি ক্যাম্প, বিটিআরআই মোড়, টি রিসোর্ট ও গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট,লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান,মাগুরছড়া,ফুলবাড়ী ও কমলগঞ্জের হীড বাংলাদেশ এলাকা ঘুরে দেখা যায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন সড়কের ভাঙাচোরা বড় বড় গর্ত থাকা বিভিন্ন অংশের ফেলে রেখে সংস্কার কাজ শেষ করেছেন। গর্ত ভরাটে পাথরের সাথে ভাঙা ইট ও নিম্নমানের কংক্রিট মিশ্রন ব্যবহার করা হয়েছে। বিটুমিনের আস্তরণ (কার্পেটিং) দেয়ার কথা থাকলেও অল্প বিটুমিন ফেলে বালুর আস্তরণ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ পুরো রাস্তার গর্তগুলো ফেলে রেখে কিছু কিছু অংশে মেরামত করায় লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না উল্টো সরকারের ২২ লাখ টাকা বি-ফলে!।
সম্প্রতি সরেজমিনে সওজের ঊর্ধ্বতন কাউকে পাওয়া না গেলেও সেখানে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী খোকন মিয়াসহ দু’জনকে দেখা যায়।
খোকন মিয়া বলেন, ওয়ার্ক অ্যাসিসটেন্ট তপন বিকাশ দেব এ কাজের তদারকি করছেন। তার পাশাপাশি সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলামও কাজের দেখভাল করছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাইট ওয়ার্কার আলী হোসেন বলেন, শিডিউলের মেজারমেন্ট অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। যেসব বড় গর্ত দেখছেন তা শিডিউলের মেজারমেন্টে নেই। যে কারণে আমরা এসব গর্তের মেরামতের কাজ করতে পারছি না। শহরতলির ভানুগাছ সড়কের টি-রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম এলাকায় সড়কের কাজে নিয়োজিত সড়ক ও জনপথের রোলার অপারেটর মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথের ওয়ার্ক সহকারী তপন বিকাশ দেব বলেন, শিডিউল অনুযায়ী সড়কের ১৫/২০টি স্পটে মোট ১৪০০ মিটার সংস্কার কাজ হয়।
এর বাইরে অনেক ছোট বড় গর্ত থাকলেও শিডিউলে উল্লেখ না থাকায় সেসব গর্ত ফেলে রেখেই কাজ শেষ করতে হয়েছে।
তিনি বলেন ‘ভারী বর্ষনে পুরো রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। শিডিউলে না থাকলে ঠিকাদার কিভাবে কাজ করবে’।
সওজের সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন,‘টেন্ডারে যেগুলো রয়ে গেছে সেগুলো ডিপার্টমেন্টালি করা হবে। এখানে বেশ কিছু গর্ত রয়ে গেছে। আমরা শতভাগ চেষ্টা করছি কাজ করার।’

অপরদিকে, চাতলা শুল্ক স্থল বন্দর ভারতের উত্তর ত্রিপুরায় পণ্য ও মালামাল আমদানি রপ্তানী ছাড়াও এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার মানুষ মৌলভীবাজার জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। কুলাউড়ার চাতলাপুর চেকপোস্ট থেকে শমশেরনগর হয়ে মৌলভীবাজার জেলা সদর পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়কটি যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রুট। বর্তমানে চলাচলের ক্ষেত্রে এই সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। জেলা সদরের সাথে সংযোগ রক্ষাকারী অন্যতম এ সড়ক দিয়ে কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মানুষ যাতায়াত করছে। গুরুত্বপূর্ণ এসড়কটি বেহাল দশায় পরিণত হওয়ায় কয়েক লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি গর্তে পড়ে যানবাহন সমুহেও নানা ক্রটি দেখা দিচ্ছে।
মৌলভীবাজার সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, ‘৫-৬ মাস আগে এ সড়ক মেরামতের এ্যাসেসমেন্ট করা হয়। মানুষজনের জন্য চলাচলের কোনো মতো মেরামত করে দেই। তাই চলতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এখন নতুন নতুন গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকাদারের কাজ ঠিকাদার করেছে। বাকি কাজগুলো আমরা ডিপার্টমেন্টালি রুটিন মেইনটেনেন্সের মাধ্যমে ইট বালি দিয়ে ঠিক রাখার চেষ্টা করবো’। তিনি আরও বলেন, ‘ ইতোমধ্যে এই সড়কসহ মৌলভীবাজার জেলায় ৯৬.৫৯ কিলোমিটার কাজের জন্য ২৩৯ কোটির টাকার ডিপিডি প্লানিং কমিশনের মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হয়েছিল সেটি পাশ হয়েছে। ডিও হয়ে গেলে,টেন্ডার হবে। আশাকরি ৩/৪ মাস পরে কাজ শুরু করা যাবে’।

শেয়ার করুন