একজন ডলি বেগম ও আমরা

আমরা, বাংলাদেশের মানুষ, যেভাবে আমাদের দেশ নিয়ে, সংস্কৃতি নিয়ে, দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন-অবনতি কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়-বিশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় এই প্রবাসে জীবনযাপন করি; জানিনা, এরকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আনন্দ-উচ্ছ্বাস অন্য কোন জাতির কমিউনিটি করে কি না!
আমরা যতই ব্যক্তিগত মান-অভিমান, ক্ষোভ বিভেদ, দল উপদলে বিভক্ত হয়ে যাই না কেন, জাতীয় বা কমিউনিটির বৃহৎ আনন্দে সংকটকালে মুহূর্তেই এক কাতারে দাঁড়াতে দ্বিধা করি না। হাতে হাত ধরে মূল্য দেই ব্যক্তি বিশেষের অভিমত। ক্ষুদ্র অভিমান, ব্যক্তি হিংসা বা বিচ্ছিন্নতাবোধ ভুলে সহসাই রচনা করতে পারি মানবিক চেতনায় সম্প্রীতির মানব বন্ধন।
আবার আত্মসমালোচনায় নয়; বরং, আত্মধিক্কারে উৎসাহী হয়ে আমরা ক্ষয় হয়ে যাই প্রতিনিয়ত। যে কথায়, যে প্রচারে, প্রচারের যে কথার সূত্র ধরে সহসা করা মন্তব্যে আমরা বিচ্ছিন্ন হচ্ছি; তা আত্মধিক্কারেরই সামিল। নিজেদেরকে ক্ষয় করে বৃহৎ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রবণতা। এর মধ্যে যুক্ত হয় প্রতিনিয়ত নেতিবাচক ভাবনার আমাদের প্রাত্যহিক দীর্ঘশ্বাস। তা সত্ত্বেও কোন কোন বিষয়ে, কোন কোন মোক্ষম মুহূর্ত আমাদের জীবনে আসে; যখন আমরা এসব কিছু ভুলে হাতে হাত ধরে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমবেতকণ্ঠে আকাশ বিদীর্ণ করে বলে উঠি -‘আমার সোনার বাংলা/ আমি তোমায় ভালোবাসি’।

দেশের জয়ে, আনন্দে মিষ্টিমুখ করাই পরস্পর। আলিঙ্গনে জাপটে ধরি অদৃশ্যের কষ্টের পাথর সরিয়ে বন্ধুর অভিমানী বুক। আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন করতে পারেন এরকম ব্যক্তির নেতৃত্ব দেখলে দলমত নির্বিশেষে তাকে অনুসরণ করি সমবেতভাবে। ব্যক্তিগত ক্ষুদ্রতা ভুলে এগিয়ে যাওয়া নেতার সফলতাকে নিজের সফলতা বিবেচনা করি। নিজ লক্ষে এগিয়ে যাওয়া, কাজের সফলতার ক্ষেত্রে উপযুক্ত অভিজ্ঞতা, নির্লোভ, সততা, অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে প্রমাণিত, সেবামূলক মনোবৃত্তিসম্পন্ন ব্যক্তি পেলে যে, এই আপাত বিচ্ছিন্নতাবাদী কমিউনিটিও এক হয়ে যায়; এর বাস্তব উদাহরণ আজকের আমাদের ডলি বেগম।

কোন জাদুমন্ত্র নয়, কোন অলৌকিক ভাব-ভাবনার প্রভাববিস্তারী প্রচার নয়, মিথ্যা আশ্বাসের মন ভোলানো কোন বুলি নয়, নির্বাচিত শব্দের বিন্যাসে কথার মনোহর বাণী নয় বরং ডলি বেগম বাস্তব পদক্ষেপের করণীয় ভাবনাটুকুই ছড়িয়ে দিচ্ছেন মানুষের কাছে। বলছেন, তার আসনের অবহেলিত অবস্থার কথা; বলছেন, সম্মানিত মুরুব্বিয়ানদের প্রতি করণীয় দায়িত্বের কথা, বিদ্যুতের মূল্যহ্রাসের কথা। ডলির কথা শুনে মনে হয়নি এ শুধু রাজনীতির কথার ফুলঝুরি। বরং মনে হয়েছে লক্ষ্য অর্জনে, সফলতায় প্রতিজ্ঞ একজন সৎ মানুষের সেবা পরায়ণ মানসিকতার দীপ্ত রাজনীতির এক তারুণ্যসুলভ নেতার কথাই এটা। বহু জাতি-ধর্ম বর্ণের এই কানাডায় নিজেকে সব বিবেচনায়ই উপযুক্ত হিসেবে প্রমাণিত করেছেন ডলি বেগম। বাংলাদেশি কমিউনিটির সৌভাগ্য : ডলি বেগম আমাদের একজন।

ডলি বেগমকে আমার অভিবাদন।

দেলওয়ার এলাহী, জুন ৫, ২০১৮। টরন্টো।।

শেয়ার করুন