জয়পুরহাট রেলস্টেশনে প্রতিদিনই একাধিক যাত্রীর মুঠোফোন, ব্যাগ ও নগদ টাকা খোয়া যাচ্ছে। চোর, পকেটমার ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়েছেন ট্রেনের যাত্রীরা। এ স্টেশন দিয়ে চলাচলকারী সাতটি আন্তঃনগর ট্রেনই ওই চোর-পকেটমারদের টার্গেট। ভুক্তভোগী ট্রেনযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ট্রেনের যাত্রী এবং ওই স্টেশন সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত ট্রেনের ভেতরে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তবে জয়পুরহাট রেলস্টেশর প্লাটফর্মেও প্রায় প্রতিদিনই চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে, প্লাটফর্ম থেকে ট্রেনে যাত্রী উঠা-নামার সময় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় রেলওয়ে থানায় (জিআরপি) অভিযোগ করেও কোনও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বরং দিনের পর দিন এসব ঘটনা বেড়েই চলছে।স্টেশন সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জানান, প্রতিদিন জয়পুরহাট রেলস্টেশনের ওপর দিয়ে দুইটি মেইল ট্রেনসহ সাতটি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে। এসব ট্রেনে জয়পুরহাট স্টেশন থেকে প্রতিদিন শত শত যাত্রী ওঠা-নামা করেন। কিন্তু এ স্টেশনে যাত্রীদের নিরাপত্তায় রেলওয়ে থানা পুলিশের কোনও তৎপরতা নেই। এ সুযোগকে কাজে লাগায় চোর-পকেটমাররা। স্টেশনে এসে ট্রেন থামা মাত্র যাত্রীদের তাড়াহুড়ো শুরু হলে চোর-পকেটমাররা তৎপর হয়ে উঠে।যাত্রীরা জানান, কিছু চুরি গেলে সেটা নিয়তি বলে মেনে নিতে হয়। থানায় অভিযোগ করে কাজ হয় না। এ নিয়ে অনেকেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু চুরি যাওয়া জিনিস আর উদ্ধার হয় না।নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, একটি সংঘবদ্ধ পকেটমার চক্র বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে বগুড়ার সান্তাহার জংশন পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেশনে চুরি করে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এদের ব্যাপারে জানে। কিন্তু কি এক রহস্যজনক কারণে তারা এদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।জয়পুরহাট জেলা শ্রমিক দলের নেতা শফি আহম্মেদ বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমি আমার ছেলেকে আন্তঃনগর ট্রেন বরেন্দ্র এক্সপ্রেসে তুলে দিতে স্টেশনে যাই। ট্রেনে ওঠার সময় আমার ছেলের মোবাইল ফোন চুরি হয়।’জয়পুরহাট শহরের মাস্টারপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘এপর্যন্ত ট্রেনে চলাচলের সময় আমার চারটি মোবাইল ফোন চুরি গেছে।’শহরের আরাফাত নগরের বীমা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি ঢাকা যাওয়ার জন্য জয়পুরহাট স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন নীলসাগর এক্সপ্রেসে ওঠতে গিয়ে তার মোবাইল ফোন চুরি যায়। জয়পুরহাট শহরের ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন বলেন, ‘গত সাত দিন আগে ট্রেনে যাত্রাকালে আমার এক ব্যবসায়ী বন্ধুর ৭০ হাজার টাকা চুরি গেছে।’
জয়পুরহাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার খাঁ অভিযোগ করেন, ‘গত ৩ জুন দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে জয়পুরহাট স্টেশনে যাই আমি। সেখান থেকে ওই ট্রেনে ওঠার পর পকেটে হাত দিয়ে দেখি, মোবাইল ফোন হাওয়া। একই দিন সহকর্মী এক সংবাদকর্মীরও মোবাইল ফোনও চুরি যায়। এ ব্যাপারে আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছি।’
জয়পুরহাট শহরের বারিধারা মহল্লার গৃহবধূ সন্ধ্যা রাণী জানান, গত কয়েক দিন আগে ঢাকা যাওয়ার জন্য জয়পুরহাট স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠার পর তার দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের হার গলা থেকে কৌশলে পকেটমার চুরি করে নিয়ে যায়।
জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপ-পরিদর্শক জহির হোসেন বলেন, ‘হর-হামেশাই চুরির ঘটনা ঘটছে। ৮-১০ নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে ১৪-১৬ বগির ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তারপরও ঈদের আগে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, যাত্রীদের ভালো সেবা দেওয়ার।’
জয়পুরহাট স্টেশনমাস্টার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্টেশনে সবসময় মাইকিং করে সতর্কতা বার্তা দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগগুলোও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’