স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভূক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বাস উপহার প্রদান করলেন।এ উপজেলার চাম্পারায়,কুরমা,বাঘাছড়া,ধলই,পাত্রখোলা, শ্রীগোবিন্দপুর, মদনমোহনপুর ও মাধবপুর চা বাগানের কলেজগামী চা শ্রমিকসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভূক্ত শিক্ষার্থীরা টাকার অভাবে কমলগঞ্জ উপজেলার কলেজগুলোতে গিয়ে নিয়মিত ক্লাস করতে পারে না। বছর দেড়েক পূর্বে কমলগঞ্জের সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানতে পেরে কমলগঞ্জ গণ মহাবিদ্যালয় ও কমলগঞ্জ আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে চা বাগানগুলোর শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারে না বলে জানতে পারেন। এতে করে মাসে গড় হাজিরা থেকে বাদ পড়ে থাকে অনেকেই।
কমলগঞ্জ উপজেলার শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের এমন গড় অনুপস্থিতির দিকে দৃষ্টিপাত ও প্রতিবন্ধকতা উপলব্ধি করেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। তিনি চিন্তা করে বের করেন কেন গড় হাজিরায় অনুপস্থিত চা শ্রমিক সন্তানরা। তাদের গড় হাজিরায় অনুপস্থিতির প্রধান কারণ হলো যাতায়াত ব্যবস্থা। প্রতিদিন কলেজে আসলে মাথা পিছু যাতায়াত খরচ হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। পরে বিষয়টি নিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একটি আবেদন পত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করেন। তিনি কমলগঞ্জ উপজেলার চা শ্রমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ২টি বাস বরাদ্ধ করতে গত বছর আবেদন পত্র আদান প্রদান সহ জোর তদবির করেন ঢাকায়। অবশেষে কমলগঞ্জে চা শ্রমিক সন্তানদের কলেজে যাতায়াতের সুবিধার্থে জন্য এ বছর জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসকল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বাস উপহার স্বরূপ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চা শ্রমিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন বাস উপহার দেয়ায় কুরমা, চাম্পারায় ও বাঘাছড়া চা শ্রমিক শিক্ষার্থীর মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। তবে মাধবপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত ফাঁড়ি বাগান গারোটিলা, ধলই, পাত্রখোলা, শ্রীগোবিন্দপুর, মদনমোহনপুর ও মাধবপুরসহ ৬ টি চা বাগানের চা শ্রমিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য আরো একটি বাস প্রয়োজন বলে সচেতন মহল জানান।
প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চা শ্রমিক শিক্ষার্থীদের জন্য উপহার স্বরূপ দুটি বাসের জায়গায় একটি বাস দেয়া হয়েছে। এ বাসটি যদি তিনটি চা বাগানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আদমপুর হয়ে কমলগঞ্জ চলে যায়, তাহলে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে বাকি ৬ টি বাগানের শিক্ষার্থীরা। অর্থাভাবে এ সকল শিক্ষার্থীরা এক সময় ঝরে পরতে পারে। তাই উপজেলা প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এ সকল শিক্ষার্থীরা বাসটি যেন পাত্রখোলা হয়ে মাধবপুর দিয়ে কমলগঞ্জ যায়, যাতে করে কমলগঞ্জ কলেজে যাওয়ার সেই সুযোগ এসব চা বাগানের শ্রমিক শিক্ষার্থীরা পায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, উপজেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমটার দূরের চাম্পারায় চা বাগান থেকে ফেরার পথে স্কুল ফেরত শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দেখে ওদের সাথে কথা বলে জানলাম সাত-আট কি:মি: হেঁটেই তারা স্কুলে যাতায়াত করে। এরপর অটোমেটিক ভাবনায় এলো মাধ্যমিক শেষ করে ৩০/৩৫ কি:মি: দূরের উপজেলা সদরে অবস্থিত কলেজে এদের কয়জন যাওয়ার সামর্থ রাখে। পথের নানা বিড়ম্বনার সাথে ১০০/১৫০ টাকা ভাড়ার বোঝা অধিকাংশ দরিদ্র নৃগোষ্ঠী, চা শ্রমিকদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কারো কাছে হয়তো এ পরিসংখ্যান নেই শুধু ১০০ টাকা যাতায়াত ভাড়ার অভাবে কতো শত মেধাবী প্রজন্ম অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। এরপর থেকে কলেজগুলোতে গেলে প্রায় জানতে চাইতাম কারা দক্ষিণের ইউনিয়নগুলো থেকে কলেজে আসে- কত টাকা ভাড়া লাগে। অধ্যক্ষগণ প্রায় বলেন, অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীই অনিয়মিত। এরপর উপজেলা প্রকৌশলী কিরণ চন্দ্র দেবনাথ এর মাধ্য দু’টো বাসের ইস্টিমেট করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দু’টো বাসের প্রস্তাব পাঠালাম। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে একটি বাস পেলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা। তাঁর মতো করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা কয়জন ভাবতে পারে? তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, অন্তত আরো দু’টো বাস কমলগঞ্জের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নেবিভোর শিক্ষার্থীদের জন্য ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে। তিনি আরো বলেন, আমরা আশায় বুক বাঁধবো আদমপুর-ইসলামপুরের কোন একজন অথবা একাধিক দানশীল শিক্ষাবিদ দু’টো ইউনিয়নের সুবিধাজনক কোন স্থানে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসবেন।