এখনও প্রকাশ্যে বিক্রি হয় মাদক তৎপর নয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার॥ সরকারের মাদক বিরোধী জিরো টলারেন্স ক্রাশপ্রোগ্রামেও মৌলভীবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মাদক। জেলার চিহ্নিত মাদক বিক্রির স্পট গুলো এখনও অক্ষত। অদৃশ্য কারণে চলমান বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার হননি জেলার মাদক গডফাদারের রতী মহারতীরা। অনেকটাই তারা ধাপটের সাথে চলাফেরা করছেন। তবে পুলিশ সুপার বলছেন, মাদক প্রকাশ্যে বিক্রি হওয়ার বিষয়টি তাদের জানা নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদক ব্যবসায়ীরা এখন মাদক বিক্রির ধরণ পাল্টিয়েছে। অভিযানের আগে দোকান, বাসা বা বাড়িতে বিক্রি করলেও এখন বিক্রি হয় ভ্রাম্যমান ভাবে। ক্রেতার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে উভয় মিলিত হন নিরাপদ স্থানে। এভাবে প্রতিনিয়ত জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও বড় বড় বাজারে লক্ষ লক্ষ টাকার মাদক প্রতিনিয়ত বিক্রি হচ্ছে। যার ফলে মৌলভীবাজার জেলায় মাদক নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রভাব পড়ছে না।

এনিয়ে জেলার সচেতন নাগরিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালালে মাদক গডফাদাররা মফস্বল এলাকায় এতো সাহস ফেত না। প্রশাসনের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তারা বিশেষ অভিযানের সময়ও রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে গডফাদাররা গ্রেফতার হচ্ছে না।

একটি সূত্র জানায়, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর মৌলভীবাজারের “টপ টেন” মাদক ব্যবসায়ীদের নাম উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায় গত মাসের ২৭ মে এবং জেলা পুলিশের কাছেও গডফাদারদের একটি তালিকা রয়েছে। তার পরেও ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ এমন অবস্থায় চলছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাজ।

প্রতিবেদক সম্প্রতি শহরের ক্লাব রোডস্থ মেথর পট্টিতে গেলে দেখতে পান, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেও সতর্কতার সহিত চলছে ইয়াবা বিক্রি। পরবর্তীতে প্রতিবেদক ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় পূণরায় গেলে দেখতে পান একাধিক যুবক মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার, রিক্সা ও টমটমে এসে নিরাপদে মাদক নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘরের সামনে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু অভিযানের আগে বয়স্করা বিক্রি করলেও এখন একাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কোমলমতি শিশু ও মহিলাদের। যাতে কেউ বুঝতে না পারেন। শনিবার দুপুরে শহরের চাঁদনীঘাট ব্রীজের নিছে গেলে দেখতে পান, একটি কুড়ে ঘরের সামনে চেয়ারে বসে একজন লোক বিভিন্ন স্থান থেকে আগত লোকদের সাথে হাতবধল করছেন। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই সতর্ক। প্রতিবেদক শুক্রবার বিকালে পরিচয় গোপন রেখে মুরাদ নামে এক মাদক স¤্রাটের সাথে মোঠুফোনে ইয়াবা কিনতে চাইলে সে বলে, “সন্ধ্যার পর পৌরসভার সামনে এসে ফোন দিবেন। নিরাপদে নিয়ে যেতে পারবেন কোনো অসুবিধা হবে না। পরের দিন প্রতিবেদক ওই মাদক স¤্রাট মুরাদের কাছে জানতে চান পুলিশ কোনো সমস্যা করবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে সে বলে (এমন খারপা কথা বলছে যেটা সংবাদে উল্লেখ করার মতো নয়) এটা তো সারা জীবনই সমস্যা। এটা কোনো সমস্যা বলে আমরা মনে করিনা। গাড়ি নিয়ে আসেন, নিরাপদে নিয়ে যেতে পারবেন। পৌর শহরের কাজিরগাঁও এলাকায় শিপা নামের এক মাদক কন্যা বাসাতে বসে মাদক বিক্রি করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার কুলাউড়া উপজেলার পূর্ব গুড়াভূই গ্রামের মোঃ শাহেদ মিয়া, গোবিন্দপুর গ্রামের জুয়েল মিয়া, রাজনগর উপজেলার মতিউড়া চা বাগানের নারায়ন নাইডু, গোপাল রাজভর, মিলন কানু, সদর উপজেলার ব্রাক্ষনগাঁও গ্রামের রানু বেগম, নিজাম উদ্দিন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর গ্রামের সুয়েল মিয়া, মাইজদিহি গ্রামের রুমেল মিয়া, কমলগঞ্জ উপজেলার কালেঙ্গা গ্রামের মোঃ আব্দুল্লাহ, সরকার বাজারের শাহিন মিয়া, গিয়াস মিয়া, পৌর শহরের শাহ মোস্তফা রোডের সবুজ, ইরা, মুর্শেদ, রনি ও ফটু দীর্ঘ দিন ধরে রমরমা মাদক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এরা প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার মাদক কেনা-বেচা করেন। একটি সূত্র দাবি করছে তারা ক্ষমতাশীন দলের কিছু নেতাকর্মী ও প্রশাসনের ছত্র ছায়ায় এমন অবৈধ কার করছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিবস ও মাঝে মধ্যে নামকা ওয়াস্তে দু’একটি অভিযান পরিচালনা করা হয় শুধু মিডিয়া কভারেজ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালনের জন্য। এ অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়ছে না। যার ফলে মাদকে আসক্ত হয়ে ধ্বংস হচ্ছে এ জেলার অধিকাংশ  যুব সমাজ। এমনকি স্কুল-কলেজ পড়–য়া অনেক শিক্ষার্থীও। তাদের দাবি জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবেশদার বন্ধ ও প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি না হলে অভ্যন্তরিন ওই অভিযান থেকে কোনো ফলই আসবে না।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল বলেন, প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে এধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তথ্য ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

 

 

 

শেয়ার করুন