নবীগঞ্জ প্রতিনিধি॥ খেজুরের রসের গুড় আমাদের দেশে খুবই সু-পরিচিত একটি খাবার। অনেক অনেক বছর আগ থেকে‘খেজুরের রস’ সবার পরিচিত হয়ে আছে।খেজুর গুড় পাটালির নলেন ঘ্রান মানুষের মন কাড়ে।শীতের পিঠা পায়েশ তৈরি করা হয় খেজুরের গুড় দিয়ে।ব্রিটিশ আমলে খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি হতো চিনি।সাদা চিনি উৎপাদনের সময়ও খেজুরের গুড়ের জমজমাট ব্যবসা ছিল। পরে খেজুরের গুড় থেকে চিনি তৈরির ব্যবসা শুরু হয়। এক সময় ব্যবসায় লোকসান শুরু হতে থাকে।বন্ধ হয়ে যায় অনেক কারখানা। কিন্তু খেজুর গুড়ের কদও এখনো কমেনি। সেই পুরনো ব্যবসার রেওয়াজ রয়েছে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাঠবাজারে। ইদানিং দেখা যাচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা পবিত্র ঈদুল ফিতরকে টার্গেট করে নিম্নমানের ও নোংরা চিনির সাথে সুগন্ধী পাউডার মিশিয়ে তৈরি করছে ভেজাল খেজুর গুড়। গুড় উৎপাদনকারী নবীগঞ্জে সুস্বাদু গুড়ের ব্যাপক চাহিদাকে পুঁজি করে নামেমাত্র খেজুর রস দিয়ে সঙ্গে চিনি জ্বালিয়ে ভেজাল খেজুর গুড় তৈরি করে তা অবাধে বাজারজাত করছে। এসব চিনি মেশানো ভেজাল গুড় এখন উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ নিম্নমানের চিনি, পুরাতন চিটাগুড় ও গুড়ের মতো বিশেষ রং দিয়ে এ গুড় তৈরি করা হচ্ছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু অদৃশ্য কারনে বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সময়ে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশী হওয়ার কারনে পর্যাপ্ত পরিমান খেজুরের গুড় না থাকায় অধিক মুনাফা লাভের আশায় ঐ ব্যবসায়ীরা গুড়ে চিনি ও পাউডার মিশিয়ে তা বাজারে বিক্রি করছেন। অনেক ক্রেতারাই খায়েশ করে রুচিদায়ক খাবার খেজুরের রসের গুড় কিনে বিভিন্ন রকম পিঠা-পায়েস, চা ও অন্যান্য সুস্বাধু খাবার তৈরী করে থাকেন। তাই এ সময়ে পর্যাপ্ত পরিমান খেজুরের রসের অভাবে সর্বত্র খেজুরের গুড়ের চাহিদা থাকায় দেশের রংপুর,ফরিদপুর,চাপাঁই নবাবনগঞ্জ,নাটোর,যশোর অঞ্চলের গুড় উৎপাদনকারীরা চাহিদা অতিরিক্তভাবে চিনি মেশানো ভেজাল গুড় তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে আসছেন। তাদের এ ফমুর্লাকে কাজে লাগিয়ে নবীগঞ্জের মধ্য বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী চিটাগুড় ও সুগন্ধি পাউডার দিয়ে ভেজাল গুড় তৈরী করে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে এখন দেদারছে বিক্রি করছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নবীগঞ্জের মধ্য বাজারে এক দোকানের পিছনে বাসায় মিনি কারখানা তৈরী করে খালি মাটির হাড়ি আমদানী করে ভেজাল গুড় ভর্তি করে শহরের বিভিন্নস্থানে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা এসব নকল গুড় আমদানী করে প্রতিদিনই নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান বাজারে সাধারন আখের গুড় প্রতিকেজি ৫৫/৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। অন্যদিকে চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। তাই চিনি মিশিয়ে মরিচা গুড় তৈরী করে অধিক মুনাফা অর্জন করা করায় আশায় ভেজাল খেজুরের রসের গুড় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা এই প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছেন বলে বিশ্বস্থ সুত্রে জানা গেছে। এভাবে সুস্বাদু খাবার তৈরীর প্রধান উপাদান খেজুরের গুড়ের সাথে চিনি মিশিয়ে বাজারে বিক্রির কারনে সাধারন ক্রেতারা প্রতিদিন ঠকা খেয়ে আসছেন। ফলে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারন মানুষ। উপজেলার আউশকান্দি বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, চিনিকে জাল দিলে তা পরিমাণে অনেক বেড়ে যায়। আর শুধু খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করলে পরিমাণে গুড় কম হয়। সে জন্যই অধিকাংশ গুড় উৎপাদনকারী গাছি খেজুরের রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরিতে ঝুঁকে পড়েছেন। এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশি¬ষ্টরা জানান,খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে জাল দিলে সেটি বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আর এই চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড় দিয়ে কোনো খাদ্য দ্রব্য তৈরি করে খেলে পেটের পীড়াজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ওই গুড় দিয়ে শিশুদের কোনো খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে শিশুরা লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছেন সমাজের প্রতারনার শিকার সাধারন ক্রেতাগন।