সাইফুল ইসলাম:
টানা বৃষ্টি ও সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার শরীফপুরে মনু নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে বুধবার সকাল ১০টায় বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী।
কুলাউড়া হাজীপুর এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় সংবাদকর্মী ছয়ফুল আলম বুধবার সকালে জালালাবাদবার্তা ডটকমকে জানান,কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের মনুনদীর পানি বিপদ সীমার অনেক উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্চে। বিভিন্ন এলাকায় এলাকাবাসী বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন। হাজীপুর ইউনিয়নের মনু রেলষ্টেশনের মনু রেল ব্রিজের কাছে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বিভিন্ন এলাকায় তথ্য নিয়ে জানান, মাতাবপুর, মাদানগর, চক রণচাপ, হাসিমপুর, বাড়ইগাঁও ও মন্দিরাসহ ৬/৭ টি এলাকায় নদীর প্রতিরক্ষা বাধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে চক রণচাপ ও মাদানগরে এলাকাবাসী বাধ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর এবং চাতলা ব্রীজের এলাকা, চানপুর , আমতলা বিজিবি ক্যাম্প এলাকা, দত্ত গ্রামসহ পাশে মনু-নদীর বেড়ীবাঁধের ভাঙ্গনের আশংকা রয়েছেন। এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে এলাকাবাসী সাহায্য চাওয়া হচ্চে। বিভিন্ন জায়গায় টুকরি, কোদাল নিয়ে বাঁধের উপর মাঠি ভরাট করে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন।’
অপরদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীরও পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুরানো ২টি ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে ও ফসলি জমিতে। এতে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের ৯টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
তিনদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টির ফলে মঙ্গলবার ভোর থেকে মনু ও ধলাই নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শরীফপুর ইউনিয়ন কার্যালয় সংলগ্ন মনু সেতু এলাকায় পানি বিপদ সীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতের আঘাতে মনু সেতু সংলগ্ন প্রতিরক্ষা বাঁধের উপর স্থাপিত বালির বস্তা ভেসে যেতেও শুরু করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ মনু সেতুর উত্তর দিকের গাছের পাইলিংও ভেঙ্গে যেতে শুরু করেছে।
অপরদিকে মঙ্গলবার বিকেল থেকে কমলগঞ্জের ধলাই সেতু এলাকায় ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচেছ। কমলগঞ্জে কর্মরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষক আব্দুল আউয়াল জানান, ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, যেভাবে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে ও তাতে ধলাই নদীতে আরও পানি বেড়ে যাচ্ছে।
কমলগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের করিমপুর গ্রাম এলাকায় ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে ও ফসলি জমিতে। দ্রুত গতিতে পানি বেড়েই চলেছে।
কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো: জুয়েল আহম বলেন,‘ধলাই নদীর ভাঙনের ফলে ওই গ্রামে আড়াই’শ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।’
এছাড়া উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সুরানন্দপুর গ্রামে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে প্রায় ১০০ ফুট এলাকার একটি নতুন ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। এ ভাঙ্গনে ধলাই নদেও পানি দ্রুত গতিতে গ্রামে ও ফসলি জমিতে প্রবেশ করছে। ফলে সুরানন্দপুর গ্রামে নতুন করে আরও ২৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে কমলগঞ্জ পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের করিমপুর ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সুরানন্দপুর গ্রামে ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এ পানি আবার আরও দুটি ইউনিয়নের কম পক্ষে ১০টি গ্রামকে প্লাবিত হচ্ছে। দুটি ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করায় কমলগঞ্জ মৌলভীবাজার সড়কের করিমপুর ও সুরানন্দপুর এলাকায় ২/৩ ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর, ইসলামপুর কমলগঞ্জ সদর ও আদমপুর ইউনিয়নে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের ৯টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মাধবপুর ইউনিয়নের হীরামতি এলাকায় ধলাই নদীর পুরানো ভাঙন দিয়ে পানি বের হচ্ছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ও কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ সুরানন্দপুর নতুন ভাঙ্গন এলাকা ও করিমপুর এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, বন্যায় মনুনদীর তিনটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আজ বুধবার ধলাই নদীর বিপদ সীমার ৫২ সেন্টিমিটার ও মনু নদী বিপদ সীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১৭৫ সেন্টিমিটার মানে পানির লেভেল আর বাঁধের লেভেল সমান হয়ে যাচ্ছে। বন্যার পানি বাড়ছে। পানি নাকি আরো বাড়বে। এখন আর ঝুঁকিপূর্ণ বলে কোন শব্দ নাই। এখন সবই ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছরের চেয়ে এবছর বন্যার পানি বেশি। তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার মনু নদীর বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। তিনি আরও বলেন, কোন বরাদ্ধ না থাকার পরও নিজ দায়িত্বে এই দুটি নদীর ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিরক্ষা বাঁধে ইতিপূর্বে প্রায় ৮ কোটি টাকারও সংস্কার কাজ করেছিলেন। দুটি নদীই পাহাড়ি খর¯্রােতে বলেই এখানে পানির ¯্রােতের আঘাত বেশী হয় বলেই প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যায়।’