সাইফুল ইসলাম
দূর্ঘটনা এড়াতে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেল লাইনের দু-পাশে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটার পরিকল্পনার জন্য রেল বিভাগের আট সদস্যদের একটি টিম লাউয়াছড়া পরিদর্শন করেছেন।
গত (১০জুন) রবিবার দুপুরে সিলেট আখাউড়া রেল লাইনের লাউয়াছড়া উদ্যানের ভেতরে সিলেট রেলওয়ে বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো.মাহমুদের নেতৃত্বে আট সদস্য একটি টিম পরিদর্শন করেন। এসময় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো.আনিছুর রহমান,লাউয়াছড়া ফরেস্টার মো.আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো.আনিছুর রহমান বলেন,‘সিলেট রেল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদ সাহেব লাউয়াছড়া রেললাইনের দু-পাশের গাছগুলো ঘুরে দেখেছেন। তারা যেভাবে বলে, আসলে এমন ঝুঁকিপূর্ণ কোন গাছ নেই। আমরা পুরো এলাকা ঘুরে দেখলাম ঝুঁকিপূর্ণ কোনো গাছ নেই। ২/১ টা গাছ হেলে আছে। এগুলোর ডালপালা ছাটাই করে দিলে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে রেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছিল রেল-লাইনের দু,পাশে ৫০ফুটের মধ্যে যতগুলো গাছ আছে সেগুলো কাটার চিঠি দিয়ে ছিল। এটা সম্ভব হবে না, আর আমরা গাছ কাটতেই দিব না। এসব গাছে কোনো সমস্যা হবে না। আর সমস্যা ছাড়াও দুনিয়া চলে না। যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিব।’
সিলেট রেলওয়ে বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো.মাহমুদ,আমরা রেগুলার পরিদর্শন করি। গাছ কাটার বিষয়টি উদ্ধর্তন কতৃপক্ষ যারা আছেন তাদের সাথে আলাপ করবো। তারপর উনারা যা বলে। ঝুঁকিপূর্ণ চিন্তা করলে এইভাবে তো বলা যায় না। ঝড়-বৃষ্টি কখন কোন দিক দিয়ে আসে এক আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তারপর দেখা যাক কি করা যায়।তবে গাছ কাটার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখন হয়নি।’
প্রসঙ্গত:
৯ এপ্রিল ২০১৬ সালে রেলওয়ের পক্ষ থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর রেললাইনের দুই পাশের গাছ কাটতে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠি অনুযায়ী, ছোটবড় ২৫ হাজারের বেশি গাছ কাটা পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, যা জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি।
২০ জুন ২০১৬ সালে বাংলা ট্রিবিউনে ‘লাউয়াছড়া উদ্যানে দুর্ঘটনা এড়াতে ২৫ হাজার গাছ কাটতে রেলওয়ের চিঠি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে পরিবেশবাদী সংগঠন ও পরিবেশকর্মীরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান রক্ষায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।
বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এমন কোনও গাছ অপসারণ না করলেই চলে না, সে বিষয়ে কমিটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবস্থা নেবে।
রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরমান হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা আগেও ২৫ হাজার গাছ কাটার কথা বলিনি। জাতীয় উদ্যানের রেললাইনের দু’পাশে রেলওয়ের ৫০ ফুট জমিতে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ রয়েছে। যেহেতু ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করে, সেহেতু ট্রেনযাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটার এবং গাছ কাটার ব্যাপারে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ চিহ্নিত করে তারপর এসব গাছ কাটা হবে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল হাসান বলেন, রেললাইনে গাছ পড়ার কারণে রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী গাছ কাটার জন্য চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু সংরক্ষিত বনে চাইলেই গাছ কাটা যাবে না। এমনকী লাগানোও যাবে না। রেললাইন চালু থাকবে, গাছও থাকবে।’
https://drive.google.com/file/d/12bByO6i17Eh1wb-vjw8unoTHwr9fv7nM/view?usp=drivesdk