কমলগঞ্জে ধলাই নদীর ৮টি স্থানে ভাঙন ॥ পানিবন্দি প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ ॥ শতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত ॥ এক হাজার হেক্টর আউশ ফসল পানিতে নিমজ্জ্বিত

স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর নতুন ও পুরাতন ৮টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে প্রায় ৫০টি গ্রাম। ভারতের ত্রিপুরা এলাকা থেকে পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত কমলগঞ্জে ধলাই নদীর ৮টি স্থানে ও রাত থেকে ১৩ জুন বুধবার সকাল পর্যন্ত কুলাউড়া উপজেলার মনু নদীর ৪টি স্থানের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে দ্রুত গতিতে ফসলি জমি তলিয়ে পানি প্রবেশ করছে গ্রামে। নদী ভাঙনে কমলগঞ্জে প্রায় অর্ধলক্ষ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানিতে নিমজ্জ্বিত থাকায় মুন্সীবাজার-কমলগঞ্জ-কুরমা সড়ক ও শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়কের একাংশ তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসব সড়কে কোথাও কোথাও হাটুপানি হওয়ায় যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। মুন্সীবাজার ইউনিয়ন ও কমলগঞ্জ পৌর এলাকায় শতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সহ¯্রাধিক হেক্টর আউশ ফসল পানিতে নিমজ্জ্বিত রয়েছে। অপরদিকে ভানুগাছ বাজার সংলগ্ন, রামপাশা, আলেপুর এলাকায় আরো ৩টি স্থান ঝুঁকির মুখে। বুধবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কমলগঞ্জ পৌরসভা ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের ১২৫টি পানিবন্দি পরিবারের মাঝে জরুরী ভিত্তিতে ১০ কেজি করে জিআর চাল বিতরণ করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিন দুই রাত অবিরাম মাঝারী বৃষ্টিপাতে ধলাই নদীর কমলগঞ্জ পৌরসভার করিমপুর, মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সুরানন্দপুর, বাদে করিমপুর, রহিমপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, আদমপুর ইউনিয়নের কেওয়ালীঘাট, ঘোড়ামারা, মাধবপুর ইউনিয়নের কাটাবিল, ইসলামপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর নামক স্থানে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরাতন ও নতুন ভাঙ্গন দিয়ে ৬টি ইউনিয়নের করিমপুর, ঘোড়ামারা, বাসুদেবপুর, সুরানন্দপুর, বাদে করিমপুর, বনগাঁও, ধলাইরপার, শ্রীপুর, ঘোড়ামারা, হীরামতি, যুদ্ধাপুর, নাগড়া, গোপালনগর, নাজাতকোনা, কেওয়ালীঘাট, কান্দিগাঁও, হোমেরজানসহ ৫০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। পানিতে ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। এছাড়া ধলাই নদীর মাধবপুর ইউনিয়নের হীরামতি গ্রামের মেরামতকৃত বাঁধ ও কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ এবং রামপাশা গ্রামে খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। টানা বর্ষনে ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ বলেন, করিমপুর এলাকায় নদীর ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করায় পৌর এলাকার গোপাল নগর, করিমপুর, যুদ্ধাপুর ও নাগড়া গ্রামের তিনশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় প্রাথমিকভাবে কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিতরন চলছে।

মুন্সীবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালিব তরফদার জানান, ধলাই নদীর বাদে করিমপুর ও সুরানন্দপুর এলাকায় সৃষ্ট ভাঙনে প্রায় ৮০টি পরিবার বিধ্বস্ত হয়েছে। ৫ শতাধিক হেক্টর আউশ ফসল পানিতে নিমজ্জ্বিত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলাতির কারণে যথাসময়ে ধলাই নদীর ভাঙন মেরামত না করায় এবার বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। ধলাই নদীর ভাঙ্গা বাঁধ মেরামতের জন্য জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান।

আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন জানান, নদীর একাধিক স্থানে ভাঙনের ফলে ঘোড়ামারা, খেওয়ানিঘাট, কান্দিগাঁও, বন্দরগাঁও, মধ্যভাগ, হেরেঙ্গাবাজার গ্রামের প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নদীর পানি এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে মনুনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার রাতে কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের বাঘজুর ও তেলিবিল গ্রাম এলাকায়, বুধবার সকালে চাতলাপুর সেতুর উত্তরপাশে ও দুপুরে হাজীপুর ইউনিয়নের মিঞারপাড়া এলাকায় নদীভাঙনের ফলে পানি দ্রুত গতিতে গ্রামে প্রবেশ করে। ফলে ১৫টি গ্রামের প্রায় ৪ হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েন। শরীফপুরের বটতলা থেকে চাঁনপুর পর্যন্ত প্রায় ২ কি.মি. সড়ক ৩ ফুট পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় এবং কুলাউড়া-শমশেরনগর সড়কে টিলাগাঁও এলাকায় সড়কে পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় কুলাউড়া-শমশেরনগর ও বাংলাদেশ-ভারত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী শরীফপুরে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ৩ টি স্থানের ভাঙ্গনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মনুর চাতলা সেতু এলাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৮০ সে.মি. বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, করিমপুর এলাকার প্রায় দেড়শ ফুট ভাঙন পরিদর্শন করেছি। এছাড়া পুরনো কয়েকটি ভাঙন দিয়ে পানি বেরুচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন এ দিকে সতর্কতার সাথে নজরদারী করছে। আপাতত কয়েকটি এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরন করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন