সাইফুল ইসলাম:
টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মনু ও ধলাই নদীর কমতে শুরু করেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার জালালাবাদবার্তা ডটকমকে এতথ্য জানান। তিনি বলেন, কুলাউড়ার মনু নদীর পানি বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার উপরে ও কমলগঞ্জের ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমতে শুরু করেছে,তবে কমে যাবে।’
তিনি আরও বলেন,‘কুশিয়ারার পানি বেড়ে গেছে। পানি এক দিকে কমে আরেক দিকে বাড়ে। কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপরে আছে।’
কুলাউড়া উপজেলা হাজিপুর পাইকপাড়া গ্রামে বাসিন্দা ছয়ফুল আলম এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, হাজীপুর ইউনিয়নের বাড়ৈই গ্রামের বাহার চৌধুরীর বাড়ির সামনে মনুনদীর বাঁধ ভাঙনের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনো প্রায় দেড়লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি আছে। তিনি বলেন,আর দুইদিন পর ঈদ। মানুষের কষ্টের কোনো শেষ নেই।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মনু ও ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ১৩টি স্থানে ভেঙে প্রবলবেগে পানি প্রবেশ করে কুলাউড়া উপজেলায় টিলাগাঁও, শরীফপুর ও হাজীপুর ইউনিয়নের ৫টি স্থানে ভাঙ্গন ও কমলগঞ্জ উপজেলার কমলগঞ্জ পৌর এলাকা,মুন্সীবাজার ইউনিয়ন,আদমপুর ও মাধবপুর ইউনিয়নের ৮টি স্থানে ভাঙ্গন দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার বাড়ি ঘর, রাস্তা ঘাটসহ ফসলী জমি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ওই এলাকার অন্তত দেড়লক্ষাধিক মানুষ। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
এছাড়া বন্যার পানিতে নিমজ্জ্বিত থাকায় শমসেরনগর-চাতলাপুর ইমগ্রেশন চেকপোষ্ট সড়ক, মুন্সীবাজার-কমলগঞ্জ-কুরমা সড়ক ও শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়কের একাংশ তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এসব সড়কে কোথাও কোথাও ২ থেকে ৩ ফুট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে আজ বৃহস্পতিবার দিন থেকে কিছুটা কম আছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.শাহজাহান বলেন, বুধবার ১৫০০ হেক্টর আউশ ফসল নি¤œজ্জিত আছে। (আজ বৃহস্পতিবার) আজকের রিপোর্ট আবার নিবো। তারমধ্যে মৌলভীবাজার সদরে ১৫ হেক্টর,রাজনগর উপজেলায় ৮৫ হেক্টর। কমলগঞ্জ উপজেলায় ৮০০ হেক্টর ও কুলাউড়ায় উপজেলায় ৬০০ হেক্টর। তিনি বলেন, পানি কমতে শুরু করেছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, পানিবন্দী মানুষের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। আপনাদেরকে বলেছি, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে দ্রুত ত্রাণ বিতরণের জন্য কুলাউড়া উপজেলায় ৫০ মেট্রিক টন চাল, কমলগঞ্জ উপজেলায় ৪৫ মেট্রিক টন, রাজনগরে ১০ মেট্রিক টন ও শ্রীমঙ্গলে ৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও কুলাউড়া ও কমলগঞ্জে নগদ এক লক্ষ টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে।’