প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ ঈদের সময়ে বাড়ী-ঘরে পানি ঢুকায় নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় অন্যত্র সরে যেতে দেখা যাচ্ছে এইসব এলাকার মানুষদের। এ সকল এলাকার বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে গরু-ছাগল ও গবাদি পশুগুলো ছুটছে যে যার মত। গৃহস্থের পুকুরের মাছ পানির ¯্রােতে ভেসে গেছে। বসতভিটা এবং জিনিসপত্র পানির নিচে রেখে পানিবন্দী মানুষদের ঈদ আনন্দ মলিন হয়ে গেছে। কমলগঞ্জ উপজেলা রহিমপুর ইউনিয়নের মৌলানা আব্দুল বাছিত খান জানান, এক মাস সিয়াম সাধনার পর আনন্দের ঈদ আসে। কিন্তু এ বছর এই সময়ে ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় সে আনন্দ নেই। পতনঊষার ইউনিয়নের আনোয়ার খান বলেন, আকস্মিক বন্যার খারাপ পরিস্থিতি দেখে খুব মন খারাপ লাগছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরে নিজের ইউনিয়নের পানিবন্দী মানুষের কথা ভাবতেই মনটা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে।
দু’দিনের টানা বর্ষনে মনু ও ধলাই নদীর ভাঙনে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নি¤œাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। উজানের পানি নামার কারনে নি¤œাঞ্চলে বন্যার অবনতি হচ্ছে। শমশেরনগর-কুলাউড়া, পতনঊষার-মৌলভীবাজার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। শমশেরনগর, পতনঊষার, মুন্সীবাজার ও রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পতনঊষারে অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি ও মৎস্য খামারে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বন্যার কারনে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনালের ১২টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঈদের একদিন পূর্বে হাটবাজারে কেনাকাটায় পুরোদমে ধ্বস নেমেছে। বৃহষ্পতিবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ কমলগঞ্জ উপজেলার বন্যাদূর্গত বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে দুটি স্থানে কিছু ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মনু নদীর ৪টি ও ধলাই নদীর ৮টি নতুন ও পুরনো ভাঙন দিয়ে পানি বেরিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার নি¤œাঞ্চল শমশেরনগর, পতনঊষার, মুন্সীবাজার, রাজনগর উপজেলার কামারচাক ও কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ও হাজীপুর ইউনিয়নের বন্যার অবনতি দেখা দিয়েছে। বন্যায় শমশেরনগর, পতনঊষার, মুন্সীবাজার ও রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের প্রায় চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পতনঊষার ইউনিয়নের মনসুরপুর, শ্রীমতপুরসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। শমশেরনগর-কুলাউড়া, পতনঊষার-মৌলভীবাজার ও পতনঊষার-কুলাউড়া সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে এসব সড়কে যাতায়াতকারী লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। খাবার ও নিরাপদে রাখতে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নি¤œাঞ্চল এলাকার কৃষকরা। বাড়িঘর থেকে মালামাল ও গবাদি পশু নিয়ে দোকানপাট সহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন মানুষ। পানির ¯্রােতে রাস্তাঘাটের অসংখ্য স্থানে গর্ত ও ভেঙ্গে পড়েছে। উপজেলার রোপিত দুই হাজার হেক্টরের আউশ ক্ষেত ও তিনশ’ হেক্টরের সবজি ক্ষেত বিনষ্ট হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২শ’টি মৎস্য খামার তলিয়ে ভেসে গেছে মাছ ও মাছের পোনা। বন্যার কারনে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনালের অধীনস্থ শরীফপুর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় ঈদের একদিন পূর্বে শমশেরনগর ও ভানুগাছ বাজারে কেনাকাটায় পুরোদমে ধ্বস নেমেছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান তওফিক আহমদ বাবু বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, পতনউষার ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদসহ অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। নি¤œাঞ্চলে এখনও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুকিপূর্ণ বাড়িঘর থেকে মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দীন আহমদ বলেন, বন্যায় এ পর্যন্ত ৫শ’ হেক্টর আউশ ক্ষেত নিমজ্জিত হওয়ার তালিকা করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোবারক হোসেন বলেন, বন্যার কারণে বুধবার বিকাল থেকে শরীফপুর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানান, কমলগঞ্জের বন্যাক্রান্ত এলাকায় বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কমলগঞ্জে ৪৫ টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তিনি কমলগঞ্জের নি¤œাঞ্চলে বন্যার অবনতি স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে এসব এলাকার সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া গত বুধবার থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণও শুরু হয়েছে।