রেজাউল ইসলাম, টরন্টো, কানাডাঃ
কানাডাতে ডেনফোর্থ, ভিক্ট্রিয়া পার্ক, ক্রিসেন্ট টাউন, ম্যাসি স্কয়ার, টিসডেল, ফার্মেসী, ডেনটন জায়গাগুলিকে কেন্দ্র করে বাঙ্গালিদের/ বাংলাদেশীদের আধিপত্য বিস্তারকারী এলাকা গড়ে উঠেছে। এখন এটি ‘বাংলা পাড়া’ নামে বেশ পরিচিত। এখানে বেশ কয়টি বড় বড় গ্রোসারী সপ সহ বেশ কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বেশ বাহারি নাম তাদের। মারহাবা, সরকার, আল বারাকা, মক্কা, সুইস, ঘরোয়া ইত্যাদি।
এই বাংলা পাড়া আসলে বাঙ্গালীদের স্টাটিং পয়েন্ট। অভিবাসী হয়ে যারা এখানে আসে তারা প্রথমে এই বাংলা পাড়াতেই বসবাস শুরু করে। তারপর হাটি হাটি পা পা করে যখন একটু প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হয় তখন অন্যত্র চলে যায়। কেউ হাউজ কেনে, কেউ কেনে কনডো, কেউ টাউন হাউজ, কেউ ডিটাচর্ড, কেউবা সেমি ডিটাচর্ড । তবে বাঙ্গালীরা অন্যত্র চলে গেলেও এই বাংলা পাড়াকে কেউ ভুলে যায় না। ঘুরে ফিরে এখানে চলে আসে। এখানে যেন তারা বাংলাদেশকে খুজে পায়। দূরে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য আছে, প্রতিষ্ঠা আছে কিন্তু কেন যেন প্রান পায় না তারা। বাঙ্গালীরা এখানে এসে প্রান খুজে পায়। জানি না সবার অনুভূতি এক রকম কিনা। তবে আমার অনুভূতি এমনই।
আমার ব্যাংক একাউন্ট সিআইবিতে। এই ডেনফোর্থ শাখায় আমি যখন প্রথম আসি, কোন বাঙ্গালী ছিল না। আজ এই ডেনফোর্থ শাখায় চার জন বাঙ্গালী। তাদের দেখতে ভালই লাগে। বেশ দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এই এলাকার ব্যাংক গুলিও বুঝে গেছে এখানে কাদের আধিপত্য। তাই তারা সেই ভাবে নিয়োগ দিয়েছে।বাঙ্গালীদের এই আধিপত্য ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে।
এখানে বড় ধরণের ঈদের জামাত হয়। হয় বাঙ্গালিদের মেলা। বাঙ্গালী যেখানেই যায় উৎসব খুজে নেয়। মেলাকে ঘিরে থাকে হরেক রকম আয়োজন। বিভিন্ন ধরনের খাবার আইটেম, নানা বাহারি পোষাক, শাড়ি, গহনা, গান বাজনা মেলা জুড়ে এক অভূতপূর্ব প্রান চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
এখানে যারা রাজনীতি করেন, বিভিন্ন পার্টির সঙ্গে যুক্ত তারা মাঝে মধ্যেই এখানে ধরনা দেন। কারন তারা জানেন এখানে বড় একটা ভোট ব্যাংক আছে। বড় বড় নেতারা ঈদের জামাত শুরুর আগে আমাদের সংস্কৃতি, ধর্মীয় আবেগ, অনুভূতিকে ধারন করে বক্তৃতা দেন। অন্য ধর্ম, অন্য কালচারের হলেও তারা এখানে আসার আগে, বক্তৃতার আগে আমাদের কালচার, ধর্ম সম্পর্কে জেনে নেন। বক্তৃতার সময় একটি বাক্যও তারা অহেতুক ব্যয় করেন না।
তবে একটা বিষয় খুব ভাল লাগে। টরেন্টোর যেখানেই যাই দু একটা বাঙ্গালী/বাংলাদেশী খুজে পেতে কষ্ট হয় না। হয়ত কোন সুপার মার্কেটে শপিং করছি হঠাত বাঙ্গালী কন্ঠস্বর শুনে চকিত হয়ে যাই, কোনও রেস্টুরেন্টে খাচ্ছি পাশের টেবিলেই হয়ত কেউ বাংলায় আলোচনায় মত্ত, এমন প্রায়ই হয়ে থাকে। নায়াগ্রাতে যত বার গিয়েছি, বাঙ্গালী পেয়েছি। তারা থাকবেই। ভাল লাগে দেখতে।বাঙ্গালীরা কত দূর পাড়ি দিয়ে, কত কষ্ট করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাচ্ছে। গর্ব করার মত বিষয়।
তবে এখানে টরেন্টোতে এসে যে যেখানেই যান না কেন ডেনফোর্থ বাঙ্গালী পাড়াকে ভুলে যাবেন না যেন। যে যেখানেই যাই শেকড়ের সন্ধানে ঘুরে ফিরে এখানে আসতেই হয়। এখানে আমি আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি খুজে পাই। অন্য যারা আছেন তারাও হয়ত নিজ মাতৃভূমিকে খুজে পান এই বাঙ্গালী পাড়ায়। বাংলাদেশ একটি অনুভূতির নাম, আবেগের নাম। আমরা এই অনুভূতি, আবেগ নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।