সাইফুল ইসলাম
উজানে ভারতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গত ৪৮ ঘন্টায় মৌলভীবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মনু নদীর পানি শহরের চাদঁনীঘাট কাছে বিপদ সীমার ৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার দিবাগত রাত থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদী ও কুলাউড়া উপজেলার মনু নদী পানি কমতে শুরু করে। সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন সড়ক ও বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি নেমে যেতে শুরু করেছে।
ইতোমধ্যে কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের পতনউষার ইউনিয়নে ও শরীফপুরে আটকা পড়া পানিবন্দী মানুষজনকে উদ্ধারে সেনাবাহিনীর কাজ শুরু হয় শনিবার থেকে। শরীফপুর-শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়ক দেবে ভেঙে পড়া কালভার্টটি আরও কিছুটা দেবে যাওয়ায় শরীফপুরের লোকজনের চলাচলের জন্য সড়ক জনপথ বিভাগ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।
রবিবার থেকে কমলগঞ্জের শমশেরনগর-কমলগঞ্জ সড়ক থেকে বন্যার পানি নেমে যায়। একইভাবে শমশেরনগর-মৌলভীবাজার সড়ক থেকেও পানি নেমে যায়। পানি নেমে যাওয়ায় সকাল থেকে এ দুটি সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে। তবে শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়কের শমশেরনগর বিমানবন্দর এলাকায় সড়কের ওপর এখনো তিন ফুট পরিমাণ পানি থাকায় এ পথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তাও আজ থেকে কমতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চল শমশেরনগরের সতিঝিরগাঁও, মরাজানের পার, রাধানগর, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের রুপশপুর, বনবিষ্ণুপুর ও পতনউষার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বসতবাড়ি থেকে পানি নেমে যেতে শুরু করে।
এছাড়াও মৌলভীবাজার শহর ও শহরতলীর এবং বড়হাট এলাকায় সিলেট ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং মৌলভীবাজার রাজনগর ও কুলাউড়া সড়কের বন্যার পানি কিছুটা নেমে গেছে।
শনিবার সেনাবাহিনীর দুটি দল স্পিডবোট নিয়ে কুলাউড়ার শরীফপুরে ও হাজীপুর ইউনিয়নে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। রবিবার সেনাবাহিনীর একটি দল স্পিডবোট নিয়ে কমলগঞ্জের পতনউষারে হাওর এলাকাসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন,‘ রবিবার রাত থেকে মনু ও ধলাই নদীর পানি কমে আসছে। সোমবার সকাল থেকে মনুনদীর পানি ৯৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে রবিবার সকাল থেকে মনু নদীর পানি শহরের চাদঁনীঘাট কাছে বিপদ সীমার ১৫৪ সেন্টিমিটার ও বিকেলে ১৩০ সেন্টিমিটার ও রাত ১১টার দিকে মনু নদীর পানি শহরের চাদঁনীঘাট কাছে ১২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার রাতে ছিলো বিপদসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার উপরে। পানি কমতে শুরু করেছে।’
প্রসঙ্গত: মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, ১৩জুন থেকে জেলায় স্বরণকালের মনু ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট বন্যায় প্রতিরক্ষা বাঁধের ২৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত এই জেলায় ৫০ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৫৩৯০ জনকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
মৌলভীবাজার সদরে ৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে । এছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে আরো কয়েকটি খোলা হয়েছে যেখানে বিএনসিসি স্কাউটসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে খিচুরি রান্না করে বিতরণ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ৪টি টিম বন্যাদূর্গত এলাকায় কাজ করছে। তারা পানিবন্দিদের উদ্ধারের কাজে ১৮টি স্পীডবোট ব্যবহার করছে। নগদ ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ৭৪৩ মেট্রিক টর চাল বরাদ্ধ করা হয়েছে। মজুদ আছে ১ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন চাউল। আরো ৫০০ মেট্রিক টন চাউল ও নগদ ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ হয়েছে। ৩ হাজার শুকনো খাবারের পেকেটের আশ্বাস মিলেছে। শহরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবির ৪টি গাড়ি টহল দিচ্ছে। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে ৭৪টি মেডিকেল টিম বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ করছেন।’