- শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ও মির্জাপুর ইউনিয়নের প্রধান সড়কটি পথচারী ও যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে এই সড়ক সংস্কারের আশা দিয়ে আসলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অবশেষে যেখানে সেখানে ভেঙ্গে পরা ঝুকিপূর্ণ এই সড়কটি সংস্কারের কাজে নেমে গেছেন এলাকাবাসী।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকৌশলী সঞ্জয় মোহন সরকার বলেন- ভূনবীরের রাস্তায় ইতোপূর্বে ওই সড়কে ৫ কিলোমিটারের মতো সংষ্কার কাজ করা হয়েছে। বাকি কাজের জন্য উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই টেন্ডারকলের মাধ্যমে এ রাস্তায় কাজ শুরু হয়ে যাবে। এরপর পাঁচ মাস অতিক্রম হয়ে গেলেও রাস্তাটিকে কোন কাজ শুরু হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান। ফলে বাধ্য হয়ে স্থানীয় যুবক ও তরুণরা গ্রামবাসীর জীবনঝুঁকি এড়াতে নিজেরাই ইট-বালি দিয়ে কোন রকমে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইট, বালি, মাটি, বাঁশ, টুকরি, কোদাল, ইট ভাঙ্গার হাতুরি, দা, খুন্তি ইত্যাদি নিয়ে সড়ক সংস্কারের কাজে ব্যস্ত যুব ও তরুণরা। এদের কেউ ইট বিছানোর কাজে ব্যস্ত, কেউ রাস্তার পাশের জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তা ভরাটে আবার কেউ বড় অংশের ভাঙ্গানের সামনে বাশের খুঁটি পেতে দেওয়ার কাজে। কেই কেউ ব্যস্ততম রাস্তার বিভিন্ন যানবাহনকে এই কাজের ফাকে চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছে। তাদের সাথে আলাপকালে লুৎফুল হক, জালাল আহমেদ সেলিম, এনামুল হকসহ আরো অনেকেই জানায়, দুই ইউনিয়নের দীর্ঘ পথের এই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিয়ে আসছেন। কিন্তু সরকারি কাজের অপেক্ষা করতে করতে রাস্তাটি ক্রমেই মরণ ফাঁদে পরিণত হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় নিজেদের স্বার্থে নিজেরাই কাজে লেগে গেছি।
এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই রাস্তাটির বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। বর্তমানে রাস্তাটির যেখানে সেখানে বড় বড় ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় এ পথে যান চলাচলের অচলাবস্থা দেখা দেয়। অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে এ রাস্তায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। রাস্তার যত্রতত্র ভাঙনের ফলে একদিকে যেমন যান চলাচল বিঘœ ঘটে অন্যদিকে জনজীবনে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঘটছে নানা দূর্ঘটনা। ভয়ে ও উৎখন্ঠায় পথে পারি দেয় গ্রামবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শ্রীমঙ্গল থেকে ভূনবীর চৌমুহনা হয়ে ভূনবীর হতে মির্জাপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ কিলোমিটারের সড়কটির যত্র-তত্র ভাঙ্গা। রাস্তার কিনার ঘেঁষে গার্ড ওয়াল ভেঙ্গে গিয়ে মাটি সরে গেছে অনেক স্থানে। যানবাহন চলাচলে অসুবিধা তো আছেই, পথচারীরাও পর্যন্ত ভালোভাবে চলাচল করতে পারেন না এ রাস্তা দিয়ে। গত কয়েক বছর ধরেই এ রাস্তায় বেশ কয়েকটি ভাঙন দেখা দেয়। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে রাস্তার উন্নয়নে তেমন ছোঁয়া লাগেনি দীর্ঘ দিনেও। অথচ দুই ইউনিয়নের শাশন, পাত্রীকুল, ভীমশী, ভূনবীর, গন্ধর্বপুর, বৌলাশীর, যাত্রাপাশা, ছাত্রাবট, মির্জাপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের হাজার-হাজার লোক প্রতিদিন এ রাস্তায় শহরের সাথে যোগাযোগ করেন নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে।
ভূনবীর দশরথ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের উপাধ্যক্ষ দীপংকর দাশ জানান- ভূনবীর ও মির্জাপুর ইউনিয়নের দুইটি কলেজ, তিনটি উচ্চ বিদ্যালয়, বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, হাসপাতালের সাথে প্রতিদিন কয়েক হাজার ছাত্র, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার লোকজন এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু রাস্তাটি ভেঙ্গে গিয়ে তাদের নিরাপদ পথচলা বিঘিœত হচ্ছে।
স্থানীয় সমাজকর্মী বিজয়কৃষ্ণ দাশগুপ্ত ভানু, পিনাকী দেব ও মো. তাহির মিয়া জানান, ভাঙ্গনের ফলে প্রায় প্রতিদিনই এ রাস্তায় ছোটখাটো বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষ করে রাতের বেলায় দুর্ঘটনাগুলো বেশি হয়ে থাকে। দিনের বেলায় এ রাস্তা দিয়ে স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদের পথ চলাচলেও দেখা দেয় মারাত্মক দুর্ভোগ। দীর্ঘদিন ধরেই রাস্তাটির এমন বেহাল দশা বলে জানায় তারা।
এলাকাবাসী অয়ন দেব, জনি দত্ত, প্রমথ দাশ বলেন- রাস্তাটি স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচলের উপযোগী নয়। তবুও জীবিকা নির্বাহের তাগিদে এবং যাত্রীদের চাহিদার কারণে বাধ্য হয়ে দুর্ঘটনা কবলিত এই রাস্তা হয়ে প্রতিদিন প্রায় দুই আড়াই’শ সিএনজি অন্তত হাজারবার যাত্রী নিয়ে আসা যাওয়া করছে।
এ ব্যাপারে রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে ভূনবীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. চেরাগ আলী বলেন, আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উপজেলার মাসিক সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকৌশলী বরাবরে বিষয়টি অবহিত করেছি। তথাপীও এলজিইডি কর্তৃক রাস্তাটির সংষ্কার বা মেরামতের কোন উদ্যোগ এখনও হাতে নেওয়া হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করে সমালোচনা করেন তিনি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকৌশলী সঞ্জয় মোহন সরকার বরাবরের মতোই আবারও দ্রুততম সময়েরে মধ্যে টেন্ডার কলের মাধ্যমে এ রাস্তায় কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে আশ্বস্থ করেন। এছাড়া স্থানীয়রা উদ্যোগী হয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজে নেমেছে জেনে তিনি তাদের এমন কাজের প্রসংশা করে সাধুবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকারের সকল কাজে স্থানীয়দের সহযোগিতাসূলভ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসা উচিৎ।
“ভূনবীর-মির্জাপুর সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়ে উঠেছে” শ্রীমঙ্গলে ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক সংস্কারের কাজে নেমেছে এলাকাবাস
শেয়ার করুন