- ইমাদ উদ দীন॥ বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে। আর নতুন করে বন্যা দেখা দিচ্ছে হাওর অঞ্চলে। জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলায় এখন কমিবেশি বন্যায় আক্রান্ত। মানুষের মত দূর্ভোগে পড়েছে গৃহপালিত পশুগুলোও। মানুষের বসত ভিটা যেমন পানিতে নিমজ্জিত। তেমনি গবাদি পশুগুলোর বেহাল দশা। বানের পানিতে ক্ষেত কৃষি ও রাস্ত ঘাট ডুবে যাওয়াতে এখন গো খাদ্য সংকটে পড়েছেন জেলার নদী ও হাওর পাড়ের কৃষিজীবী মানুষ। গেল ক’দিন থেকে এ সংকট তীব্র হচ্ছে। অনেক এলাকায় বানের পানিতে নিমজ্জিত থাকা ঘাস ও ক্ষেতের জমি ভেসে উঠলেও সেখান থেকে গবাদি পশু গুলোর খাদ্য সংগ্রহ করা যাচ্ছেনা। কারন ওই ঘাস প্রায় সপ্তাহ দিন পানিতে তলিয়ে থাকায় তা যেমন বিবর্ণ। তেমনি দূগন্ধযুক্তও। এজেলার নদী ও হাওর তীরের কৃষকরা গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে।
- আকস্মিক বন্যায় সহায় সম্বল হারিয়ে যেমন তাদের নিজেদের খাদ্য নেই। তেমনি উপুস থাকছে তাদের গরু,মহিষ ও ছাগল। আর হাঁস, মোরগও। গেল বছরের মত এবছরও হঠাৎ উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢল আর টানা ভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় জেলার মনু,ধলাইসহ সব কটি নদী ও হাওর। এরই সাথে জলাবদ্ধতার কারনে দূষিত হয় গো খাদ্য ঘাস,শুকনো খড় ও কুড়া। তাই এখন গো খাদ্য নিয়ে শুধুই হাহাকার। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন তাদের এলাকায় গেল ক’দিন থেকে গো খাদ্য সংকট চরম আকার ধারন করেছে। আকস্মিক বন্যায় নি:স্ব নদী ও হাওর তীরের বন্যা কবলিতদের চলছে নানা দূর্ভোগ। ঘরে নিজেদের খাবার নেই। তারপর আউশ ও সবজি ক্ষেতের জন্য মহাজন ও এনজিও সংস্থার কাছ থেকে ঋণ আনায় পাওনাদারদের তাগিদ আসছে বার বার। ক্ষেত কৃষির মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আয় রোজগারও নেই। তাই অভাবের তাড়নায় নিজেদের সংসার চালাতে অনেকটা বাধ্য হয়ে এখন লোকসান দিয়েই বিক্রি করছেন তাদের গরু,মহিষ ও ছাগল।
- নদী ও হাওর তীরের কৃষিজীবী মানুষের শেষ সম্বল গৃহ পালিত এই পশু গুলো বিক্রি করে আগামীতে ক্ষেতের জমি চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আহাজারি করছেন চাষীরা। জেলার মনু ও ধলায় নদী আর হাকালুকি,কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওর পাড়ের কৃষকরা আউশ ও বোরো ধানের ওপর যেমন নির্ভরশীল। তেমনি তাদের পালিত গরু মহিষের পুরো বছরের খাবারের ব্যবস্থা হয় ওই ধানের তুষ (কুড়া,গুড়া) আর খড় থেকে। তুষ (কুড়া,গুড়া) থেকে খাদ্য হয় মোরগ ও হাঁসেরও। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় তাদের সবই বানের পানি তলিয়ে নিয়েছে। হঠাৎ আসা প্লাবনের পানি তাদের সব সঞ্চয় গিলে খেয়েছে। মানুষের খাদ্যের মত গ্রাস করেছে গো-খাদ্যও। তাই নদী ও হাওর পাড়ের কৃষক পরিবার গুলো নিজেদের খাদ্যের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়েও দূর্ভোগে পড়েছেন। ধলাই নদীর তীরবর্তী কমলগঞ্জের মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সবুর মিয়া,করিম মিয়া, সাহেদ মিয়া, জমির আলীসহ অনেকেই জানান তাদের জমিতে আউশ ধান ও সবজি ফলিয়ে ছিলেন। জমির সব ধান ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে দিয়েছে উজান থেকে আসা ঢলের পানি। এখন তাদের ঘরে শুকনো ধান নেই,খড়ও নেই।
- বাসুদেবপুরের ঈমান উল্লাহ বলেন তার ৬টি গরুর নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েছেন। না খাওয়া উপোষ গরুগুলো গোয়ালে খাবার জন্য হাক ডাক দিচ্ছে। কিন্তু না আছে ঘাস। আর না আছে খড় কিংবা কুড়া। একই ইউনিয়নের হারুন মিয়া বলেন ঘরবাড়ি আর সবজি ক্ষেতের সাথে হাঁস,মোরগ আর মাছও হারিয়েছি।এখন দেখছি গোয়াল ঘরেও পানি থাকা আর খাদ্য সংকটে গরু গুলোও মারা যাবে। তাই তা বিক্রি করা ছাড়া এখন অন্য কোন উপায় দেখছিনা। হাকালুকি হাওর পাড়ের সাদিপুর গ্রামের কৃষক সালাম, আকুল ও বটলাই মিয়া জানান চারদিকে পানি থাকায় তাদের গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। থাকার জায়গা আর খাদ্য সংকটের কারনে তা বিক্রি করতে চাচ্ছেন।
- মনুনদী তীরবর্তী শরীপুর ইউয়িনের সঞ্জবপুর,তিলকপুর,পালকিছড়া,দত্তগ্রাম, মনোহরপুর সহ বেশ কটি গ্রামের কৃষকরা জানান আমাদেরও খাদ্য নেই। এরই সাথে গরু গুলোরও খাদ্য নেই। তাই অনেকেই তাদের গরু বিক্রি করছেন। অথবা অন্য এলাকায় তাদের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে পাঠাচ্ছেন আপদকালিন সময়ের জন্য। জেলার মনু,ধলাই ও কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যার পানি কিছু কমলেও কাউয়া দিঘি ও হাকালুকি হাওরেও এখন থইথই পানি।
- সময় যত যাচ্ছে এখন ততই হাওরে বাড়ছে পানি। কাউয়া দিঘি হাওর পাড়ের ফতেহপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষ্ণ মালাকার, গোপেশ মালাকার, রফিক মিয়া ও আশব আলী জানান গেল বছরের মত হাওরে পানি বেড়েই চলেছে। তাই গবাদি পশু নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।
- ধলাই নদী তীরবর্তী কমলগঞ্জের বাদে করিম পুর গ্রামের আবাস মিয়া ও মায়া বেগম বলেন বাড়ির আশপাশে গুরু মহিষ রাখার মত কোন জায়গা নেই। তাই গেল সপ্তাহ দিন থেকে বাড়িতে গরু,ছাগল ও মহিষ গুলি এক ঘরে বন্দি অবস্থায়। ঘাস নাই,খড় নাই। তাদের ক্ষুধার জ্বালার হাক ডাক ভালো লাগেনা। অন্য কোথাও থেকে যে খড় কিনব সেই টাকাপয়সাও এখন হাতে নাই। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন নিজে খাইতে পারছিনা আর গো খাদ্য কিনব কি ভাবে। ওদের আর না খাইয়ে রাখতে চাইনা। চোখের সামনে পোষা প্রাণি গুলোর এমন কষ্ঠ সহ্য হয় না। তাই বিক্রি করে দিব। অন্য গৃহস্তের ঘরে গিয়ে যাতে তারা শান্তিতে থাকে।
- জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, জেলা ও উপজেলা বিভাগের কর্মকর্তারা বন্যা কবলিত এলাকার গরু,মহিষ ও ছাগল পালন কারিদের তাদের গবাদি পশুগুলো পানি বাহিত নানা রোগবালাই থেকে রক্ষায় পরামর্শ দিচ্ছেন। এবং কি ভাবে এই আপদকালিন সময়ে গো খাদ্য সংগ্রহ করবেন ও খাওয়াবেন সে দিকনির্দেশনাও তারা দিচ্ছেন।
মৌলভীবাজারে বন্যা কবলিত এলাকায় চরম গো-খাদ্যের সংকট
শেয়ার করুন