চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান

  • এম ইদ্রিস আলী, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
  • বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়িসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রত্যাখান করেছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ঐক্য পরিরষদের প্যানেল নেতৃবৃন্দ।
    মঙ্গলবার রাতে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।
    সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম অলমিক এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২৪ জুন অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে ঐক্য পরিষদ, স্বতন্ত্রসহ কয়েকটি প্যানেল অংশগ্রহন করেন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচনের পূর্ব থেকে ঐক্য পরিষদের প্যানেল থেকে নির্বাচন কমিশনকে নির্বচনপূর্ব নানা অনিয়মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়।
    লিখিত অভিযোগে বলা হয়,নির্বাচনী তফশিল ঘোষনার পর পূর্ববর্তী কমিটির নেতারা ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাব থেকে বে-আইনী ভাবে টাকা উত্তোলন করেন। রাতের অন্ধকারে চা বাগানগুলোতে সংগ্রাম কমিটির প্যানেলের পক্ষে ভোটারদের মধ্যে এসব কালো টাকা ছড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া লেবার হাউসটি নির্বাচনী কাজে সংগ্রাম কমিটি প্যানেল ব্যবহার করে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে। নিয়মঅনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের তফশীল ঘোষনার পরই লেবার হাউসের সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিসহ ইউনিয়নের সবকিছু নির্বাচস কমিশন বুঝে নেয়ার কথা। কিন্তু কমিশন এক্ষেত্রে তা করেননি। এসব বিষয়েও কয়েক দফায় নির্বাচন কমিশনে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করলেও কমিশন থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
    সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সংগ্রাম পরিষদ প্যানেল কিভাবে এককভাবে নির্বাচিত হলো এটা আমাদের বোধগম্য নয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থী তার ফলাফল পাওয়ার কথা। কিন্তু অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি প্যানেল তিনটি ও সম্পাদক মন্ডলী প্যানেল তিনটি প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও ঐক্য পরিষদের পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থীর প্যানেলের ফলাফল শীট এখনো দেয়া হয়নি।
    এছাড়া রামপুর ও রশিদপুর চা বাগানের দুটি সভাপতি প্যানেল নির্বাচনে প্রার্থীতা বিষয়ে জটিলতার কারণে মহামান্য হাইকোর্ট গত ১৪ জুন শ্রম মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে ওই দুটি প্যানেলের প্রার্থীদের নির্বাচনে সুযোগ দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে রুল জারি করেন।
    কিন্তু হাইকোর্টের এই নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচন কমিশন ঐক্য পরিষদ প্যানেলের প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়নি। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাত মূলক আচরণের অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অনুষ্ঠিত নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখান করে তা অবিলম্বে বাতিলের দাবী জানানো হয়।
    সংবাদ সম্মেলনে চা শ্রমিক নেতা সুনীল কুমার মৃধা নির্বাচন কমিশনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচন কমিশন আমাদের কোন কথাই আমলে নেয়নি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে যদি নির্বাচনকালীন সময় লেবার হাউস কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এবারের নির্বাচনে লেবার হাউস বর্তমান মেয়াদোর্ত্তীণ কমিটি ব্যবহার করে কেন নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দেয়া হলো সেটাই কমিশনের পক্ষপাত দুষ্ট আচরণ বলে আমারা দাবী করি। সেজন্য আমরা নির্বাচনের আগেই বলেছিলাম এর দ্বারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। বর্তমান ইউনিয়নের মেয়াদোর্ত্তীণ কমিটির সভাপতি সম্পাদক ইউনিয়নের ব্যাংক হিসেব থেকে টাকা উত্তোলন করে তাদের নির্বাচনী কাজে ব্যয় করেন।
    চা শ্রমিক নেতা বিজয় বুনার্জি বলেন, আমি নির্বাচনের রেজাল্ট শীট কমিশনের কাছে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা আমাকে এখনো দেয়নি। আমি যত ভোটই পাই না কেন আমাকে আমার রেজাল্ট শীট তো তারা দিবে। এটা আমাদের অধিকার।
    বাংলাদেশ চা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা সুভাষ বাক্তি বলেন, আওয়ামীলীগের অনেক নেতা আমাদের ভোটে জয়ী হয়ে আবার আমাদের সাধারণ চা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চলে যায়। দেখা যায় তারা সাধারণ চা শ্রমিকদের নির্বাচনে বিএনপি পন্থি একটি গ্রুপকে সব সময় সহযোগিতা করে। আমি সেই নেতাদের নাম আজ বলবো না কারণ তারা প্রভাবশালী। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিএনপি পন্থিরা কখনও নৌকায় ভোট দেয় না, কিন্তু আমরা সব সময়ই দেই। আমাদের দলের ভেতর থেকে কিছু নেতা ওদের সহযোগিতা করেছে। এগুলো আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করবো। সুভাষ বাক্তি বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন ‘আগে তাদের একজনেরও পাকা বাড়ি-ঘর, পাজারো গাড়ী কিছু ছিল না, নেতৃত্বে আসার পর তাদের এখন এত টাকা, পাকা বাড়ি-গাড়ী কোথায় পেল’ বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
    সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চা শ্রমিক নেতা প্রদীপ কালোয়ার, নরোত্তম তাঁতী,সেলিম আহমেদ,সনতা তাঁতী,সুভা গোয়ালা,রাজেশ নুনিয়া,শ্যামলী বুনার্জী,সুকুমার দোষাদ,দয়া শংকর কৈরী,দুলন কর্মকার দুলন,দুলাল মৃধা,সঞ্জয় চৌহানসহ অন্যান্য চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
শেয়ার করুন