সিলেটে ভোটের মাঠে ‘ফ্যাক্টর’ হেফাজত

  • তুহিনুল হক তুহিন, সিলেট
  • সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিন সপ্তাহ। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রতিটি নির্বাচনের মতোই এবারও ভোটাররা পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কষছেন। দলীয় প্রতীকে এবারই প্রথম সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচনি উত্তাপ অনেক বেশি। তবে সককিছু ছাড়িয়ে গতবারের মতো এবারও আলোচনায় উঠে এসেছে হেফাজতে ইসলাম। সিলেটে ভোটের মাঠে এবার বড় ধরনের ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে চায় নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হেফাজতে ইসলাম। প্রধান দুই দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে থাকা নেতারাও যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন সিলেট হেফাজতের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে। হেফাজতের নেতাকর্মীদের নির্বাচনি প্রচারণায় যুক্ত করতে কৌশলী হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নেতারা।
  • স্থানীয় রাজণৈতিক নেতাকর্মীদের মতে, ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত তৃতীয় সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ে হেফাজতের একটি ভূমিকা ছিল। ওই বছরের মে মাসের প্রথমদিকে ঢাকার শাপলা চত্বরের ঘটনায় সিলেট সিটি নির্বাচনে বিরূপ প্রভাবে পড়ে। এরপর হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা কোমর বেঁধে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী পক্ষে কাজ করেন। যার কারণেই আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রায় ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করেন।
  • সূত্র জানায়, নগরের সুবহানীঘাটের আমকুনী হুজুরের মাদ্রাসা, কাজীরবাজারে প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের মাদ্রাসা এবং শাহজালাল (রহ.)-এর দরগাসংলগ্ন গাছবাড়ী হুজুরের বড় তিনটি আবাসিক মাদ্রাসা রয়েছে। ওই তিন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও তাদের নিয়ন্ত্রিত বহু আবাসিক মাদ্রাসা রয়েছে সিলেট নগরের ২৭টি ওয়ার্ডজুড়ে। যার কারণে সিলেটের ভোটের মাঠে তাদের অবস্থান একটু শক্তিশালী। তবে গত সিটি নির্বাচনের মতো এবার হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সিলেটে কোনও মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে নামছেন না।
  • হেফাজতে ইসলাম সিলেট মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এই সংগঠনটি কোনও দলের পক্ষে কাজ করে না। যদিও সিলেটের বিভিন্ন মাদ্রাসায় আমাদের অনুগত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রয়েছে। তবে এবার আমরা কারও পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামবো না। যদি কেউ কোনও প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারণায় নামের কিংবা তাকে ভোট দেন এটা তার একান্ত বিষয়। আমরা এতে কোনও হস্তক্ষেপ করবো না।’
  • কোনও মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে হেফাজতের প্রচারণায় নামার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে যদি আমাদের কেউ প্রার্থী হতেন তাহলে আমাদের তার পক্ষে কাজ করার সুযোগ ছিল। যেহেতু আমাদের কোনও প্রার্থী নাই। যার কারণে আমাদের প্রচারণায় নামারও কোনও সুযোগ নাই। তবে গতবারের মতো এবার আমরা সিটি নির্বাচনে কারও পক্ষে নামবো না। অনেকেই আমাদের কাছে টেনে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব বিষয়ে আমরা সর্তক রয়েছি।’
  • হেফাজত ইসলামের অনুসারি দরগাহ মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক জানান, গত সিটি নির্বাচনে ঢাকার শাপলা চত্বরের ঘটনায় ভীত হয়ে বিএনপির প্রার্থী আরিফকে ভোট দিতে জোট বেঁধে কাজ করেছিলেন তারা। তবে এবারের সিটি নির্বাচনে তাদের কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে সময়মতো যথাযথ প্রার্থীকেই তারা ভোট দেবেন। তারা আরও জানান, কিছু কিছু এলাকায় তাদের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। এতে কাউকে নিষেধ করা হবে না।
  • বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী জানান, ‘সিলেটের উন্নয়নের স্বার্থেই গত নির্বাচনের মতো এবারও ভোটাররা আমাকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করবেন। দল মতের ঊর্ধ্বে আমি সিলেট নগরের জন্য কাজ করেছি। আমি বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নিলেও ইসলামি দলগুলোতে আমার ভোট ব্যাংক রয়েছে। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সিলেটের উন্নয়নের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা তাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তারা আমাকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি ভোট দেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন।’
  • আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘সিলেটের মানুষের সেবা করে আমি মরতে চাই। এই সিলেটের মানুষের জন্য আমি আজকের কামরান। এই নগরের মানুষের দুর্দিনে আমি সবসময় পাশে থেকেছি। আমি নগরপিতা থাকাকালীন সময়ে আমার কাছে সব দলেরই মানুষ আসতো। কারণ আমাকে তারা অনেক ভালোবাসেন। শুধু হেফাজতই নয়, এবারের সিটি নির্বাচনে আমি ইসলামি দলগুলো থেকে সমর্থন পেয়েছি। এবার তারা আমাকে এই নগরের খাদেম হওয়ার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলেও কথা দিয়েছেন।’
শেয়ার করুন