থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া ৬ খুদে ফুটবলার উদ্ধার

  • আজাদুল ইসলাম আদনান:
  • থাইল্যান্ডে আটকে পড়া ১২ কিশোর ফুটবলারদের মধ্যে ৬ জনকে গুহা থেকে বের করে এনেছে ডুবুরি দল। এদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল কিশোরকে প্রথমে বের করে আনা হয়। ১৫ দিন ধরে এরা গুহায় আটকে আছে। উদ্ধার অভিযান চলছে। থাই নৌবাহিনীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টে ৬ কিশোরকে উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। থাইল্যান্ডের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, উদ্ধার ৬ জনকে এখন চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করছেন।
    বিবিসি ও সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে উদ্ধারকারী দল গুহায় প্রবেশ করে। চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রথমে সবচেয়ে দুর্বল কিশোর ফুটবলারকে বের করে আনা হয়। এরপরই আরও ৫ জন বের হয়ে আসে। উদ্ধারকারী দলে বিদেশি ১৩ জন ডুবুরি ও থাই নৌবাহিনীর ৫ জন ডুবুরি রয়েছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য তাদের প্রতিবেদনে ছিল না। চিয়াংরাই প্রদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান টোসাথেপ বুনথং রয়টার্সকে বলেন, আটকেপড়া কিশোরদের বের করে আনার পর গুহার কাছের অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্পে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
    থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহার একটি থাম লুয়াং। গত ২৩ জুন বেড়াতে গিয়ে বন্যার কারণে সৃষ্ট প্লাবনে আটকা পড়ে ফুটবল দলটি। এর ৯ দিন পর ২ জুলাই তাদের জীবিত থাকার খবর দেয় উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। তারা গুহায় ঢোকার পর হঠাৎ ভারী বৃষ্টি এবং এতে সৃষ্ট বন্যায় ডুবে যায় গুহামুখ। ভেতরেও ঢুকে পড়ে পানি। প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিল, এই গুহায় কিশোরের দল মাসব্যাপী থাকতে পারবে। তবে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, আবারও বৃষ্টির পানি গুহায় ঢুকে যেতে পারে। তাই দ্রুত তাদের বের করে আনতে আজকের এ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
    উদ্ধারকারী দলের প্রধান নারংসাক ওজতনাকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের দিনটি ডি-ডে। কিশোরেরা যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।’ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, তারা একে একে কিশোর ফুটবলারদের বের করে আনার চেষ্টা করে যাবেন। গুহার ভেতরের কর্দমাক্ত মাটি ও পানিকে এক ডুবুরি ক্যাফে লাতের সঙ্গে তুলনা করেছে। অন্ধকারের মধ্য দিয়ে আসার সময় কিশোরদের সুবিধার্থে দড়ি বাধা হয়েছে। দুজন ডুবুরি একজন কিশোরকে বের করে আনবেন। অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে গুহার প্রবেশমুখের কাছের এলাকা পরিষ্কার করা হয়েছে। সরিয়ে নেওয়া হয় উদ্ধারকারী দলের বাইরের সব লোকজন। এখন সেই এলাকায় কেবল ডুবুরি দল, চিকিৎসক ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরা রয়েছেন।
    অন্য আরেকজন অপারেশন কমান্ডার বলেন, একজন একজন করে সবাইকে বের করার মধ্য দিয়ে এই অভিযান শেষ করতে দু-তিন দিন লাগতে পারে। আর এ সময়টা নির্ভর করবে আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর। প্রথমে ডুবসাঁতারের মাধ্যমে তাদের বের করে আনার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ কিশোর সাঁতার জানে না। ডুবসাঁতারের মাধ্যমে কীভাবে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার কাদাযুক্ত ও অনেক স্থানের সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে তারা বাইরে আসবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে সামান কুনান নামের এক ডুবুরি আটকে পড়া ব্যক্তিদের অক্সিজেন সরঞ্জাম দিয়ে ফেরার পথে মারা যান। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে গত শুক্রবার উদ্ধার পরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। কিশোরদের কাছে পৌঁছাতে গুহার পাহাড়ের পেছনের দিকে অনেকগুলো জায়গায় খনন শুরু হয়। গতকাল পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক গর্ত খনন করা হচ্ছে। তবে রাতেই আবারও বৃষ্টি হয় এবং আরও বৈরী আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। তাই কর্তৃপক্ষ যা করার রোববারই করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
শেয়ার করুন