সিলেটে বিএনপির ভিন্ন কৌশল

 

 সুমন  কুমার দাশ, সিলেট

খুলনা ও গাজীপুরে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী কৌশল থেকে সিলেটে তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন ও পোলিং এজেন্ট নিয়োগে স্থানীয় প্রভাবশালীদের রাখছে। একই সঙ্গে এজেন্টদের যাতে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দিতে না পারে, সে জন্য নেতা-কর্মীদের একটি অংশকে ভোটকেন্দ্রের আশপাশে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে আরিফুল হক চৌধুরীর সমর্থনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মো. বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। দলটির নেতারা বলছেন, এতে সিলেটে বিএনপির অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে। এর ফলে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ, ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়াসহ নির্বাচনের কৌশল নিয়ে বিএনপি যে ছকে এগোচ্ছে, তার বাস্তবায়ন আরও সহজ হবে। তবে এখন তাদের দুশ্চিন্তা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, বদরুজ্জামান সেলিম এত দিন মাঠে থাকায় তা সরকারি দলের জন্য সুবিধাজনক ছিল। তিনি নির্বাচনে থাকলে ভোট যা-ই পেতেন না কেন, আরিফুল হক পরাজিত হলে বলা যেত বিএনপি দলীয় কোন্দলে হেরেছে। এখন সেই সুযোগটি আর থাকল না। এখন ক্ষমতাসীনেরা বিএনপির ওপর অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে। গতকাল বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার আগে ও পরে পুলিশের আচরণ দেখে বিএনপির নেতারা এমন আশঙ্কা করছেন। যদিও এখন পর্যন্ত সিলেটের নির্বাচনী পরিবেশ অন্য সিটির চেয়ে অনেক ভালো। রাজনৈতিক সহাবস্থান এখনো বজায় আছে।

অবশ্য বিএনপির আশঙ্কাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। এখন পর্যন্ত সিলেটে এমন কিছু ঘটেনি যে বিএনপি এ ধরনের কোনো আশঙ্কা করতে পারে।’

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কেন্দ্রের যে অবস্থান, তাতে সিলেটে জোরজবরদস্তি বা অন্য কৌশল করে দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার কোনো নির্দেশনা নেই। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি দলীয় ঐক্যকে সংহত করে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে।

এ লক্ষ্যে দলের মেয়র পদপ্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান জনসংযোগ কর্মসূচি বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। কামরান গতকাল শহরের কুশিঘাট ও কুয়ারপাড় এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি এবং তাদের জোটের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে। এটিকে সামাল দিতে না পেরে তারা সরকারের বিরুদ্ধে অবান্তর কথা বলছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে। এসব করেও নৌকার বিজয় ঠেকানো যাবে না।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাতেই সিদ্ধান্ত হয় যে বিদ্রোহী বদরুজ্জামান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান ও নাজিমউদ্দিন আলম তাঁকে সম্মত করান। এ খবর জানাজানি হয়ে গেলে সকাল থেকেই বদরুজ্জামানের বাসার সামনে পুলিশ আসে। পরে অবস্থান বদলে তিনি শহরের কুমারপাড়ায় আরিফুল হকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এরপর তিনি আরিফুল হকের বাসায় গেলে ওই গলিতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে পুলিশ বাড়ির সামনের দিকটা ঘেরাও করে বিএনপির নেতাদের গাড়ি তল্লাশি শুরু করে। ছুটে এসে আরিফুল হক এর প্রতিবাদ জানান এবং কোনো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হলে শহরজুড়ে প্রতিরোধ সৃষ্টি করা হবে বলে পুলিশকে সতর্ক করেন।

উপস্থিত কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতেই তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গোপনীয়তার স্বার্থে তা বলা যাচ্ছে না। এখানে হয়রানির যে অভিযোগ মেয়র প্রার্থী করছেন, সেটা ঠিক নয়।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিনিময়ে বদরুজ্জামান সেলিমকে বহিষ্কার করা সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদটি ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় বদরুজ্জামানের সঙ্গে তাঁর মা জৈবুন্নেছা ও স্ত্রী হেনা সেলিম, বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, নাজিমউদ্দিন আলমসহ সিলেটের সকল পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্যে আরিফুল হক চৌধুরী পুলিশের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, একজন প্রার্থী তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এতে পুলিশের এত মাথাব্যথা কেন?

দলটির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, খুলনা ও গাজীপুরের অভিজ্ঞতা থেকে সিলেটে বিএনপি প্রতিরোধমূলক কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০১টি নির্বাচনী কেন্দ্রের জন্য আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বুধবার রাতে নগরের মিতা কমিউনিটি সেন্টারে ২৭টি ওয়ার্ডের সভাপতি থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পর্যন্ত নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিলেটে বিএনপির সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান।

জানা গেছে, রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে নেতাদের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, যাঁরা পোলিং এজেন্ট হবেন, তাঁদের ভোটকেন্দ্রে শক্ত অবস্থানের মানসিকতা থাকতে হবে।

শেয়ার করুন