‘সরকার লিখিতভাবে পদক্ষেপ নিলে আমরা রাজপথ ছেড়ে দেবো’

  • বিশেষ প্রতিনিধি:
  • রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থা নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেছে,অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকার লিখিতভাবে পদক্ষেপ নিলে আমরা রাজপথ ছেড়ে দেবো। বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) উত্তরায় হাউজ ব্রিল্ডিংয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীদের পক্ষে মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী মৌরী তানিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে এ কথা জানায়।
  • তানিয়ার অভিযোগ, ‘সড়কে কেউ আইন মেনে চলে না, যারা সিগন্যাল বোঝে না, তারাও বাসের চালক। লাইসেন্স নেই কিন্তু চালকরা সড়কে গাড়ি চালায়, গাড়ির ফিটনেসও নেই। চালকদের বেপরোয়া গতি আর অদক্ষতার কারণে আমাদের ভাই-বোন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। তা আমরা মানবো না। আমরা চাই নিরাপদ সড়ক, যেখানে সবাই আইন মেনে চলবে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকার লিখিতভাবে পদক্ষেপ নিলে আমরা রাজপথ ছেড়ে দেবো।’
  • আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোনও চালক সড়কে গাড়ি বের করতে পারবে না। ফিটনেস না থাকলে সড়কে গাড়ি চলবে না।
  • আরেক শিক্ষার্থী উদয় জানায়, ‘সড়কে বাস চাই না, একথা তো আমরা বলিনি, সরকার বাস বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা বলেছি, যাতে কোনও পরিবহনই ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া সড়কে না বের হয়’
  • শিক্ষার্থীরা বলছে, ‘মানুষের মৃত্যুর খবর শুনে সরকারের যে মন্ত্রী হাসে, তাকে এই রাষ্ট্রে কোনও দরকার নেই। তার জানায়, ‘আমাদের ভাই-বোন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে, আর মন্ত্রী হাসে, সে রাষ্ট্রের কী উপকার করবে। তার মুখের হাসি ও ওই মুখ আমরা দেখতে চাই না।’
  • এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে টঙ্ড়ী ও রাজধানীর সংযোগস্থল আব্দুল্লাহপুর থেকে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে শিক্ষার্থীরা। এই পথ দিয়ে হাউজ ব্রিল্ডিং মোড়ে শিক্ষার্থীদের বিশাল অবস্থান দেখা গেছে। এছাড়া, উত্তরার বিভিন্ন অলি-গলির মুখেও অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সেখানে মোটরসাইকেল চালক ও প্রাইভেট কারের চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তল্লাশি করে দেখছে শিক্ষার্থীরা।
  • বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী পলাশ, উৎস, ফাহিম, জন সবাই লাইসেন্স চেক করছেন। যাদের ড্রাইভিং লাসেন্স নেই তাদেরকে আটকে হাউজ ব্রিল্ডিং মোরে থাকা ট্রাফিক পুলিশের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে তাদের মামলা দেওয়া হচ্ছে।
  • শিক্ষার্থী পলাশ  জানায়, ‘আমরা যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্স তল্লাশি করছি, যাদের আছে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, আর যাদের নেই, তাদের ট্রাফিং পুলিশের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। সকাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সবারই লাইসেন্স পাওয়া গেছে, তবে একজন লাইসেন্স দেখাতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিচ্ছে৷’
  • হাউজ ব্রিল্ডিং পুলিশ বক্সে উপস্থিত থাকা ডিএমডি’র ট্রাফিক (উত্তর) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রাহিমা আক্তার লাকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন যানবাহনের কাগজ-পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করছে। যদি কারও না থাকে তবে ধরে আমাদের কাছে নিয়ে আসছে আর বলছে— মামলা দেওয়ার জন্য৷ এটা খুব ভালো। শিক্ষার্থীরাও সবাইকে সচেতন করছে। তাছাড়া, প্রতিনিয়ত আমরাও যানবাহন তল্লাশির মাধ্যমে মামলা দিয়ে থাকি। আমরা শিক্ষার্থীদের এই কাজের জন্য সাধুবাদ জানাই।’
  • ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. বুলবুল  বলেন, ‘সকাল থেকে এ পর্যন্ত ১৫টি গাড়ি শিক্ষার্থীরা ধরে নিয়ে এসেছে, যাদের লাইসেন্স নেই। আমরা মামলা দিয়ে দিচ্ছি। তারা কোনও অজুহাত শুনছে না, প্রেস হোক আর যাই হোক লাইসেন্স নেই তো আমাদের কাছে নিয়ে আসছে।’
  • সকাল থেকে আকাশ মেঘলা থাকলেও দুপুর ১২ টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। তবে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে সড়কে ভিজে ভিজে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে মাথায় ছাতা নিয়ে হলেও সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন।
  • এদিকে, সাধারণ মানুষও। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করছে। তারা বলছে, শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিলো। এবার পরিবর্তনের দিন এসেছে। সড়কে চালকরা আইন মানবে না, পুলিশ অপরাধ দেখেও ছেড়ে দেবে তা বন্ধ হতে চলেছে।
  • পথচারী ইমরান আহমেদ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চারকি করন। তিনি বলেন, ‘আমার অফিস মিরপুরে। প্রতিদিন যাতায়ত করতে হয় বাসে। কিন্তু মিরপুরের বাসগুলো এত বিশৃঙ্খলভাবে এত বেপরোয়া গতিতে চলে, তা দেখে বাসের ভেতরে থাকা যাত্রীরাও আঁতকে ওঠে। এগুলো ঠিক করা দরকার।’
শেয়ার করুন