- বিশেষ প্রতিনিধি
- নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে থাকা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা অনুরোধ জানাই, অভিভাবকরা নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের সন্তানদের রাস্তা থেকে সড়িয়ে নেবেন। একইসঙ্গে প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের আহ্বান জানাবো, তাদের স্কুলের ছাত্ররা যাতে কোনোক্রমেই রাস্তায় না আসে। কেউ রাস্তায় আসলে দয়া করে ফেরত নিয়ে যাবেন।’ বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) বিকালে র্যাব সদর দফতরে তিনি এসব কথা বলেন।
র্যাব ডিজি বলেন, ‘দুজন ছাত্র খুবই দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাস চাপা পড়ে নিহত হয়েছে। রাজিব এবং দিয়া। আমাদের শোক প্রকাশের ভাষা নেই। এ ধরনের জগন্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের আত্মত্যাগ করতে হবে, তাদের মৃত্যুর শিকার হতে হবে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। দুই নিষ্পাপ শিশুর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। গত ২৯ তারিখ এই ঘটনার পর ২৪ ঘন্টার কম সময়ের মধ্যে যে দুটি বাসের কর্মকাণ্ডের জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেপরোয়া যান পরিচালনার জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। জড়িত চারজনকে আমরা গ্রেফতার করি। যে বাসটি রাজিব ও দিয়াকে চাপা দেয় সেই গাড়ির মালিককে আমরা পরদিন ধরেছি। মোট পাঁচজনকে আমরা গ্রেফতার করি। প্রধানমন্ত্রী আজকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ করে টাকা অনুদান দিয়েছেন। এই বিষয়ে মামলা হয়েছে। ডিবি এটা তদন্ত করছে।’
একটি গোষ্ঠী ছাত্রদের আন্দোলনকে ভিন্নপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ঘটনার পরপরই ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসে। আমরা তাদের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারি। সহপাঠী বা বন্ধুর মৃত্যুতে আঘাত পেয়ে তাদের মধ্যে আবেগ কাজ করতে পারে। তাদের এই আবেগকে আমরা এপ্রিশিয়েট করি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, গত চারদিন ধরে পুরো ঢাকা শহর অচল করার একটা অপচেষ্টা চলছে। গত দুদিন ধরে দেখছি ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠীও এদের সঙ্গে একত্রিত হচ্ছে এবং নিষ্পাপ শিশুদের ভিন্নপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছে।’
র্যাব প্রধান উল্লেখ করেন, ‘গত চারদিনে আজকেসহ ৩১৮টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। আজকের সাইন্সল্যবের একজন সার্জেন্টকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। সেগুনবাগিচা একটি সরকারি অফিসে হামলা করা হয়েছে। কাফরুল থানায় কিছুক্ষণ আগে হামলা হয়েছে। অবুঝ শিশুদের স্বতস্ফূর্ত আবেগকে ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী পুরো বিষয়টা ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে চাচ্ছে। এই চারদিন ধরে ঢাকা শহরের জনগণ জিম্মি। পরিবহণ ব্যবস্থা অচল, মানুষ কোথাও যেতে পারছেন না। এই অবস্থার উত্তরণ দরকার।’
র্যাব ডিজি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই ঘটনার পর যেসব আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল তা নেওয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রত্যেক অভিভাবককের প্রতি আহ্বান জানাবো, সন্তানদের নিরাপত্তার প্রতি খেয়াল রাখার জন্য। যাতে অপচেষ্টাকারীরা শিশুদের ব্যবহার করতে না পারে। র্যাব-১ অফিসের সামনে একজন ছাত্র ও আরও কিছু লোকজনকে মারপিট করতে দেখেছি। ফলে যারা রাস্তায় আছে, তারা নিরাপদ নাও থাকতে পারে। এই সুযোগে যেসব সন্ত্রাসী রাস্তায় নেমেছে তারা যেকারো ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা দেখছি কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাস্তায় এসছে। তাদেরকে অনুরোধ করবো, আমরা গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি। আইনের শাসনের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। যেসব আইনি কার্যক্রম নেওয়ার দরকার ছিল তার সবই করা হয়েছে। ফেসবুক বা সোসাল মিডিয়ায় কিছু মিথ্যে বানোয়াট গুজব ছড়ানো চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি স্বার্থান্বেসী মহল এটি করছে। আমরা আহ্বান জানাবো কেউ গুজবে কান দিবেন না। গুজব দ্বারা কোনোভাবেই বিপথে যাবেন না।’
সন্তানদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে র্যাব ডিজির আহ্বান
শেয়ার করুন