বিশেষ প্রতিনিধি
সরকারকে আগামী রবিবার থেকে নিরাপদ সড়ক সংক্রান্ত ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের শর্ত দিয়ে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের নেতা (নিচসা) ইলিয়াস কাঞ্চন। সড়ক দুর্ঘটনারোধে কার্যকর পদক্ষেপ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শুক্রবার (৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশে এ আহ্বান জানান তিনি। মানববন্ধনে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের কাজ আগামী রবিবার (৫ আগস্ট) থেকে শুরু করতে হবে। যদি এটা না হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমি নিজেও আন্দোলনে থাকবো এবং রাস্তায় নামবো।’ সড়ক দুর্ঘটনারোধে কার্যকর পদক্ষেপ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আজ শুক্রবার (৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে ইলিয়াস কাঞ্চনের সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা)। সকাল সোয়া ১১টার দিকে ইলিয়াস কাঞ্চন আনুষ্ঠানিকভাবে মানববন্ধন শুরু করেন। তবে এর আগে সকাল ১০টা থেকেই বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে মানববন্ধনে যোগ দেন। মানববন্ধন ও সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয় কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সেফ দ্য রোড, সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি ও ইনছানিয়াত বিপ্লব, বাংলাদেশ। এছাড়া রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের কলেজের ব্যানারে মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশ নিয়েছেন অনেকেই। সম্প্রতি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পায়েলের মৃত্যু এবং ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এ মানববন্ধনের ডাক দেন ইলিয়াস কাঞ্চন। সমাবেশে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে দাবি আপনারা মেনে নিয়েছেন, তা আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার হয়তো কার্যকর করা সম্ভব নয়। কিন্তু রবিবার থেকেই যেন আমরা দেখতে পাই সেই কাজগুলোতে আপনারা হাত দিয়েছেন। প্রথম কাজ হলো, যারা নিয়ম-শৃঙ্খলার জন্য রাস্তায় থেকে গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করেন তাদের লাইসেন্স ঠিক করা। কারণ, তাদের নিজেদেরই লাইসেন্স নেই। তাদের ডিপার্টমেন্ট, মন্ত্রণালয় থেকে যেন নির্দেশনা আসে তাদের লাইসেন্স ঠিক করার জন্য। যারা ডান্ডাওয়ালা (পতাকার স্ট্যান্ড) গাড়ি ব্যবহার করার উপযুক্ত নন, তারা ডান্ডাওয়ালা গাড়ি ব্যবহার করেন। যারা দেশ চালাচ্ছেন, তারাই উল্টোপথে গাড়ি চালাচ্ছেন। তারা বলেন, আমরা আর করবো না, আমরা দুঃখিত। আমরা সন্তানদের কাছ থেকে শিখেছি আমরা আর করবো না, বাবারা তোমরা ঘরে ফিরে যাও। এভাবে বলেন, নিশ্চয় আমাদের সন্তানরা ঘরে ফিরে যাবে। আপনারা যদি কাজ শুরু করে দেন তাহলে আমি অবশ্যই বলবো আমার সন্তানরা যেন ঘরে ফিরে যায়।’
.আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমার সন্তানদের আমি বলতে চাই, তারা যেনও একটি গাড়িও ভাঙচুর না করে। কারণ, এই ভাঙচুরের কারণে সুযোগসন্ধানী লোকেরা ১০টি বা ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করবে। বাবারা-মায়েরা, তোমরা খেয়াল রাখবে তোমাদের আন্দোলন কেউ যেনও বানচাল করতে না আসে। তোমাদের মধ্যে যেন অপশক্তি ঢুকে না যায়, এটা লক্ষ রাখতে হবে। সুশৃঙ্খল, সুনিয়ন্ত্রিতভাবে এই কাজটি করে যাও। আমি আছি তোমাদের পাশে এবং থাকবো। এদেশের মানুষের জন্য যতদিন সড়ক নিরাপদ না হবে, শেষ রক্তবিন্দু যতদিন থাকবে, শেষ নিঃশ্বাস যতদিন থাকবে, এ সংগ্রাম চালিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘সব অধিদফতর যদি তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করে দেয় তাহলে আমার সন্তানদের উদ্দেশে বলবো, তোমরা অবশ্যই ঘরে ফিরে যাবে, লেখাপড়া করবে। বাবা-মায়ের কাছে থাকবে। প্রয়োজনে আবারও যদি কোনও অসুবিধা হয়, তখন অবশ্যই আমরা তোমাদের সঙ্গে থেকে আবার রাজপথে নামবো।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘এই আন্দোলনের আপনারাই প্রধান সৈনিক। এই আন্দোলন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন।’
অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইলিয়াস কাঞ্জন বলেন, ‘জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনার আপনাদের সন্তানদের পাশে থাকুন। আপনারা অস্থির হয়ে যাবেন না। ভালো কিছু পাওয়ার জন্য অনেক সময় কষ্ট স্বীকার করতে হয়। আপনারা খেয়াল করবেন যেন কোনও সুযোগসন্ধানী এই আন্দোলন বানচাল করতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একদিকে আমাদের সন্তানদের ঘরে যেতে বলছেন, অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট করছে। তাহলে কোনটা চলবে?’
বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত টানা একঘণ্টা মানববন্ধন ও সমাবেশ চলে। তবে সকাল ১০টা থেকেই বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তার দুই পাশ বন্ধ করে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে (র্যাডিসন হোটেলের উল্টোদিকে) বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম নিহত হয়। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর সড়কের বাঁ-পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।.
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা জাবালে নূর পরিবহনের ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় ও শতাধিক বাস ভাঙচুর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ ও নৌপরিবহনমন্ত্রীর অনৈতিক বক্তব্যের প্রতিবাদসহ ৯ দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। গত পাঁচ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা রাজধানীতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করছে তারা।
বুধবার (১ আগস্ট) বিকালে বাস মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) রাজধানীসহ সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়। ছুটির মধ্যেও রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা।