আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নামলে সব দোষ আমার গায়ে চাপিয়ে দেওয়া হতো : ইলিয়াস কাঞ্চন

  • নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে না থাকার অভিযোগ তুলে ফেসবুকে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিচসা) আন্দোলনের নেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের সমালোচনা হচ্ছে। এই সমালোচনার জবাব দিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে, তাদের পাশে সরাসরি আমি না থাকার কারণে অনেকে ফেসবুকে বলেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন কই, তিনি কোথায় আছেন? তাদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, আমি যা করি, বিবেক বুদ্ধি বিবেচনা দিয়েই করি। পেছনের দিকে আমি তাকিয়ে দেখি। এদেশে কী হয়, কী হয়েছিল, কীভাবে অন্যান্য আন্দোলন থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি সেই আন্দোলনগুলোর নাম বলতে চাই না। আমিও যদি এই শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতাম তাহলে এই সব দোষ আমার গায়ে চাপিয়ে দেওয়া হতো। এই আন্দোলনটিকে বানচাল করা হতো। আজ তারাই (শিক্ষার্থীরা) তাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করছে। এই সন্তানেরা আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ইলিয়াস কাঞ্চন যে ডাক দিয়েছে, ২৫ বছর ধরে যে আন্দোলন করছে, আমার সন্তানরা আমাকে ভুলে যায়নি। নিরাপদ সড়ক চাই দাবি নিয়েই তারা রাস্তায় নেমেছে। অন্য কিছু নিয়ে নয়।’

  • শুক্রবার (৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। সড়ক দুর্ঘটনারোধে কার্যকর পদক্ষেপ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আজ শুক্রবার (৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে ইলিয়াস কাঞ্চনের সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা)। সকাল সোয়া ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই মানববন্ধন হয়।

  • নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কীভাবে পালিত হবে তা জানতে চেয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনার এই নির্দেশনা কারা, কীভাবে বাস্তবায়ন করবে এটি জাতি জানতে চায়। সারা দেশের মানুষ এই দাবির পক্ষে।’

  • তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একদিকে আমাদের সন্তানদের ঘরে যেতে বলছেন, অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট করছে। তাহলে কোনটা চলবে?’

  • মানববন্ধন শেষে সমাবেশে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, যে পরিবহন সেক্টরের ভয়ে আপনারা আইন প্রণয়ন করতে পারেন না, নতুন আইন করতে পারেন না, আমাদের কোমলমতি সন্তানরা রাস্তায় নেমে তাদের বিষয়ে আজ একটি সুযোগ করে দিয়েছে। আপনারা কঠোর আইন প্রয়োগ করুন। সড়কে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ফিরিয়ে আনুন। আপনারা যে ব্যবস্থা নেবেন হয়তোবা পরিবহন সেক্টরের কিছু মানুষ তার বিরোধিতা করতে পারে। কিন্তু সারাদেশ আপনাদের পক্ষে থাকবে। আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, সারা দেশ যদি আপনাদের পাশে থাকে তাহলে কিন্তু আইন প্রয়োগ করা ও নতুন আইন তৈরি করা আপনাদের জন্য কষ্টের বিষয় হবে না।’

  • ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘২৫ বছর আগে রক্তক্ষরণ নিয়ে স্বজন হারিয়ে আমি এ আন্দোলন শুরু করেছিলাম। যাতে আমার সন্তানের মতো, আমার মতো এই ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশের মানুষ যেনও আর সড়কে নিষ্পেষিত না হয়। আজকে এই অবস্থা থেকে বাঁচতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছে। আজকের এই মানববন্ধনের মাধ্যমে আমি সরকারকে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, এটি মানুষের প্রাণের দাবি। এদেশের মানুষ আর সড়কে মরতে চায় না। পঙ্গুত্ববরণ করতে চায় না। আমরা যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলাম সড়ক নিরাপত্তার জন্য, সেটি যদি আগে থেকে বাস্তবায়ন করা হতো, তাহলে আজ এই পরিণতি দাঁড়াতো না।’

    ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আগামী ৫ তারিখে আমার সন্তানের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। সেটা আমি ক্যানসেল করেছি। আমি আমার একজন সন্তানের কাছে যাচ্ছি না, আমি আমার এদেশের হাজারো সন্তানের কাছে দাঁড়িয়ে আছি। যে কমিটি হয়েছে সেই কমিটিতে থেকে যেন সুষ্ঠু বিচার আনতে পারি সেজন্য আমি যাওয়া বন্ধ করেছি।’

শেয়ার করুন