শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বহিরাগত কারা?

  • শেখ জাহাঙ্গীর আলম

    .

    রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও একই কলেজের ছাত্র আব্দুল করিম রাজু নিহত হওয়ার পর থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, এ আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে গেছে ‘সুবিধাবাদীরা’। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ঢুকে পড়েছে। এ ব্যাপারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, আন্দোলনে কিছু বহিরাগত প্রবেশের অভিযোগ মিথ্যা নয়। তবে এদের রাজনৈতিক বা অন্য কোনও পরিচয় আছে কিনা তা তারা জানে না।আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের দাবি, নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনে প্রবেশ করে বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের হাতে আপত্তিকর কথা লেখা প্ল্যাকার্ড তুলে দিয়ে সটকে পড়ছে। আবার কখনও কখনও তারা শিক্ষার্থীদের ভিড়ে মিশে ‘অশ্লীল’ স্লোগান দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, এই বহিরাগতরা ‘সুবিধাবাদী’। এরা নিজেদের বিশেষ কোনও ফায়দা হাসিলের জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। আর সরকারের দাবি, এই বহিরাগতরা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। এরা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাইছে।

    আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছে, তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে; ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খলার জন্য নয়। সরকার তাদের দাবি মেনে নিলে তারা আন্দোলন থেকে সরে যাবে। ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খলার যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা বহিরাগতরা করেছে। তবে ওই বহিরাগতদের রাজনৈতিক বা অন্য কোনও পরিচয় আছে কিনা তা তারা জানে না।

    .গাড়ি ধরে শিক্ষার্থীরা, মামলা দেয় পুলিশ

    বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তাদের আন্দোলনের পেছনে কোনও কমিটি, পরিষদ বা নেতা নেই। যে যার অবস্থান থেকে তারা এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

    গতকাল বৃহস্পতিবারও নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর উত্তরা, বিমানবন্দর সড়ক ও শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে দেখা যায়, রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে যানবাহনের কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স তল্লাশি করছে শিক্ষার্থীরা। যেসব চালকের কাছে লাইসেন্স ও যানবাহনের কাগজপত্র পাওয়া যায়নি তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে মামলা দেয় তারা। তবে ভিড়ের মধ্যে বেশ কিছু কম বয়সী শিক্ষার্থীর হাতে পুলিশকে নিয়ে আজেবাজে কথা লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের জটলার মধ্য থেকে মাঝে মাঝেই গালাগালপূর্ণ স্লোগানও ভেসে আসতে শোনা যায়।

    রাজধানীর হাউজ ব্রিল্ডিংয়ের সামনে গিয়েও দেখা যায়, রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে যানবাহনের কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স তল্লাশি করছে শিক্ষার্থীরা। তবে এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উসকানিমূলক পরামর্শ দিতে দেখা যায় কয়েকজনকে। এ সময় এক উসকানিদাতা যান চলাচল বন্ধের পরামর্শ দেয় শিক্ষার্থীদের। সে তার পাশের শিক্ষার্থীদের বলে, ‘সড়ক অবরোধ মানে কোনও যানবাহনই চলবে না। তোমরা কেন যানবাহন চলতে দিচ্ছো! সব বন্ধ করে দেওয়াই উচিত।’ তখন পাশের শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা সাধারণ মানুষকে কোনও ভোগান্তিতে ফেলতে চায় না। তাদের দাবি নিরাপদ সড়কের, যানবাহন বন্ধ করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি নয়।

    .

    এ ব্যাপারে র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছে, আমরা তাদের মানসিক অবস্থাটা বুঝতে পারি। সহপাঠী বা বন্ধুর মৃত্যুতে সঙ্গত কারণে তাদের মধ্যে আবেগ কাজ করছে। তাদের এই আবেগকে আমরা এপ্রিশিয়েট করি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গত চারদিন ধরে পুরো ঢাকা শহর অচল করার একটা অপচেষ্টা চলছে। গত দুদিন ধরে দেখছি, ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠী মিশে গেছে এবং শিক্ষার্থীদের ভিন্নপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছে।’

    তিনি আরও বলেন, ‘গত চার দিনে ৩১৮টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সাইন্স ল্যাবের একজন সার্জেন্টকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। সেগুনবাগিচায় একটি সরকারি অফিসে হামলা করা হয়েছে। কাফরুল থানায় হামলা হয়েছে। শিক্ষার্থী নয়; একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।’

    .

    এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আন্দোলনে সুবিধাবাদী বা স্বার্থান্বেষী মহলের সম্পৃক্ততা দেখা যায়। আমরা আন্দোলনের বিভিন্ন ভিডিওতে শিবিরের নেতাদের দেখেছি। ছাত্রদলের নেতাদেরও দেখেছি। তাদের নিজেদের মধ্যে যে কথোপকথন তাও আমরা শুনেছি। শুনে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, তারা এই কোমলমতি শিশুদের দিয়ে এক ধরনের অপরাধ সংঘটন করিয়ে দিতে পারে। আমরা আরও দেখেছি, স্কুলের ছাত্রদের ড্রেস পরে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে বলা হচ্ছে। ছাত্রদের খাবার দিয়ে তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এই কোমলমতি ছাত্ররা তাদের সহপাঠী হারানোর বেদনায় সিক্ত হয়ে সহানুভূতি জানাচ্ছে। কিন্তু এটা ভিন্ন দিকে টার্ন নিতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’

শেয়ার করুন