তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) হেফাজতে থাকা আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে নির্যাতন করা হয়েছে কি না, বিষয়টি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে শহিদুল আলমের অবস্থা সম্পর্কিত ওই প্রতিবেদন ১৩ আগস্টের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে (বিচারিক আদালত) দাখিল করতে বলা হয়েছে।
শহিদুল আলমকে ৫ আগস্ট আটকের পর নির্যাতন ও রিমান্ডে পাঠানোর বৈধতা নিয়ে এবং চিকিৎসার জন্য তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশনা চেয়ে তাঁর স্ত্রী রেহনুমা আহমেদের করা রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেওয়া হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ৭ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে শহিদুল আলমের স্বাস্থ্যগত অবস্থার প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার আদালতে দাখিল করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এ আদেশ স্থগিত চেয়ে বুধবার রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেছিল, যা বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। এদিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের ওই আবেদনের শুনানি ১৩ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি রেখেছেন। এর আগে সকালে শহিদুল আলমের স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিষয়ে বিএসএমএমইউর মেডিকেল বোর্ডের পাঠানো প্রতিবেদন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চে জমা পড়ে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন। এ সময় আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ইদ্রিসুর রহমান, শাহদীন মালিক ও তানিম হোসেইন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। শুনানিকালে প্রতিবেদন দেখে আদালত বলেন, রিপোর্ট তো ভালো।
শুনানিতে আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, চার সদস্যের বোর্ডের প্রতিবেদনে এসেছে শহিদুল আলম শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। চার সদস্যের ওই বোর্ডে কোনো মানসিক বিশেষজ্ঞ দেখা যাচ্ছে না। মানসিক বিশেষজ্ঞ ছাড়া মানসিক বিষয়ে মতামত দেওয়া সম্ভব নয়। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শহিদুল আলমের বক্তব্য শুনেছেন। সেখানে শহিদুল আলম বলেছেন, তাঁর মুখে ঘুষি মারা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। অথচ ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল আলমের কোনো বক্তব্য আদেশে লিপিবদ্ধ করেননি।
আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার ২০১৩ সালে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন করে। আইনে নির্যাতন বলতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে। অথচ বিএসএমএমইউর দেওয়া প্রতিবেদনে তার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এই প্রতিবেদনে শহিদুল আলমের অসুস্থতা বিষয়ে মতামত এসেছে, তবে নির্যাতন হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো পর্যবেক্ষণ আসেনি। তাই এটি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে আপিল বিভাগের গাইডলাইন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি। যে অভিযোগে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, তার আলামত জব্দ করেছে পুলিশ। এরপর শহিদুল আলমের মানসিক ও নির্যাতন বিষয় পরীক্ষা করার আরজি জানান সারা হোসেন।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, শহিদুল আলমকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশের ভিত্তিতে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন করা হলে তা খারিজ হয়। নিয়ম অনুযায়ী এ আদেশের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে যেতে পারেন। তা না করে সরাসরি হাইকোর্টে আসতে পারেন না। তাই রিট আবেদন চলতে পারে না।
মামলার এজাহার তুলে ধরে মাহবুবে আলম বলেন, আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেননি, আল-জাজিরা টিভিতেও সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। মিথ্যা কথা বলে অপপ্রচার চালাতে তাঁকে কে উৎসাহিত করেছে, তা বের করার জন্যই তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন দেখিয়ে মাহবুবে আলম বলেন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। এ সময় একটি মোবাইল তুলে ধরে মাহবুবে আলম বলেন, দেখুন, ডিবি অফিসে শহিদুল আলম কীভাবে হাঁটছেন। তিনি যেভাবে হাঁটছেন তাতে কোনোভাবে বলা যাবে না যে তিনি অসুস্থ। পরে আদালত আদেশ দেন।
শহিদুলের ওপর নির্যাতন হয়েছে কি না, পরীক্ষার নির্দেশ
শেয়ার করুন