জাগ্রত বিবেক কথা বলে

একজন ডাক্তারের কাছে গেলাম রুগী নিয়ে। অনেক কষ্ট করে মোবাইলে টিকিট করেছিলাম। ফোন যায় না, যায়না, ৩০টা ফোন করার পর মঞ্জুর হলো ৩২ নং টিকেট। চেম্বারে গিয়ে দেখলাম ১০ নং চলছে। অনেক রুগীরা রিপোর্ট নিয়ে অপেক্ষা করছে, অনেক প্রেসক্রিপশনে কোন ঔষধ নেই। রিপোর্ট দেখার পর ডাক্তার সাহেব ওষুধ দিবেন। মাঝে মাঝে সিরিয়াল ভাংগার অভিযোগ উঠছে। অসহায় রুগীরা প্রহর গুনছে কখন দেখা পাবে ডাক্তারের। ডাক্তার সাহেবের বিশেষ নিয়ম। টিকেট নাম্বার দেখাতে হয় এটেন্ডেস কে। খুবই ব্যস্ত এটেন্ডেস। ফি দিলে ফাইল প্রস্তত করে দেন উনি। কোন বাকীর সিস্টেম নাই। একরুমে রুগিদের এভাবে ফাইল দিয়ে অন্য রুমে পাঠান। প্রথম রুমে টিভি আছে। দ্বিতিয় রুমে নাই। দ্বিতিয় রুম ও প্রথম রুমে বসার সুব্যবস্থা। এরই মাঝে রিপ্রেজেন্টিভরা ভীড় করেছে। ওদের নাকি নির্ধারিত সময় আছে। ডাক্তার সাহের জন্য মাঝে একবার চা নাস্তা গেলো। রুগিরা ভেতরে যায় এবং ৫/ ৭ মিনিট পরে বেরিয়ে আসে। কারো প্রেসক্রিপসনে লিখা ১৫ দিন,কারো ১ মাস, কারো ৩ মাস পরে দেখা করবেন। এদিকে ডাক্তার সাহেব ১২ টার ভেতর চেম্বার শেষ করতে হবে, কারন কয়েকটা ক্লিনিক ভিজিট করতে হবে। তারপর অপারেশন থাকে দু’ একটা। কখন উনি ঘুমাতে যাবেন নিজেও জানেন না। নিজের গাড়িতো আছেই,ক্লিনিকের গাড়ি আসে উনাকে নিয়ে যেতে। সকালে হাসপাতাল যেতে হবে। সেখানে অনেক কষ্ট উনার। গরীব লোকেরা আসে চিকৎসা নিতে। ওদের বেশীর ভাগই অশিক্ষিত। এরপরও চালিয়ে যেতে হয়। মাঝে মাঝে হসপিটালে বসে চেম্বারের ডিউটির কথা মনে পড়ে যায়। আহ! কত মজা, ৬/৭ মিনিটে ৮০০ টাকা! সব কষ্ট ভুলে যান যখন টাকার কথা মনে হয়। ভালই চলছে উনার। স্বাধীন বাংলার আকর্ষনীয় পেশা। পড়াশুনা করার বেশ সময় নেই। যা শিখে এসেছেন, তাতেই চলে। রুগি দেখাতে গিয়ে এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় উনার জীবন চিত্র এমনই মনে হলো।
,,,,,আমার মনে প্রশ্ন জাগে টিকিট নেয়ার এমন বিচিত্র সিস্টেম থেকে আমাদের রেহাই পাওয়ার কোন সিস্টেম কি প্রবর্তন করা যায় না? আরো কয়েকজন ডাক্তার টিকেট দেন সকালে। যে আগে এসে চেয়ারে বসতে পারবে, সেই টিকেট পাবে। সেজন্য অনেকেই হোটেল ভাড়া করে চেম্বারের আশে পাশে আশ্রয় নেন। কোন একজন ডাক্তারের পাশের হোটেল টি নিজের। ভালোই বোর্ডার হয়। আমার মনে প্রশ্ন জাগে চেম্বার চালাতে গিয়ে এত খরছ কি বন্ধ করা যায়না? খরছ কমিয়ে রুগির ফি কমানো যেতে পারে। আমার জানতে ইচ্ছা করে প্রাইভেট রুগি কয়জন দেখতে পারেন একজন ডাক্তার। জানতে ইচ্ছা হয় একজন রুগি কে কত সময় দেয়া ডাক্তার সাহেবের উচিৎ। আমার আশ্বর্য লাগে এত ব্যস্ততায় রুগির সঠিক সেবা কতখানি নিশ্চিত হয়। এসমস্ত ডাক্তার মনিটরিং করার কি কোন ব্যবস্থা নেই দেশে।

 

লেখকঃ মোহাম্মদ বায়েছ, সিলেট, বাংলাদেশ

শেয়ার করুন