কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপরুপ লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। এ উপজেলায় টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, ছায়া নিবিড় পরিবেশে অবস্থিত নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্নাধারা হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন ধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ পর্যটকদের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেয়। পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে এসব আকর্ষনীয় পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। ২৪ আগষ্ট শুক্রবার মাধবপুর লেক আর লাউয়াছড়া উদ্যানে দেখা মিলে ভ্রমন পিপাসুদের। এদের মধ্যে স্বপরিবারে ঘুরতে আসা সরকারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ঈদের ছুটিতে যেন মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় প্রকৃতির সৌন্দর্য্যরে অপার লীলা নিকেতন সবুজ বনের লাউয়াছড়া উদ্যান আর পদ্মকন্যার মাধবপুর লেকটি। উদ্যানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সামাল দিতে সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশাশি পর্যটন পুলিশ সদস্যদের হিমশিম খেতে দেখা যায় । লাউয়াছড়া উদ্যানের ট্যুরিষ্ট গাইডরা জানান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান-এর জীব বৈচিত্র্য দেখতে ঈদের দিনের চেয়ে বৃগষ্পতিবার ও শুক্রবার লোকজনের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। লাউয়াছড়ায় বেড়াতে আসা হবিগঞ্জের সরকারী চাকুরীজীবি আহমদ আলী, গৃহিনী মনোয়ারা বেগম, কলেজ ছাত্রী হেপী বেগম, সিলেটের এনজিও কর্মী জগদীশ ঘোষ, বি-বাড়িয়ার ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া, প্রভাষক নজরুল ইসলাম জানান, লাউয়াছড়ার বন একটি সমৃদ্ধ বন। প্রকৃতিক অপরুপ সৌন্দর্য্য আর পশু পাখির মিলনস্থল যে কেউ দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে। কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানে নয়নাভিরাম মনোরম দৃশ্য মাধবপুর লেকে বিপুল পরিমাণ পর্যটকদের ঢল নেমেছিল। পাহাড়ি টিলার উপর সবুজ চা বাগানের সমারোহ, জাতীয় ফুল দুর্লভ বেগুনী শাপলার আধিপত্য, ঝলমল স্বচ্ছ পানি, ছায়া নিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি আনন্দের বাড়তি মাত্রা যুক্ত করেছে। মাধবপুর চা বাগানে অবস্থিত মাধবপুর লেইকে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়। লেকের চারপাশে বিশাল টিলায় সারিবদ্ধ ছোট-বড় গাছ আর সবুজ চা গালিচার টিলার মাঝখানে জলরাশি। টলটলে রূপালী জলের সঙ্গে দিবা- নিশির মিতালি করছে নীল পদ্মফুল। জলের আলো ছায়ার নীল পদ্মের লুকোচুরি খেলা মনমুগ্ধ করে আগত পর্যটকদের। প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজে নিজের রূপ দিয়েই।
আকর্ষণীয় হয়ে উঠায় জলের পদ্ম কন্যার মায়ায় আকড়ে ধরে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের। তার এই মনোরম সৌন্দর্য্য দর্শনে ঈদের ছুটিতে প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটে আসেন মাধবপুর লেকে। নয়নভিরাম এ জলারণ্য দল বেঁধে দেখতে গত বছরের তুলনায় এ বছর দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আগমন বেশি ঘটে বলে জানান লেকের প্রধান ফটকে দায়িত্বে থাকা বাবুল সরকার। মাধবপুর লেকে বেড়াতে আসা সুনামগঞ্জের কলেজ ছাত্রী হাসিনা বেগম, কুমিল্লার কলেজ শিক্ষক মাঈন উদ্দিন, নরসিংদীর ব্যবসায়ী রফিকুর রহমান, কুলাউড়ার চাকুরীজীবি রাসেল হাসান বক্ত, গৃহিনী আফিয়া খাতুন জানান, মাধবপুর লেক দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়।
এখানে বার বার আসতে মন চাইবে। সবার ছুটোছুটিতে পর্যটন স্পটগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সব মিলিয়ে
পর্যটনের জেলা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে আনন্দ ও উৎসবে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদ উল আজহা। অনুসন্ধানে জানা যায়, কমলগঞ্জের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র সমুহে দর্শনার্থীর চেয়ে লাউয়াছড়া মিশ্র চিরহরিৎ এই বনে অত্যধিক পর্যটকের উপস্থিতি ঘটে। অন্যান্য সময়ের তোলনায় এই ঈদের অধিকতর পর্যটকের উপস্থিতি ঘটেছে বলে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ দাবি করেছে। ঈদের দিন বুধবার থেকে শুরু শুক্রবার পর্যন্ত ব্যাপক পরিমাণে পর্যটশরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বন ও প্রাণিকুল দেখতে ভিড় করেন। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এখানকার বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক সহ গাছে গাছে লাফালাফিরত বানর, হনুমানের দৃশ্যাবলী উপভোগ করতে পর্যটকরা বেশি আগ্রহ বোধ করেন। মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোহাইমীন মিল্টনসহ স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, সংরক্ষিত একটি বনে এমনিতেই নানা সমস্যা, তার উপর অধিক পরিমাণে পর্যটকের অবাধ চলাচল, হাল্লা চিৎকার ও হুড়োহুড়ি বন্য প্রাণীর খাবার ও আবাসস্থলে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হবে। এটি রোধ করা প্রয়োজন। বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় সহকারী বনকর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, এ ঈদের অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটকের সমাগম অধিক ঘটেছে। তবে ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সব সময়েই বেশি হয়ে থাকে। অত্যধিক পর্যটকের কারনে কিছুটা বিঘœ হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, লাউয়াছড়ায় তিনটি ট্রেল রয়েছে। দর্শনার্থীরা এই ট্রেল ঘুরেই চলে যান। এখানে গাইডরাও রয়েছে, এদের বলে দেওয়া হয়েছে যাতে পর্যটকরা এর বাইরে ও কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যাতে বন ও পরিবেশের ক্ষতি না হয় বিষয়ে খেয়াল রাখতে। পর্যটকদের জন্য নিয়ন্ত্রিত ট্যুরিজমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।