হোসাইন আহমদ॥ চা শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার দৈনিক মজুরি ৮৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০২টাকায় নিয়ে এসেছে। বেতনের পাশাপাশি তাদের বোনাজও বাড়ানো হয়েছে। এ সুখবরে মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। কিন্তু মামলার জালে মৌলভীবাজার প্রেম নগর চা বাগানের ২ চা শ্রমিক পরিবার দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খেয়ে না খেয়ে মা-বাবা ও ছেলে সন্তানদের নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছেন। এনিয়ে তারা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার ধরনা দিয়েও কোনো সুরাহ পাচ্ছেন না।
জানা যায়, ২০ আগস্ট ঢাকার মহাখালিতে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এই দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়।
একটি সূত্র জানায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার প্রেমনগর চা বাগানে ২০০২ সালে গাছ চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাগানের ২জন শ্রমিককে চাকুরি থেকে বরখাস্থ করে কর্তৃপক্ষ। পরে বরখাস্থকৃত ওই ২ শ্রমিক চট্রগ্রামের ২য় শ্রম আদালত চাকুরি পূর্ণবহালের দাবিতে মামলা দায়ের করলে আদালত দীর্ঘ ৯ বছর পর তাদের পক্ষে রায় দেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ৮ জুন রাতে বাগানের ৬নং সেকশনে কয়েকটি গাছ চুরি হয়। পরে ১৭ জুন কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকে। ওই দিন পুলিশ চা শ্রমিক মোহন বৈদ্য, কন্টুমোহন বৈদ্য ও অবিনাশ মুদিকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে অবিনাশ মুদি, ফজল মিয়া ও সুমা বেগমকে কর্তৃপক্ষ কাজে যোগদানের অনুমতি দিলেও চা শ্রমিক মোহন বৈদ্য ও কন্টুমোহন বৈদ্যকে অনুমতি দেয়নি। পরে ২০০৩ সালের ২৪ মার্চ স্থায়ীভাবে অফিস আদেশের মাধ্যমে তাদের দু’জনকে বরখাস্ত করা হলে ওই ২ চা শ্রমিক ২০০৫ সালের ২৫ জুন চাকুরি পূর্ণবহালের দাবিতে দ্বিতীয় শ্রম আদালত চট্টগ্রামে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ১৫/২০০৫)। দীর্ঘ ৯ বছর পর ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর ওই চা শ্রমিকদের বরখাস্তের আদেশ রহিত করে ২য় শ্রম আদালত রায় দেন এবং রায়ে উল্লেখ করা ছিল ৪৫ দিনের মধ্যে তাদের বকেয়া বেতন ভাতাদিসহ চাকুরিতে পুনর্বহাল করার। কিন্তু অদ্যবধি এ রায় কার্যকর হয়নি।
রায় কার্যকর না হওয়ায় ২য় শ্রম আদালত চট্টগ্রামে ২০১৫ সালের ৯ মার্চ মোহন বৈদ্য, কন্টুমোহন বৈদ্য পৃথক পৃথক দু’টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ২৩ ও ২৪/১৫)। মামলায় বাগানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক দেওয়ান বাহা উদ্দিন আহমেদসহ ৫জনকে আসামী করা হয় এবং শ্রম আদালত ২১/০৪/২০১৫ সালে ওই মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। পরে ১৪/০৬/২০১৫ তারিখ ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক দেওয়ান বাহা উদ্দিন আহমেদ শ্রম আদালত থেকে জামিন নেন এবং ২০১৪ সালের রায়ের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে উচ্চ আদালতে রিট করলে (রিট নং ৬৮৪/১৫, ৬৮৫/১৫) ২য় শ্রম আদালত অন্যান্য আসামীদের ওয়ারেন্ট ইস্যু সাড়ে ৪মাসের জন্য স্থগিত রাখে। পূনরায় আদালত ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আগামী ১৬/১০/২০১৮ তারিখের মধ্যে আসামীদের তামাদি প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য মৌলভীবাজার মডেল থানাকে নির্দেশ দিয়েছে।
এবিষয়ে প্রেম নগর চা বাগানের ব্যবস্থাপক দেওয়ান বাহা উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ রায়টি বর্তমানে উচ্চ আদালতে আপিলে আছে।