স্মৃতিতে দাউদপুর, চৌধুরীবাজার

গ্রামটির নাম দাউদপুর। অনেক ছোট একটা বাজার ছিল। মনে করার মত তেমন কিছু ছিল না। একটি লাইব্রেরি, যাত্রী ছাউনী ও যাত্রী ছাউনীতে এক বাইসাইকেল মেকানিক, পুরাতন জরাজীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ আর ডাকঘর চোখে পরত । কিছু রিক্সা আর দাড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে একটি বাস আসত। একটি পুরাতন সাদা গাড়ী ছিল। গাড়ীটির কথা বললাম একদিন আমার মা হঠাৎ মারাত্মক অসুস্থ হলে হসপিটালে নেবার প্রয়োজন হলে এই গাড়ীটিই পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসের ভূমিকা রাখে। মসজিদ ছিল গ্রামের ভিতরে কিন্তু বলতে গেলে গ্রামের দুয়ার। ধীরে ধীরে নিজেও বড় হতে লাগলাম আশেপাশের অনেক পরিবর্তন ও দৃশ্যমান হতে লাগল। একটি নতুন ইস্কুল হল পাশের গ্রামে। বলতে গেলে এখনও মনির আহমদ একাডেমীই সবচেয়ে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশেপাশের সব স্কুলের মাঝে। বাজারে দু একটা করে দোকান বাড়তে লাগলো। গ্রামের এক প্রবাসী শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি জনাব জয়াইদ আলী চাচা একটি মার্কেট করলেন। সাথে একটি কমিউনিটি সেন্টার, যেটি ছিল গ্রামের মানুষের প্রথম কমিউনিটি সেন্টার যুগের প্রবেশের সূচনা। গ্রামের ভিতরে একটি মাদ্রাসা ছিল এখনও আছে। ছিল বললাম তখন সেটি জরাজীর্ন ছিল। দাউদপুর প্রাইমারী স্কুলটি পরিচিত ছিল ভাঙ্গা স্কুল নামে। কমিউনিটি হসপিটাল গ্রামের পশ্চিম দিকে। স্কুটার চালিয়ে মহিলা সাস্থ্য কর্মীর চলাচল সেসময়ের জন্য অনেকটা সাহসী পরিবর্তন বলাচলে। বহুবছর ধরে জাতীয় পার্টির এক সংসদ সদস্য ছিলেন। প্রতিবারই উনি পাশ কিন্তু আমাদের গ্রাম সহ আশেপাশের সব গ্রাম ছিল অবহেলিত। ২০০১ সালের পরে পরিবর্তনটা দৃশ্যমান হতে লাগল। ভাঙ্গা স্কুলটি নতুন দালান পেল। শিক্ষার মানও বাড়ল। মাদ্রাসার রেজাল্ট ভাল হতে শুরু করল। সহজ লভ্য হল মোবাইল ফোন আর বাজারটাও বড় হতে লাগল। ইউনিয়ন পরিষদ একটি আধুনিক ইউনিয়ন পরিষদে পরিনত হল, গ্রামের কাঁচা রাস্তা পাকা হতে শুরু হল। উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা উপজেলা সাস্থ্য পরিষদ সবকিছু এখন আছে। গ্রামের ভিতর “ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ স্কুল “ ১৯৯৬-২০০০ সালের তৎকালীন স্পীকার মরহুম জনার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সাহেব উদ্ভোধন করেন। অনেকগুলো মসজিদ আর হাফিজীয়া মাদ্রাসা এবং ৩৬০ আউলিয়ার একজন হজরত শাহ দাউদ কুরেশীর মাজার ঐতিহাসিক ভাবে করেছে সমৃদ্ধ। গ্যাস সংযোগটা যদি আসত আর দু একটা শিল্প প্রতিষ্টান হলে পুরো ইউনিয়নটাই অনেক সমৃদ্ধ হত। হবে হয়ত কোন একদিন। ব্যাক্তিগত ভাবে এনজিও সুদ ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। গ্রামের ভেতর দুএকটা সুদখোর এনজিও চোখে পড়ল শেষবার যখন দেশে গেলাম। আল্লাহ যেন আমাদের সুদের গোনাহ থেকে বিরত রাখেন। বেড়ে উঠুক গ্রামটি অনেক সমৃদ্ধ হোক।

 

লেখকঃ রিসালাত কোরেশী -শুভ (লন্ডন, ইউনাইটেড কিংডম), দাউদপুর (পূর্ব বাড়ি), রেঙ্গা-দাউদপুর, দক্ষিন সুরমা, সিলেট

শেয়ার করুন