৫ সেপ্টেম্বর ভাষা সৈনিক-আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ, মরহুম অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের দশম মৃত্যু বার্ষিকী স্মরনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

মুজিবুর রহমান মুজিব॥

পাঁচই সেপ্টেম্বর, বায়ান্নের ভাষা সৈনিক-আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ, স্বাধীনতার মহান ঘোষক আদর্শ রাষ্ট্র নায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিশ^স্থ ও ঘনিষ্ট সহচর, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বি.এন.পি-র অন্যতম প্রতিষ্টাতা- স্থায়ী কমিটির চীরস্থায়ী সদস্য, মরহুম অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের দশম মৃত্যোবার্ষিকী। দুই হাজার নয় সালের পাঁচই সেপ্টেম্বর সড়ক পথে গ্রামের বাড়ি বাহারমর্দান থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় করুনভাবে মৃত্যোবরন করেন তিনি। মৃত্যোকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বৎসর।

বাংলাদেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বিশ^ বরন্যে অর্থনীতিবিদ সাবেক অর্থ মন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের আকস্মিক মৃত্যো সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-মৌলভীবাজারে তাঁর স্বজন-শুভাকাংখীগন কান্নায় ভেঙ্গেঁ পড়েন। পরদিন ছয় সেপ্টেম্বর ঢাকা-সিলেট-মৌলভীবাজারে শেষ জানাজা শেষে তাঁকে তাঁর গ্রামের বাড়ী বাহার মর্দানের পারিবারিক গোরস্থানে তার প্রিয় সহ ধর্মিনী বেগম দুররে সামাদ রহমানের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। এই পারিবারিক গোরস্থানে চীরশয়ানে আছেন তাঁর মরহুম শিক্ষাবিদ পিতা আব্দুল বাছির এবং শিক্ষানুরাগি মাতা বেগম তালেবুন্নেছা।

বৃটিশ ভারতের শেষ ভাগে ভারতীয় রাজ্য হারা মুসলিম সমাজের ঘোর দুর্দিনে মৌলভীবাজার সদর উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী বাহার মর্দান গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৩২ সালের ৬ অক্টোবর এম. সাইফুর রহমানের জন্ম। বর্নাঢ্য কর্ম ও সফল মানব জীবন শেষে তিনি নিজ জন্ম মাটিতেই চীর নিদ্রায় শায়িত হলেন। এই কয় বছরের প্রাকৃতিক নিয়মে তার কবরের মাটি পুরাতন হয়ে গজিয়েছে ঘাস, লতাপাতা, ফুটেছে নাম নাজানা ঘাস ফুল, তবে তিনি স্মৃতির গভীরে হারিয়ে যাননি, আছেন শ্রদ্ধায় ভালোবাসায়-মনের মনিকোঠায়। পাচ সেপ্টেম্বর মরহুমের মৃত্যোবার্ষিকী উপলক্ষে তার পরিবারের পক্ষে মরহুমের প্রথম পুত্র সাবেক সাংসদ ও জেলা বি.এন.পি র সভাপতি এম. নাসের রহমান মিলাদ মাহফিল, দোয়া-দূরুদ, শিরনীর আয়োজন করেন। বৃহত্তর সিলেটের বি.এন.পি পরিবার দলের প্রতিষ্টাকালীন নেতা এবং সিলেটের অভিভাবক হিসাবে তাকে সশ্রদ্দ চিত্তে স্মরন করেন, কবর গাহে পুস্পিত শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করতঃ তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। মরহুমের দশম মৃত্যোবার্ষিকীতে তাঁর রুহের মাগফিরাত সহ গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী।

আদর্শ শিক্ষক আব্দুল বাছির এবং শিক্ষানুরাগি মাতা বেগম তালেবুন্নেছার সুপুত্র এম.সাইফুর রহমান বাল্য কৈশোর কাল থেকেই ছিলেন মেধাবী ছাত্র। কৈশোর কালে প্রিয় পিতার আকস্মিক মৃত্যো হলে চাচা মোহাম্মদ সফি ভ্রাতস্পুত্রের লেখাপড়ার দায়িত্বভার গ্রহন করেন। মায়ের ইচ্ছায়-চাচার সহযোগিতায় গ্রাম্য পাঠশালা, জগৎসী জি.কে হাই স্কুল, মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেটের এম.সি কলেজে শিক্ষা শেষে ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন এম. সাইফুর রহমান। গ্রেপ্তার হন। কারা যাতনা ভোগ করে আইনী প্রক্রিয়ায় বের হন- মুচলেকা দেননি। তিনি একুশে পদকপ্রাপ্ত একজন ভাষা সৈনিক।

১৯৫৯ সালে ইংলেন্ডে চাটার্ড একাউন্টেন্সী ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষাজীবনের সফল সমাপ্তি ঘটান কৃতি ছাত্র এম. সাইফুর রহমান। বৃটেনে থাকা অবস্থায় বৃটিশ অক্সিজেন কোম্পানীতে সাড়ে তিন হাজার রুপী বেতন, করাচির অভিজাত এলাকা ক্লিফটনে বাংলো বাড়ী, দামী গাড়ী সহ উচ্চপদে নিয়োগ পান তিনি। তখন পাকিস্তানী সি.এস.পি অফিসারদের প্রারম্ভিক বেতন ছিল মাত্র তিন শত টাকার মত। পাকিস্তানের রাজধানী করাচীতে বসবাসকারি একটি বৃটিশ কোম্পানীর আকর্ষনীয় বেতন ও উচ্চ পদে আসীন হয়ে ও আত্বর্য্যাদাবান এম. সাইফুর রহমান বেশিদিন চাকরি করেন নি। পূর্ব-পশ্চিমের অর্থনৈতিক বৈষম্য, বাঙ্গাঁলিদের প্রতি বিমাতাসূলভ আচরন রাজনীতি সচেতন-হৃদয়বান এম. সাইফুর রহমানকে পিড়া দেয়। তিনি চাকরি ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। তবে করাচীতে বসবাস কালেই তিনি চট্টগ্রামের এক অভিজাত খান্দানী পরিবারের কৃতি কন্যা বেগম দুররে সামাদ এর সঙ্গেঁ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

বেগম দুররে সামাদ এর পিতা চৌধুরী বজলুস সামাদ তখন ন্যেশনেল ব্যাংক অব পাকিস্তান পেশোয়ারে কর্মরত। করাচীতে চাকরি কালীন সময় এম. সাইফুর রহমান এর পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে উঠেছিল খ্যাতিমান চাটার্ড একাউন্টেন্ট মিঃ রেজাউর রহমান এবং মিঃ তাসকিন হক এর সঙ্গেঁ। লোভনীয় ও আকর্ষনীয় চাকরি ছেড়ে এম সাইফুর রহমান ঢাকায় এসে এই তিনজনে মিলে রহমান রহমান-হক-আর-আর এইচ একটি সিএ কোম্পানী গঠন করেন। মেধাবী ছাত্র কর্মচঞ্চল এম. সাইফুর রহমানের কঠোর পরিশ্রম, সততা নিয়মানুবর্তিতা, প্রজ্ঞা ও পান্ডিত্যে মেধা ও মননে পেশাগত সুনাম ও সাফল্য অর্জন করতে থাকেন। কর্ম জীবনে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি-তিনি শুধু এগিয়েই গেছেন। পেশাদার সি.এ হিসাবে তিনি পাকিস্তান পে-কমিশন ও স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলাদেশ পে-কমিশনে প্রশংসা প্রাপ্ত হয়েছেন-প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পচাত্তোর উত্তর রাজনৈতিক সংকট কালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহ্বানে সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন অর্থনীতিবিদ এম. সাইফুর রহমান। প্রেসিডেন্ট জিয়ার টেলেন্টেড ক্যোবিনেটে অর্থমন্ত্রী হিসাবে মাননীয় মন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব শুরু হলেও তিনি ইতিপূর্ব প্রেসিডেন্ট এ.এস.এম সায়েমের বানিজ্য উপদেষ্টা হিসাবে তার রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পৃক্ততায় শুভ সূচনা করেছিলেন। এম. সাইফুর রহমান প্রেসিডেন্ট জিয়া, জাস্টিস সাত্তার, বেগম খালেদা জিয়া-তথা বি.এন.পি র সকল সরকারামলেই মন্ত্রীসভায় পূর্ন মন্ত্রী ছিলেন। একজন নিখাদ দেশ প্রেমিক ও সাচ্চা জাতীয়তাবাদী হিসাবে তিনি জাগদল এর অন্যতম প্রতিষ্টাতা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বি.এন.পি-র স্থায়ী কমিটির চীরস্থায়ী সদস্য ছিলেন। মন্ত্রী-নেতাদের পদ পদবীর পরিবর্তন হলেও তার পদ ও মন্ত্রীত্ব ছিল স্থায়ী। উপমহাদেশীয় রাজনীতি সংসদীয় সংস্কৃতির ইতিহাসে এম. সাইফুর রহমান একজন ব্যাতিক্রমী ব্যাক্তি ও ব্যাক্তিত্ব। মোট বারো বার বাজেট পেশ করে বাজেটি ইতিহাসে তিনি বাজেট যাদুগর, বিনিয়োগের বরপুত্র, উন্নয়নও অগ্রগতির অগ্রদূত হিসাবে খ্যাতি ও স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। একজন পেশাদার অর্থনীতিবিদ হিসাবে তিনি শিক্ষা-অর্থনীতি-রাজনীতির মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছিলেন। তার ফুড ফর এডুকেশন- কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্ম্মসূচী – বৃত্তি- উপবৃত্তি চালু শিক্ষাক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করতঃ আশাতীত ইতিবাচক অবদান রেখেছিল। একজন গনমুখী অর্থনীতিবিদ হিসাবে তিনি Value Added Tax – Vat- – সিস্টেম চালু করে দেশীয় অর্থনীতির প্রান সঞ্চার করে গেছেন। বিশ^ ব্যাংক এর সভাপতি এবং IMF এর বোর্ড অব গভর্নর্স এর চেয়ারপার্সন হয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী এম.সাইফুর রহমান বহির্বিশে^ বাংলাদেশের মর্য্যাদা, ইমেজ ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করেছিলেন। দেশীয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তার সংস্কার কর্মসূচী দেশে বিদেশে সাড়া জাগিয়েছিল। মন্ত্রনালয়ের কেরানী থেকে সচিব পর্য্যন্ত সবাই তার নযরদারিতে থাকতেন। তাঁর সময়ে পান থেকে চুন খসার উপায় ছিলনা। তাঁর বলিষ্ট ও গতিশীল নেতৃত্বে মুদ্রাস্ফিতি ছিলনা, মুদ্রা বাজার সচল, ব্যাংকিং সেক্টারে বিশৃঙ্খলা ছিলনা, ঋনের নামে লুন্ঠন ছিল না, শেয়ার বাজার চাঙ্গাঁ ছিল, দেশী বিদেশী বিনিয়োগ ছিল। মুদ্রা পাচার হুন্ডিবাজ, হলমার্কীয় দস্যোদের দৌরাত্ব, মাল্টিলেভেল এর নামে মাল্টি লুটিং লুটতরাজ, ডেস্টিনি ২০০০, ইউনিপেইড টু- দের দুই নম্বরী ধান্দা এবং বিসমিল্লা-গ্রুপের বিনাবিসমিল্লাতে জনগনের অর্থ গলাঃধকরন, লুন্ঠন হজম, ব্যাংকের টাকা পাচার আত্বসাতের অভিযোগ ছিলনা। বাংলাদেশের বর্ত্তমান অর্থনীতির- বেহাল, বিপর্য্যস্থ ও বৈধব্য দশা দেখে অর্থনীতিবিদ গন -অর্থনৈতিক সেক্টারে আফসোস-আহাজারি করেন বলেন এম সাইফুর রহমানের মত মেধাবী অর্থনীতিবিদ এর আজ বড় প্রয়োজন ছিল। তিনি বেঁচে থাকলে দেশের অর্থনীতির এমন বেহাল অবস্থা হত না।

কর্ম্মবীর সাইফুর রহমানকে দুরে থেকে, কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন কাজের মানুষ। কর্ম্মই জীবন এই জীবন ঘনিষ্ট শ্লোগানের অনুসারি ছিলেন তিনি। যখন যে দায়িত্ব তিনি আমাকে দিয়েছিলেন সততা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করে তার প্রশংসা প্রাপ্ত হয়েছি। আমার দাবী নয় তার নিজের ইচ্ছায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ব বানিজ্যিক ব্যাংক এর পরিচালক বানিয়েছিলেন আমাকে, দু বছর পর ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছিলাম। কমিশন খাইনি, নিয়োগ বানিজ্যও করিনি শতকরা একশত ভাগ সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে মাসে কয়েক হাজার টাকা ভাতা নিয়েছি মাত্র। তাঁর শেখানো মতে পাঁচ বছর বলেছি-লিখেছি “চেক হুন্ডি ইউজ ব্যাংকিং চ্যেনেল”। তার সময়ে হুন্ডি বাজদের দৌরাত্ব ছিলনা, এখনত পত্রিকায় হুন্ডিবাজদের নামধাম সহ সংবাদ বের হয়। গুনীজনকে সম্মান দেয়া প্রকারান্তরে নিজেরাই সম্মানিত হওয়া। বাংলা ভাষায় একটি কথা প্রচলিত আছে – যেদেশে যে সমাজ গুনীর সম্মান দেয় না, সে দেশে গুনীর জন্ম হয় না। দলমত বর্নগোত্র কর্ম পেশা নির্বিশেষে সকলেই ঐক্যমত পোষন করেন যে, মরহুম এম. সাইফুর রহমান একজন গুনীজন-কর্মবীর-দেশবরন্যে নেতা ছিলেন। দূঃখ ও দূর্ভাগ্যজনক ভাবে বিভিন্ন স্থাপনা থেকে তার নাম মুছে ফেলা হচ্ছে-বিভিন্ন প্রতিষ্টান স্থাপনা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি পত্রিকান্তরে খবরে প্রকাশ সিলেটে আলমপুর শিশু পার্ক-যা ছিল তার নামে তা বাদ দেয়া হয়েছে- যা খুবই নিন্দনীয়। মদন মোহন কলেজ সাহিত্য পরিষদ-সিলেটের জ্ঞানীগুনীজনের কর্ম্মজীবন নিয়ে-সিলেট মনীষা-জীবনী গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন-সিলেট মনীষায় উদ্যোক্তাগন সিলেটের কৃতি সন্তান এম. সাইফুর রহমানের জীবনী সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাকে সে দায়িত্ব দিলে আমি সে দায়িত্ব পালন করেছি। পরিষদ এর এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহেই প্রশংসনীয়। মৌলভীবাজারে তার সম্মান ও স্মরনে স্মৃতি সংসদ গঠিত হয়েছে। পরিষদ গেল মৃত্যোবার্ষিকীতে একটি আকর্ষনীয় ও তথ্য বহুল স্মারক সংকলন প্রকাশ করেছিলেন-যা পাঠক-সমালোচকদের প্রশংসাপ্রাপ্ত হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির তিন নম্বর এবং বর্ত্তমানে একমাত্র দালান ভবনটি বিগত জোট সরকারামলে তাঁরই বদন্যতায় নির্ম্মিত। তখন সমিতির সভাপতি প্রবীন আইনজীবী আমার শ্রদ্ধেয় সিনিয়র আব্দুল মোহিত চৌধুরী (বর্ত্তমানে মরহুম, আল্লাহ তার বেহেশত নসীব করুন) এবং সম্পাদক ছিলাম এই অভাজন আমি। অবশ্য আমার সমিতি, মহান মালিকের মেহেরবানীতে দু’বার সম্পাদক এবং চার বার সভাপতি বানিয়েছিলেন। সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে স্থান সংকলান না হওয়ায় আমি ও আমরা তার কাছে একটি ভবন চাইলাম- ভূমি ও চাইলাম। তিনি আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার আইন আদালত এবং বারের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাঁর কনিষ্ট ভ্রাতা মরহুম বিচারপতি সিরাজুল ইসলাম এই বারের সদস্য ছিলেন। তাঁর মুখের কথাই ছিল আইনের মত। এক নম্বর খতিয়ানের ভূমি বন্দোবস্তে কত শত আনুষ্টানিকতা আছে। ভূমি বন্দোবস্তের পূর্বেই তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খুব অল্প সময়ে একতালা দালান হল। তিনিই ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করলেন-নির্ম্মান কাজ শেষে শুভ উদ্ধোধন করলেন। দুটি ফাউন্ডেশন ষ্টোন ভবনের সামনে আছে। এই নূতন ভবনে একদিন তিনি এসেছিলেন। আমার চেয়ারে বসিয়েছিলাম। একটি চেয়ার আমার পাশে এখনও খালি আছে। তিনি আমাকে পুত্রসম স্নেহ মমতা করতেন। আমি ছোটবেলায় ছাত্রাবস্থায় হোস্টেলে-হলে ছিালাম। বাবা ছিলেন প্রবাসী। কর্মজীবনে প্রবেশের পূর্বেই বাবা মারা গেলেন। বাবার সঙ্গেঁ জীবনে কোন দিন মেলায়-খেলায়-বাজারে-মাজারে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। সুযোগ পাইনি। তাঁর কর্মি-সংঘটক হিসাবে যখন কোথাও যেতাম বিশেষতঃ বিরোধী দলীয় কালে তখন পিতৃ ¯েœহ অনুভব করতাম। তিনিও ছিলেন একজন এতিম। শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছেন। চাচার ছায়ায় মায়ায় বড় হয়েছেন। তাঁর দু’চোখে আমি কিঞ্চিত দূঃখবোধ দেখেছি- প্রত্যেক সন্তানেরই তার পিতার জন্য একটি আলাদা আবেগ অনুভূতি থাকে। আমার মরহুম পিতার মত দীর্ঘদেহী, উন্নত নাসিকা, ফর্সা চেহারার এম. সাইফুর রহমানের দিকে তাকালে আমার মরহুম পিতার কথাই মনে হত। তিনি কোর্ট মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতেন। অসুস্থতা জনিত কারনে সেজদায় যেতে পারেন না। আমি বেতের মোড়ার ব্যবস্থা করে দিতাম-তিনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। আমি মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি জেনে -দেখে খুবই খুশী হতেন। আমাদের কোর্ট মসজিদ বর্ত্তমানে জেলা জামে মসজিদ হিসাবে নামাকরন করা হয়েছে, হাজার নামাজির নামাজের ব্যবস্থা করে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় নুতনভাবে নির্মিত হয়েছে। তিনি বেঁচে থাকলে নুতন মসজিদ দেখে খুবই খুশি হতেন। তার মৃত্যোর পর থেকে প্রত্যেক মৃত্যো বার্ষিকীতে আমার উদ্যোগে জেলা জামে মসজিদ এবং তার নির্মিত তিন নম্বর বার ভবনে (যেখানে এখনও আমি বসি) মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও শিরনী বিতরনের আয়োজন করি-যেভাবে আমার পিতা-মাতার মৃত্যোবার্ষিকীতে আমি দোয়া দূরুদের আয়োজন করি। বিগত দিনে তার মৃত্যোবার্ষিকী আমার মাথার উপরে তার রুহের মাগফিরাত কামনায় একটি সচিত্র বিলবোর্ড টানিয়েছিলাম। জেলা বার সকল দল মতের একটি পেশাজীবি প্রতিষ্টান। বারের কোন ভিন্ন মতালম্বী বিজ্ঞ সদস্য- নারাজ বা নাখোশ হননি- কিংবা কোন নেতিবাচক মন্তব্য করেন-নি কারন তার প্রতি আমাদের সকলেরই রয়েছে আলাদা সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ-কারন তিনি এম. সাইফুর রহমান।
কর্ম্মবীর এম. সাইফুর রহমানের এই মৃত্যোবার্ষিকীতে ও তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাও রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। মহান মালিক তার বেহেশত নসীব করুন- এই মোনাজাত করছি।

[লেখক: ষাটের দশকের সাংবাদিক। কলামিষ্ট। মরহুমের স্নেহভাজন। একটি রাষ্ট্রায়ত্ব বানিজ্যিক ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও চেয়ারম্যান নির্বাহী কমিটি। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব]

 

শেয়ার করুন